মাস্টারদা সূর্য সেনের চরিত্র সংগ্রাম আজও অনুপ্রেরণার

0

সি টি নিউজঃ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের ৮৭ তম ফাঁসি দিবসে সূর্যসেনের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও লাল সালাম জানিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখা।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় নগরীর জেএমসেন হল প্রাঙ্গনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সদস্য সচিব শফিউদ্দিন কবির আবিদ, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্ত, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা, দলের জেলা কমিটির সদস্য আসমা আক্তার, জাহেদুন নবী কনক, আসমা আক্তার, দীপা মজুমদার প্রমুখ।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, “মাস্টারদা সূর্যসেন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী শৃঙ্খলে পরাধীন ভারতের এক কোণে এ চট্টগ্রামে স্বাধীনতার স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন,যা দাবানল হয়ে পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে গিয়েছিলো। মাস্টারদার সংস্পর্শে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের মতো সংগ্রামী নারী চরিত্র সৃষ্টি হয়েছিল। মাস্টারদা দেশবাসীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, শুধু পুরুষরা নয়, নারীরাও সশস্ত্র লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে। সূর্যসেনের চোখে জ্বল জ্বল করা স্বাধীনতার স্বপ্ন, অল্প কথায় মর্মস্পর্শী আবেদন, সহজ সরল আন্তরিকতা, অনাড়ম্বর জীবন, গভীর দেশপ্রেম, দরদী মন ছাত্র-যুবকদের প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। তিনি তাঁদের বলতেন, “জন্মেছি যখন মৃত্যু তো অনিবার্য। মরবই যখন তখন সার্থক মৃত্যুবরণই শ্রেয় নয় কি? কোটি কোটি মানুষের দাসত্ব শৃঙ্খল মোচনের পথে যে মৃত্যু আসবে, তাই আমরা বরণ করব।” গণভিত্তি তৈরির উপর মাস্টারদা জোর দিয়েছিলেন। এজন্য চট্টগ্রাম শহরসহ আশেপাশের অঞ্চলে নানা ধরনের সেবামূলক কাজ পরিচালনার জন্য কর্মীদের পাঠাতেন।

তখনকার দিনে বিপ্লবীরা অস্ত্র কেনার টাকা সংগ্রহ করত কখনও কখনও ডাকাতি করে, এটাকে বলা হতো স্বদেশি ডাকাতি। মাস্টারদা এ পথ বর্জন করলেন। বললেন, “যাঁরা স্বদেশি, যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দেবে, তাঁরা অন্যের বাড়িতে ডাকাতি করবে কেন? তাঁরা নিজের ঘর থেকে আনবে, সেটাই তো তাঁদের আত্মত্যাগ।”

আজ মৌলবাদী দলগুলো প্রচার করে, সূর্য সেন সাম্প্রদায়িক ছিলেন, মুসলিম বিরোধী ছিলেন। অথচ সূর্যসেনের বিপ্লবী দলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য অবারিত দ্বার ছিল। গীতা হাতে, কালি প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে শপথ নেওয়া তাঁর দলে ছিল না।মীর আহমেদ, আফসারউদ্দিন, আবদুস সাত্তার, কামালউদ্দিন আহমদ, সৈয়দুল হকের মতো মুসলিম তরুণদের মাস্টারদা বিপ্লবী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। জালালাবাদ যুদ্ধের পর চার বছর আত্মগোপনকালীন সময়ের বড় অংশ ছিলেন বিভিন্ন গ্রামে গরীব মুসলিম চাষীদের পরিবারে। আত্মগোপনকালে সূর্য সেন মীর আহমেদের ঘরে কিছুদিন আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঘরের মধ্যে একটা গর্তে মাস্টারদা থাকতেন, গর্তের উপর খাট বিছিয়ে আহমেদের মা শুয়ে থাকতেন। মাস্টারদা সাম্প্রদায়িক হলে, একটা রক্ষণশীল মুসলিম মায়ের ভালোবাসা কীভাবে অর্জন করলেন?

আজ যখন সর্বাত্মক সংকটের ঘোর অন্ধকার দেশের আকাশে, দেশের রাজনীতি-সমাজনীতি-শিক্ষা-সংস্কৃতি-মূল্যবোধ সমস্তকিছুতে পচন ধরেছে, তখন সূর্যসেনের মহৎ চরিত্র ও সংগ্রাম আমাদের পথ দেখায়।পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-শাসন থেকে মুক্তির লড়াইয়ে মাস্টারদা সূর্য সেন বিরাট প্রেরণা হয়ে থাকবেন।”

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.