রিপোর্টারের ডায়রী
জুবায়ের সিদ্দিকীঃ একজন প্রতিবেদক তার বিটের সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রেই জরুরী উপাদান, অনলাইন পোর্টাল হোক বা কাগজের জন্য হোক তিনিই বাজার করে আনেন। তথ্য দিয়ে ভরে তোলেন তার অনলাইন পোর্টাল বা কাগজকে। অগনিত পাঠককে তথ্য জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তার। কখনও কখনও তার কাজ হয় রুটিনের ছকে বাঁধা। নেহাত প্রশ্নত্তোরের ব্যাপার মাত্র। কখনও আবার গোটা পরিবেশনাই প্রতিবেদকের বুদ্ধিবৃত্তি, অধ্যাবসায়, চর্চা ও উদ্বোধনী সামর্থ্যের প্রয়োগে আগাগোড়া প্রোজ্জল। একজন রিপোর্টার, যিনি তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনের দায়িত্বে থাকেন তার অবশ্যই থাকা চাই কিছু অত্যাবশ্যক গুন। একটি হল অপরিসীম ধৈর্য্য। জীবন সম্পর্কে গভীর অনুভূতি।
একজন সাংবাদিকের কোন বন্ধু থাকেনা। সাংবাদিককে ব্যাথায় মুহ্যমান যেমন হওয়া যায়না, আবার চলেনা আনন্দে পুলকিত হওয়া। যেভাবে বহু মানুষের থেকে তিনি আঘাত পান, আবার সান্নিধ্যও পান। সংবাদ শিকারের ক্ষেত্রে তার সাফল্য যদি ২৫ ভাগ হয় তবে ব্যর্থতা ৭৫ ভাগ। বহু ভিআইপি, রথি, মহারথি তাকে মানুষ বলেই হয়ত গন্য করেন না। আবার জুটে অপ্রত্যাশিত সম্মান। অনেক সময় ডাক পড়ে নেতার মন্ত্রনাকক্ষে।
অনেক প্রভাবশালী মনে করেন, এ লেখলে কি, না লিখলে কি। এবাবে যারা প্রত্যাখান করেন, বা আজ রক্তচক্ষু দেখাচ্ছেন কাল তিনি বিনয়ে বিচলিত হতে পারেন। আজ তিনি যার আগ্রহভাজন কাল তিনি সকলেল সামনে অপমানের পাত্র। আজ যার ঠিকানা পাঁচতারা হোটেল, কাল তার আবাস হতে পারে বস্তিতে বা ষ্টেশনের ওয়েটিং রুমে। সবকিছুই মনে রাখতে হবে, রিপোর্টার বা প্রতিবেদক সাধারণ মানুষই। হিরো, ক্ষমতাবান ও জাঁদরেল কেউকেটা নন।
একজন রিপোর্টারের সুন্দর চেহারাটি হচ্ছে ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সাধারণ মানুষের সাথে ব্যবহার যেন হামবড়া ভাব প্রকাশ না পায়। সহানুভূতিশীল হতে হবে কিন্তু যাতে কেউ প্রতারণা বা তার কাঁধে রাইফেল রেখে, তাকে ব্যবহার করে কেউ পার না পায়। সন্দেহবাদী হওয়া ভালো কিন্তু বিশ্ব নিন্দুক হওয়া উচিত নয়। খবরের জন্য তার ক্ষুধা হবে অপরিসীম। কিন্তু খবরের জন্য থাকতেই হবে সহনশীলতা। তবে এখন দেখা যায়, শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমন নেই। সাংবাদিকতায় কোন ওজন নেই। কোন গুন নেই। সাংবাদিকতা সাইনবোর্ডের আড়ালে তিনি টাকা কামানোকেই গুরুত্ব দেন।
এছাড়া আছে অহংকার। কাগজ বা অনলাইন পোর্টালে ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়াতে সাংবাদিকতা করছেন এমন অনেকের আহামরি মনোভাব। নিজেকে দার্শনিক, বহু জ্ঞানী, সবজান্তা মনোভাব যে তাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন ও নাজুক পরিস্থিতির শিকারও হতে হয়। অনেক রিপোর্টার কাগজপত্র যাচাই না করে ও প্রতিপক্ষ বা যার বিপক্ষে তথ্য প্রকাশ হচ্ছে তার বক্তব্য ছাড়াই সংবাদ প্রকাশ করছেন। অদক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব, সংবাদ ও সাংবাদিকতার নীতিমালা, নিয়ম, বিধি-বিধান না মেনে ও টাকার বিনিময়ে সংবাদ প্রকাশের প্রবণতা সাংবাদিকতার যেমন কলঙ্ক ও সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
রিপোর্টারের কাজ দু’ধরনের। কারও কাজ হয় বিটে। তাকে বলা হয় বিট রিপোর্টার । ধরাবাঁধা বা রাজনৈতিক বিট করতে হলে সম্পর্ক রাখতে হয় তৃণমূলের কর্মী থেকে শীর্ষ নেতাদের সাথে। রাজনৈতিক নেতা ও সমাজে প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে।
একজন প্রতিবেদকের লেখার সাবলীলতা থাকা দরকার। তাকে মনের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। একজন প্রতিবেদককে মনে রাখতে হবে তিনিই তার সংবাদপত্রের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি। বর্তমান সময়ে ব্যাংঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা নাম সর্বস্ব কিছু অনলাইন পোর্টাল, দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক কাগজ মনগড়া রিপোর্ট ও অসদুপায় অবলম্বন করে সাংবাদিকতার নীতিমালাকে বিসর্জন দিয়ে যারা রিপোর্ট করেন তাদের সাংবাদিক বলা যায়না। তাদেরকে সাংঘাতিক বলা যায়। একজন প্রতিবেদককে নিজের আত্মসম্মানকে ধরে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। একজন রিপোর্টার তার অনলাইন বা কাগজের প্রতিনিধিত্ব করেন।
বর্তমান ঘুনেধরা সমাজে হলুদ সাংবাদিকতায় ও চৌদ্দনম্বরী সাংবাদিকতারও ছড়াছড়ি সমাজ ও রাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। একজন রিপোর্টার বা সাংবাদিক যদি তিনি কতদূর বা তার বিচরণের পরিধি অবগত না হন তবে নিশ্চিত বিপদগ্রস্ত হবেন। দেশে কিছুদিন পর পর বাংলাদেশ প্রেস ইনষ্টিটিউটের পক্ষ থেকে জেলায় ও মফস্বলে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সিনিয়র সাংবাদিকরা এইসব প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণ দেন। কিন্তু তারপরেও সাংবাদিকতার নীতিমালা ও সংবাদের ভাষা অনেকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন।
এছাড়া সব সরকারের আমলে মাঝে মধ্যে চাপ সৃষ্টি হয় রিপোর্টারের উপর। এই চাপ প্রভাবশালী, বিত্তবান ও ক্ষমতাধরদের থেকে মাঝে মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে আসে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিরাগভাজন পক্ষ আদালতেরও শরণাপন্ন হন প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে। বর্তমান সময়ে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, মেধা, মননছাড়াই সংবাদপত্রে জড়িয়ে পড়ছেন তরুন ও যুবকেরা। ঘুনেধরা সমাজকে এরা আরো ঘুনে ধরায়। সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা সরকার সাংবাদিক ইউনিয়্ন যৌথভাবে তৈরী করা প্রয়োজন। ……………..চলবে।