রিকশাচালকের আয়ের ৫৬% চলে যায় খাদ্যে : ৫৩ % থাকেন ঋণগ্রস্ত 

পিপিআরসির গবেষণা

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  দেশের একজন রিকশাচালক যে আয় করেন তার অধিকাংশ টাকা চলে যায় খাদ্যের পেছনে।রাজধানী শহরের রিকশাচালকদের প্রায় ৭৮ শতাংশের নেই কোনো নিজস্ব রিকশা। এদের জনপ্রতি গড়ে প্রতিদিন আয় মাত্র ১৩৬ টাকা। এই আয়ে তার পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায় ৫৩ শতাংশ রিকশাচালককে ঋণগ্রস্ত থাকতে হয়। এ ঋণের টাকা তার পরিবারের ভোগ, আগের ঋণ পরিশোধ ও স্বাস্থ্যসেবা বাবদ ব্যয় করেন।ঢাকা শহরের রিকশাচালকদের ওপর ওই জরিপের ফলাফল গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি)।

‘রোড টু ইউএইচসি: হেলথ রিয়ালিটিস অব রিকশা-পুলারস অ্যান্ড আদার আরবান পুওর’ শীর্ষক গবেষণাটির ফল গতকাল পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এক সেমিনারে উপস্থাপন করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, রিকশাচালকদের আয়ের বড় অংশই যাচ্ছে খাদ্য খরচে, যার পরিমাণ মোট আয়ের প্রায় ৫৬ শতাংশ। এছাড়া বাসাভাড়া ও সেবা প্রাপ্তিতে খরচ হয় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৪ শতাংশ এবং শিক্ষায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। একজন রিকশাচালক গড়ে রাজধানীতে প্রায় সাড়ে ১০ বছরের অধিক সময় অবস্থান করেন। চালকদের ৮৭ শতাংশই রাজধানীতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। আবার ৫৫ শতাংশের বেশি চালকের গ্রামের পরিবারের সঙ্গে আর্থিক কোনো লেনদেন করতে হয় না।

পিপিআরসি ভার্চুয়াল আলোচনা

প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিড-১৯-এর সময়ে রিকশাচালকদের পরিবারে আয় সংকট চরমে ওঠে। ৩৮ শতাংশ চালক প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েন। লকডাউনে অর্ধেকের বেশির আয় কমে যায়। তবে অক্টোবরে এসে অধিকাংশ চালকই আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। লকডাউনের আগের অবস্থার ৮২ শতাংশ আয় এখন হচ্ছে। তবে রিকশাচালকদের মধ্যে করোনা শনাক্তের হার খুব কম, মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। তবে কভিডে শেষ তিন মাসে জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যথাসহ কিছু রোগে আক্রান্ত হয়েছে- এমন পরিবার প্রায় ৬১ শতাংশ।এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ রিকশাচালক ধূমপায়ী, প্রায় ৬২ শতাংশ চালক রাস্তার খাবার গ্রহণ করেন, ৬০ শতাংশ চালক ভাত খাওয়ার আগে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেন।

গবেষণায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬০টি ওয়ার্ডের রিকশাচালকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গত অক্টোবরে প্রায় ১ হাজার ২০০ চালকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে উত্তরে ৩৯৮ এবং দক্ষিণে ৪১৯ ও নতুন ওয়ার্ডে ৩৮৩ জন চালক ছিলেন। চালকদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের প্রবণতা রয়েছে। প্রায় ৩৮ দশমিক ২৪ শতাংশ চালক পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ, এসএসসি/দাখিল পাস ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ, এইচএসসি/আলিম শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ, গ্র্যাজুয়েট বা ফাজিল শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে অক্ষরজ্ঞানহীন ২০ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং স্বল্প অক্ষর জানাশোনা ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ চালক।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক পিপিআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান ড.হোসেন জিল্লুর রহমানের পরিচালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন আ.ম.ম. নাসিরউদ্দিন, সিনিয়র ফেলো, পিপিআরসি ও সাবেক স্বাস্থ্য সচিব। মায়া বন্দেনেন্ট, স্বাস্থ্য প্রধান, ইউনিসেফ বাংলাদেশ।জিপসি ফিলিপ গেইন, নির্বাহী পরিচালক, সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট।রব ইয়েটস, নির্বাহী পরিচালক, ইউনিভার্সাল হেলথ সেন্টার, চ্যাথাম হাউস, লন্ডন প্যানেল। আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন ড. মোঃ. শাহাদাত হোসেন মাহমুদ, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। অধ্যাপক আবুল ফয়েজ, সাবেক স্বাস্থ্যসেবা মহাপরিচালক ও সদস্য, সুস্থ বাংলাদেশ।মোঃ. আব্দুল হাকিম মজুমদার, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), ইউপিএইচসিএসডিপি, এলজিডি।অধ্যাপক তাহমিনা বানু, পরিচালক, চট্টগ্রাম গবেষণা ইনস্টিটিউট ফর চাইল্ড সার্জারি।অধ্যাপক সৈয়দ এ. হামিদ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।মুশতাক রাজা চৌধুরী, আহবায়ক, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ।

জি.এস / সিটি নিউজ

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.