শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশ

0

জুবায়ের সিদ্দিকী, সিটি নিউজঃ এক সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্বপ্ন মনে হলেও বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যুগে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১০ সালে। পাবনার ইশ্বরদীতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা ২০২৪ সালে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মতপার্থক্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষনা দেন তখন অনেকেই একে অবাস্তব বলে সমালোচনা করেছিলেন।

দিনে দিনে সেই পদ্মা সেতু পুর্নাঙ্গ রূপ পেতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানির মতো বাংলাদেশের মানুষও যে মেট্রো রেলে চড়বে সেই স্বপ্নও পুরণ হতে চলেছে। হেমায়েতপুর থেকে রাজধানীর আফতাবনগর, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলষ্টেশন পর্যন্ত পাতাল রেলের কাজ চলছে পুরোদমে। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় যখন গভীর সমুদ্র বন্দরটি আলোর মুখ দেখেনি, তখন এর বিকল্প হিসেবে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি এবং পটুয়াখালীর পায়রাতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। বাস ও বিমানের বাইরে রেলপথেও ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়ার কাজটি শুরু হয় বর্তমান সরকারের আমলে। নদীর নিচ দিয়ে ট্যানেল বা সুড়ঙ্গপথ চট্টগ্রামের মানুষের দেখার সুযোগ হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে একাধিক ফ্লাইওভার ও অবকাঠামোগত খাতে আমুল পরিবর্তন এসেছে গত এক দশকে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর অর্থনীতিতে গতি আনতে মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে অভুতপুর্ব উন্নতি। তৃতীয় মেয়াদে সরকারর গঠনের পর অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেওয়া হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। কৃষি, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, খাদ্য নিরাপক্তাসহ সার্বিক অর্থনীতিতে এখন সরব বিপ্লব। দেশের মানুষের একটি অংশের অর্ধাহার ও অনাহারকে বিদায় জানিয়ে এখন ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুঁড়ির পরিবর্তে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, দেশকে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে নিতে একের পর এক মহাপরিকল্পনা গ্রহন করছেন শেখ হাসিনা। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। মাঝপথে করোনাভাইরাস সংক্রমনের কারণে অর্থনীতির স্থবিরতার মধ্যেও থেমে থাকেনি পদ্মা সেতুর কাজ। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও চলছে সমান তালে।

সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর কাজও চলছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকবর্গের মতে, ’সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণে জনগুরুত্বপুর্ন ও মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দফায় দফায় ব্যয় বাড়ানো হলেও অর্থনীতিতে ভাল ফল পাওয়া যাবে। বর্তমান সরকারের বড় বড় প্রকল্প নেওয়ার ফলে বিদ্যুতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এখন চাহিদার শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। অর্থনীতির লাইফলাইন বলা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে।

১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও দফায় দফায় সময় বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনায় চীনা কোম্পানী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের কাজ শেষ করে। যার ফলে মানুষ এখন কম সময়ে যাতাযাত ও পন্য পরিবহন করতে পারছে। আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে বসে কষ্ট পোহাতে হত যাত্রীদের। শেষ পর্যন্ত জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মিত হয়েছে এই সরকারের আমলে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান সরকার। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে মাওয়াা চার লেনের সড়কটিও শেষ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। ঢাকা ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক পাল্টে দিয়েছে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর পর আছে ট্রানজিট বা বিআরটি, পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু, ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, ক্রস বর্ডার রোড নেটোয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, সাসেক সংযোগ সড়ক-২, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরন ও ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ি ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ রোড় নির্মাণ পাল্টে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে আধুনিক, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামোর উপর জোর দিচ্ছে সরকার। গত ১০ বছরের হিসাবে দেখা গেছে, জনগনের যাতায়াত ও পন্য পরিবহনে স্বস্তি আনতে ২৭৬ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন আরও ৩৪১টি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। রেলপথের উন্নয়নে ২০১৬-২০৪৫ মেয়াদে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান নেওয়া হয়েছে। রেলপথ সম্প্রসারন, নতুন রেলপথ নির্মান ও সংস্কার এবং বন্ধ রেলপথ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থলভাগ ও সমুদ্র এলাকায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী অনুসন্ধানের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েচে।

২০২১ সালের মধ্যে বাপেক্স ১০৮টি কুপ খননের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২৯টি কুপ খনন সম্পন্ন করেছে। গ্যাসের অপচয় রোধে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় দুই লাখ ৬০ হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হয়েছে। নৌদুর্ঘটনা হ্রাস ও নৌনিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি নাব্যতা বৃদ্ধি, নৌবন্দরের উন্নয়ন ও সমন্বিত ড্রেজিং কার্যক্রম নিয়েছে সরকার। ২৪ হাজার নৌপথের মধ্যে ২০ হাজার ৪০০ কিলোমিটার হারিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩টি নৌপথ খননের কাজ চলছে। প্রায় ৩ হাজার একর জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। অভ্যন্তরীন নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নাব্যতা উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর পন্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নে নতুন কন্টেইনার টার্মিনাল, ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড, বে-টার্মিনাল, বাল্ক টার্মিনাল নির্মানও জলযান সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মান কাজ চলছে। কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার কাজ চলমান আছে। এ সরকারের আমলে এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব সহসায় উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.