নিউজের পোষ্টমর্টেম

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ দেশের শহর, বন্দর, গ্রাম, লোকালয় বা জনপদ সর্বত্র যখন তখন খুন, গুম, পোড়ালাশ, ডুবন্ত লাশ, ভাসমান লাশের খবর বলে দেয় রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সহিংসতা চলমান যেন নিত্যদিন নতুন নুতন রূপে। নারী জাতির দুর্ভোগের খবরা খবর এখন পত্রিকার পাতায় বা অনলাইনে স্থান করে নিচ্ছে।

অপরাধীকে রক্ষা বা আড়াল করার কসরত চলে সমাজের নানা স্তরে। প্রতারণাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে সকল শ্রেণির একাংশের পেশাজীবি, বিশেষত সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর কর্মউদ্দিপনার বদৌলতে, ক্ষেত্রবিশেষের জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ মদদে। চমকে দেওয়া খরব, বেগম পাড়ার স্মৃতি হয়ে ফিরে অভাগাদের চোখে। বিশ্বজুড়ে এখন মড়কের কাল। মহামারি বা অতিমারি বলে ভয় পাবে মানুষ, সেদিন এখন নেই। অনলাইন পত্রিকা বা সংবাদপত্রের খবর আমাদের বলে দেয়, কতটা বেপরোয়া, অসংযত, অসহিঞ্চু ও অমানবিক হয়ে পড়েছে মানবজাতি। আশা জাগানিয়া মানুষ ভাবে, কখন যাবে দুঃসংবাদের খবর। কবে কখন সুসংবাদ নিয়ে সংবাদ লিখব সাংবাদিকতা পেশাকে সমুন্নত রাখতে।

আল্লাহ বলেছেন সুরা বাকারার ৪২ নং আয়াতে “সত্যকে মিথ্যা দিয়ে চালিয়ে দিওনা, মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশ্রণ করিও না”। আমরা কি এই বাণী সমুন্নত রেখেছি?

সরেজমিনে দেখে এসেও হাত থমকে দাঁড়ায় সত্যকথনে যেন ভয় ভয় ভাব। কোথায় যেন তাড়া করে ভয়ের একরাশ ঝড়। মাঝে মধ্যে চাপ আসে। অদৃশ্য শক্তি থেকে এ চাপ কখনো মাটন চাপ, বিফ চাপ, চিকেন চাপ আবার কখনো হয়ে আসে বুলডোজারের চাপ। না, আমার হারাবার কোন ভয় নেই। আমার হাত পা বাঁধা নেই। আমরা লিখতে পারি। এরপরও কেন কলম যেন রশি দিয়ে বাঁধা পড়ে নিজের কর্মস্থলে সম্পাদকের শাসানীতে। সাবধান। যেনতেনভাবে লেখলে হবে না।

না আমাকে আমি হারাতে চাইনা। তখন সত্য ও ন্যায়ের পথে আমাকে আরো হতে হয় সতর্ক। সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা রূপ দিয়ে রিপোর্টিং এর এ্যাসাইনমেন্ট কাভার করতে হয়। এটা ভালো, খারাপ কিছু না। তবে বেশী চাপ ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করে বার বার। প্রত্যেক সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের সাথে বোঝাপড়া ও তাদের বচন, নিয়মনীতি মেনে চলা দায় হয়ে পড়ে।

মা বলেছিলেন, যে পেশায় তোকে পুলিশে তাড়ায়, সন্ত্রাসী তাড়ায়, প্রভাবশালীরা ভয় দেখায় সে চাকরী ছেড়ে ভ্যানগাড়ী চালালেই ভাল। অন্তত রাতে ভালভাবে ঘুমাতে পারবি। হুমকি-ধামকি, মামলার পর মামলায় যখন ফেরারী, তখন মায়ের কান্না, স্ত্রীর উৎকন্ঠা আমার সাংবাদিকতাকে বার বার যেন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সত্য লিখতে গিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। বিএনপি শাসনামলে গোয়েন্দা সংস্থা একবার বলেছিলেন, আপনি আওয়ামী লীগের এজেন্ট, নজরদারীতে আছেন। আটক হতে পারেন। অথচ সেসময় জঙ্গি গোষ্ঠী আমাকে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়েছিল। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ প্রকাশ করে খবর প্রচার করলেও থানা পুলিশ বলল ভয়ের কিছু নেই। জিডি করতে হবে না। এমনও কঠিন পরিস্থিতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। যা এখন তরুন সাংবাদিকের জন্য হবে এসব রূপকথার কাহিনী। সেদিন সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। এখন এরকম সমস্যা হলে পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিক সমাজ সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ায়। এটাই পেশাগত দায়িত্ব পালনে বড় প্রাপ্তি।

সুখ দুঃখের কাহিনী লিখতে গিয়ে নিজের দুঃখের পাঁচালী আর লিখা হয়না। সময়ের প্রয়োজনে অনেকে আসেন সাংবাদিকতার ‘স’ শিখতে। শেখার পর আর পায় কে। অতীতকে তারা পেছনে ফেলে রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে ছুঁটেন সামনের দিকে। তখন তাদের অতীত নিয়ে ভাবনার সময় থাকেনা।

সাংবাদিকতা পেশায় এসে নানা অভিজ্ঞতার সাথে চেনা অচেনা মানুষের চরিত্রকে ভালভাবে কষ্টিপাথরে যাচাই করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নীতি ও আদর্শকে কখনো বাটখারায় বিক্রি করিনি। যে কারনে অভাব অনটন আমাকে নিত্যসঙ্গী করেছে। তারপরেও শান্তি। আল্লাহ আমাকে ভাল রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্ ।

সি টি নিউজ/ জস ৭-১-২০২১

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.