সাংবাদিকতা পেশা জনগণের মুল স্রোতের সঙ্গে সব সময় সম্পৃক্ত

রিপোর্টারের ডায়রী-২

0

রিপোর্টারের ডায়রী-২

সাংবাদিকতা পেশা জনগণের মুল স্রোতের সঙ্গে সব সময় সম্পৃক্ত

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ যে কোন লক্ষে পৌঁছাতে হলে একটি নির্দিষ্ট পথ ধরে চলতে হয়। চলার পথে দুধারে প্রচুর অবাঞ্চিত জিনিসের ভিড় চোখে পড়ে। জানতে হয় নিয়মনিষ্ঠ নীতি। সাংবাদিকতা হল এমনই একটি পেশা জণগনের মুল স্রোতের সঙ্গে সব সময় সম্পৃক্ত। সাংবাদিক জনতার কাছে সত্য, ন্যায়নিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য দায়বদ্ধ। অতএব, কোনরকম উপঢৌকন নেওয়া থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে উপঢৌকন বিনিময়ে প্রনোদিতভাবে একপেশে বা ভ্রান্ত খবর পরিবেশন করা যাবেনা। এনভেলাপ নেওয়া ও একপক্ষের সাফাই গাওয়া যাবেনা। একজন সাংবদিক শুধু তাই লিখবেন, যা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। ভদ্রলোক হিসেবে তিনি যা বলতে পারবেন না তা কখনও একজন সাংবাদিকের প্রতিবেদক হিসেবে লেখা উচিত নয়। এরজন্য একজন সাংবাদিককে বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা, সততা ও নির্ভূলভাবে কাজ করতে হবে। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়ে রঙ চাপিয়ে সংবাদ পরিবেশন যা পাঠককে বিভ্রান্ত করে তা সাংবাদিকতার নীতিবিরুদ্ধ কাজ। শুধু প্রতিবেদন রচনার জন্যই নয় ব্যক্তিজীবনেও একজন সাংবাদিকের প্রয়োজন সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও নিয়মনিষ্ঠ। সত্য ও ভ্রান্ত ধারনায় ভ্রান্তসীমায় তিনি যেন আলোচনার বস্তু  হয়ে না ওঠেন।

কোন ব্যক্তিগত সূত্র থেকে পাওয়া সংবাদের সত্য যাচাই না করে পরিবেশন করা উচিত নয়। সাংবাদিকতার মূল আদর্শ জনসেবা, কারো ক্ষতি করা নয়। সুষ্ট বলিষ্ঠ মন্তব্যের জন্য সাংবাদিকের অভিনন্দিত হওয়ার বাসনা ও ক্ষমতার লোভ যেন পেয়ে না বসে। হাঁসের মত পানি ফেলে তাকে দুধটুকুই খেতে হবে। সংবাদ সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরীর ক্ষেত্রে একজন সাংবাদিক ব্যক্তিমানুষের সম্মান, ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ, গোপনীয়তার অধিকার, মানুষের ভালো করার ভাবনা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। অভিযুক্ত কোন ব্যক্তির সম্পর্কে সরকারী সূত্র ছাড়া কটু মন্তব্য করা উচিত নয়। অন্তত তা করতে হলে অভিযুক্তকে তার মতামত জানানোর সুযোগ দিতে হবে। কোন অপরাধের প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী হলে চলবে না। আবেগকে দমন করতে হবে। যাতে জনগণ প্রতিবেদন পড়ে উত্তেজিত হয়ে না ওঠে। এটা মনে রাখতে হবে যে, জনগণ গণমাধ্যমের উপর যে আস্থা অর্পন করেছেন তা বজায় রাখার দায়িত্ব সাংবাদিকের। কোন সংকটে প্রতিবেদন লেখার সময় সাংবাদিককে হতে হবে ধীর, স্থির।

সাংবাদিককে মনে রাখতে হবে, বাড়তি অধিকার বা ক্ষমতা তার নেই। বর্তমান সময়ে কিছু কিছু নামসর্বস্ব দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও অনলাইন মনগড়া সংবাদ পরিবশেন করেন, যা সমাজে অস্থিরতাই সৃষ্টি করে। কিছু কিছু অনলাইনে কাটপিছ, কপিপেষ্ট করে অনেকে মনে করেন তিনি সাংবাদিকতার ষোলকলা পূর্ণ করেছেন। এই পদ্ধতি সাংবাদিকতার জন্য অশনি সংকেত। নিজস্ব মেধা ও মনন এখানে অনুপস্থিত। এজন্য বর্তমান সময়ে অনেককে দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকতার উদ্ভট চরিত্র। হাতে কলমে না শিখে, কম্পিউটারে বসে কাটপিছ নিউজ দেওয়াকে সাংবাদিকতা বলে না। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে অনলাইন পোর্টালে কাজ করতে এসে দেখি, এখানে মেধা বা সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ বা বই, পত্রপত্রিকা পড়ার দরকার নেই। এক অনলাইনের নিউজ টেনে এনে কাঁটচাঁট করে সেটে দিলেই হল। নিউজ হয়ে গেল। কেল্লাফতে। বাহ্ কি চমৎকার। সাংবাদিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। এছাড়া হলুদ সাংবাদিকতা সমাজ ও রাষ্ট্রকে কলুষিত করে।

সাংবাদিকতা পেশায় একটানা ৩৫ বছর অতিক্রম করছি। অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখিন এখনও হচ্ছি। গণমানধ্যমের কিছু কিছু সহযোদ্ধা ও সহকর্মীদের পেশাগত দায়িত্বে চরম অবহেলা, মনগড়া রিপোর্টিং, অহংকার, একগুয়েমী চোখে পড়ার মতো। সবজান্তা মনোভাব, নিয়ম নীতি ও সাংবাদিকতার পেশাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কিছু চেনা অচেনা কথিত সাংবাদিকের আচরণ সচ্ছ ও সৎ সাংবাদিকদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। সমাজে অস্থিরতা, ভুল রিপোর্ট করা, প্রলোভন ও অসদুপায় অবলম্বন করে অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে একপক্ষকে ফায়দা করে দেওয়ার ঘৃণ্য কর্মকান্ডের অনেকে জড়িত।

তথ্য মন্ত্রণালয় এব্যাপারে মনিটরিং ও সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাহায্য ও সহযোগীতা নিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় দুষ্টচক্রকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। না হয় এই পেশায় থাকা মানুষদের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা হ্রাস পাবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বেশী নজর দিতে হবে অনলাইন পোর্টালের ওপর। উদ্ভট ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অনলাইন রিপোর্ট সমাজ ও রাস্ট্রের সুষ্ট পরিবেশকে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।

সি টি নিউজ/ জস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.