কাঙ্খিত উন্নয়ন না হলেও বাঁশখালী পৌরসভার ১শ ২ কোটি টাকার বাজেট পেশ

0

বাঁশখালী প্রতিনিধিঃ সারা দেশে যখন পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হয়েছে তখন বাজেট পেশ করল চট্টগ্রামের আলোচিত পৌরসভা বাঁশখালী।

মঙ্গলবার পৌরসভা কার্যালয়ে ১শত ২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করেন পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী।

এদিকে আগামী ১৮ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ পৌরসভার ! দেশের সব পৌরসভা তাদের বাজেট পেশ জুন/জুলাইতে করলেও ব্যতিক্রম এ পৌরসভাটি। তার উপর প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট করা হলেও বাস্তবে উন্নয়ন বঞ্চিত পৌরবাসী। ফলে অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা ও চলাচল অযোগ্য। বাঁশখালী প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হলেও অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা, নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পয়: শোধানাগার।

মঙ্গলবার পৌর কার্যালয়ে জমকালো অনুষ্টানের মাধ্যমে বাজেট ঘোষনা করেন পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এছাড়া পৌরসভার কাউন্সিলরসহ অন্যান্য কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। বাজেটে প্রদত্ত তথ্য ও যেসব সড়কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা উন্নয়ন কাজের যথাযথ শেষ না করেও এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবছর পৌরসভার নিয়মিত ২৫ জন বিভিন্ন স্থানের কর্মকর্তাদের ৮২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা সরকারিভাবে বেতন প্রদান করা হলেও চুত্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া ৫১ জন কর্মচারীকে বছরে ২৭ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। আর বাজেটে আয় বাবদ ট্যাক্স ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা, রেইট ধরা হয়েছে ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ফিস ধরা হয়েছে ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ইজারা ধরা হয়েছে ৬৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, অন্যান্য বিভিন্ন ফরম, দোকানসহ ব্যাংক সুদ মিলে ২৬ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে ।

উল্লেখ্য বাঁশখালীর প্রাণকেন্দ্র জলদী ইউনিয়নকে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। পৌরসভা বাস্তবায়ন হওয়ার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আশানুরুপ উন্নয়ন বঞ্চিত পৌরবাসী। বাঁশখালী পৌরসভা সি গ্রেড থেকে এ গ্রেডে উন্নীত হলেও পৌর এলাকায় আশানুরূপ উন্নয়ন না হলেও পৌরসভা হওয়ার পর পৌর এলাকার জায়গা জমির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আশাতীত।

জলদী আস্করিয়া সড়ক
জলদী আস্করিয়া সড়ক

অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশার পাশাপাশি পৌরসভার যে কয়েকটি সড়ক রয়েছে তার মধ্যে দারোগা বাজার, ডাকবাংলো জালিয়াখালী বাজার সড়ক, থানার পাশ দিয়ে যাওয়া আস্করিয়া সরল সড়ক, আদালত ভবনের পাশ দিয়ে পুর্ব দিয়ে যাওয়া আদালত ভবন ও লোহাগড়া সংযোগ সড়ক উল্লেখযোগ্য।

দীঘদিন যাবত সংস্কারহীন থাকায় দারোগাবাজার জালিয়াখালী বাজার সড়কটি চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিশাল বিশাল গর্তে চালকেরা কয়েকটি ভাঙ্গা ইট দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করলেও বৃষ্টি পড়লে এ সড়কে চলাচল বন্ধ থাকে।

জলদী দারোগা বাজার আস্করিয়া সড়ক

দারোগা বাজার এলাকার অধিবাসি আবুল কালাম বলেন, প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হয়েও গুরুপ্তপুর্ণ সড়কটির বেহালদশা আমাদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সিএনজি চালক নুর মোহাম্মদ বলেন, অনেক বড় বড় গর্ত এ সড়কে। আমরা গর্তে ইট দিয়ে কোন রকমে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করি। আস্করিয়া সরল সংযোগ সড়কটি প্রায় ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শেষ হলেও কার্পেটিং এর আস্তরনগুলো উঠে যাচ্ছে। এ সড়কে একদিকে কার্পেটিং করছে অন্যদিকে উঠে যাওয়াতে আবারও কার্পেটিং এর উপর নতুন করে আস্তরণ করে দিয়েছে এমন অভিযোগ জনগণের। আধাঁ ইঞ্চির কম ঘনত্ব দিয়ে কার্পেটিং করা হচ্ছে।

অপরদিকে এ সড়কে সিরাজশাহ মাজার থেকে সরল সংযোগ সড়ক পর্যন্ত অধিকাংশ ইট উঠে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে চলাচলরত জনসাধারণ।

আস্করিয়া সড়কের উন্নয়ন কাজ প্রসংঙ্গে জলদীর সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, যে কাজ হচ্ছে তা করার আগে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে, এ ধরনের কাজ না করা ভাল বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন এ সড়কে আগেও কাজের অনিয়ম হওয়াতে দুদক টিম তদন্ত করেছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। আবারো নিম্ম মানের কাজ চলছে।

আদালত ভবন হয়ে লোহাগড়া সংযোগ সড়কটি ও চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ সড়কের ব্যাপারে ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, জামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, এত গুরুপ্তপূর্ণ সড়কটিও সংস্কার নেই। তার উপর রাস্তা উপর বাজার বসিয়ে পৌরসভা টোল আদায় করছে।

এছাড়া দারোগা বাজার হয়ে চিন্তাহরন পুরী মন্দির সড়ক. জলদী বড়ুয়া পাড়ার দক্ষিণের প্রবেশ সড়কসহ অসংখ্যা সড়কগুলো সাধারণ জনগণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে পৌরসভার অধিকাংশ ঠিকাদারী রাজনৈতিকও জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব বিস্তার করে কাজ নেওয়ার সুবাদে যে সব উন্নয়ন কাজ হচ্ছে তা নিম্নমানের। সিড়িউল অনুসারে হয় না অভিযোগ কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি যদি ঠিকাদার হয় তাহলে উন্নয়ন কিভাবে হবে!

পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোছাইনী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টাইমলাইনে বলেন, আমার সময়কার সড়কগুলোতে যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা যদি একটু সংস্কারও করা হতো তাহলে পৌর এলাকার সড়ক ব্যবস্থা বেহাল হতো না। তিনি পৌরসভার অসংখ্যা সড়কের নাম উল্লেখ করেন যেগুলো তার আমলে করা হলেও আর সংস্কার করা হয়নি। অথচ আমার দায়িত্ব যাওয়ার পর আরো দু’জন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছে।

বর্তমান মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী বলেন আমি চেষ্টা করছি সাধ্যমত উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার। তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে মাঠে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আশানুরুপ উন্নয়ন কর্মকান্ড না হলেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে সোচ্চার অনেকে তাই নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে সর্বত্র। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যেশীরা মাঠ চষে বেড়ালেও বিগত নির্বাচনের মত অপর দলগুলোর কার্যক্রম অনেকটা নেই বলে চলে।

জানা যায়, বাঁশখালীর প্রাণকেন্দ্র জলদী ইউনিয়নকে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ১৫ই জানুয়ারী প্রথম পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম হোছাইনী। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৫ মে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে প্রথম পৌর মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম হোছাইনী। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১৮ ই জানুয়ারী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন শেখ ফখরুদ্দিন চৌধুরী। এরপর ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.