চন্দনাইশে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪ মেয়র ৫৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী

0

চন্দনাইশ প্রতিনিধিঃ আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিনে চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনে ৪ মেয়র, ৯ সংরক্ষিত মহিলা, ৪৭ সাধারণ কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গত ১২ ফেব্রুয়ারী প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে প্রার্থীরা নিজেদের সমর্থন আদায়ে ব্যাপক গণসংযোগ, পথসভা ও নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যদিয়ে শেষ হয় দিন। মেয়র খোকা ও ফারুক বাহাদুর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

১৫ হাজার ১’শ ৯৯ জন পুরুষ, ১৩ হাজার ৭’শ ৯৮ জন মহিলাসহ ২৮ হাজার ৯’শ ৯৭ জন ভোটারের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন মেয়র, ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা, ৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিনে অনুষ্ঠিত চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন সুচাররূপে প্রচারণা করার লক্ষ্য চন্দনাইশে একজন জুডিসিয়াল, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৩ প্লাটুন বিজিবি, ৪’শ পুলিশ, ১৩৯ জন আনসার ভিডিপি, ৬টি মোবাইল টিম, ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচন চলাকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। ১৬ টি ভোট কেন্দ্রে ৮৩ টি বুথে এ সকল ভোটারেরা ভোট প্রদান করবেন। ১৬ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৮টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৩টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে প্রশাসন অর্ন্তভূক্ত করেছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধরূপে পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন, সহকারি রিটানিং অফিসার ও নির্বাচনী কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ব্যালেট বক্স, ব্যালেট পেপার, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে।

চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন, আ’লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র মাহাবুবুল আলম খোকা, বিএনপি সমর্থিত ধানের শীর্ষের নবীণ প্রার্থী পৌর বিএনপি’র সদস্য সচিব মাহাবুবুল আলম চৌধুরী, এলডিপি সমর্থিত ছাতা প্রতীকের প্রার্থী, পৌর এলডিপি’র সভাপতি আইনুল কবির, ইসলামী ফ্রন্ট সমর্থিত মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী নবীণ, উদ্যোগী, প্রবাসী, ফারুক বাহাদুর।

অপরদিকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডে খোরশেদা বেগম (চশমা), শিরিন আকতার (আনারস), ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডে কহিনুর আকতার (চশমা), জান্নাতুল ফেরদৌস (টেলিফোন), জান্ন্তাুল ফেরদৌস মিনু (আনারস), সুমি বড়ুয়া, (জবা ফুল), ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডে তাহেরা বেগম চৌধুরী (জবা ফুল), রাজিয়া বেগম (চশমা), হাছনারা বেগম (আনারস) প্রতীক পেয়েছেন।

সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১ নং ওয়ার্ডে অজয় দত্ত (ব্যাক বোর্ড), মুহাম্মদ আবদুল করিম (টেবিল ল্যাম্প), মো. জাহেদুল ইসলাম (পাঞ্জাবী), মো. শাহেদুল ইসলাম (ডালিম), সুজন সরকার (পানির বোতল), সুলতান মঈনুদ্দিন মোরশেদ চৌধুরী (উটপাখি),

২ নং ওয়ার্ডে আবদুস সবুর (উটপাখি), কেএম হামিদ উ্দ্দিন (পানির বোতল), মো. ইউছুপ (পাঞ্জাবী), মো. কামাল হোসেন চৌধুরী (ব্যাক বোর্ড), মো. নুরুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প), মো. মোজাম্মেল ইসলাম সোহেল (ডালিম),

৩ নং ওয়ার্ডে মো. হেলাল উদ্দীন চৌধুরী (পাঞ্জাবী), মো. আনোয়ার হোসেন (উটপাখি),

৪ নং ওয়ার্ডে মো. আবদুল কাদের (ব্যাক বোর্ড), মো. নাসির উদ্দীন (ডালিম), মো, মাসুদুর রহমান (উটপাখি), মো. গোলাম মোস্তফা (পাঞ্জাবী),

৫ নং ওয়ার্ডে মো. নুরুল কবির (উটপাখি), মো. শাহ আলম (টেবিল ল্যাম্প), মো. সেলিম (ডালিম), সুবাস কান্তি বড়ুয়া (পাঞ্জাবী),

৬ নং ওয়ার্ডে আইয়ুব মিয়া (ব্রিজ), আবদুল হক (উটপাখি), মো. মাহাবুবুল কবির (পানির বোতল), মো. শাহাদাত হোসেন (পাঞ্জাবী), মো. ছৈয়দ (টেবিল ল্যাম্প), মোরশেদুল আলম (ডালিম), মো. ওমর ফারুক (ব্যাক বোর্ড), সরওয়ার ইসলাম (গাজর),

৭ নং ওয়ার্ডে আবু ছাদেক ( ব্যাক বোর্ড), মো. ফরিদ আহমদ চৌধুরী (গাজর), মো. শওকত হোসেন (ডালিম), মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী (টেবিল ল্যাম্প), মো. ফারুক আলম (পাঞ্জাবী), মো. হেলাল উদ্দীন চৌধুরী (উটপাখি),

৮ নং ওয়ার্ডে আবদুল জলিল (টেবিল ল্যাম্প), কাজী মোহাম্মদ সেলিম (ব্যাক বোর্ড), মো. আবদুর রহিম (উটপাখি), মো. আবু তৈয়ব (ডালিম), সিরাজুল ইসলাম (পাঞ্জাবী),

৯নং ওয়ার্ডে মামুনুল ইসলাম চৌধুরী (উটপাখি), মুহাম্মদ সেকান্দার হোছাইন সোহেল (টেবিল ল্যাম্প), মো. খোরশেদ আলম সবুজ (ব্যাক বোর্ড), মো. মোসলেম মিয়া (ডালিম), মো. আমিনুল হুদা চৌধুরী (পাঞ্জাবী), মো. লোকমান হাকিম (গাজর) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চন্দনাইশে নারী ভোটার পুরুষ ভোটারের চেয়ে ১৪’শ কম হলেও নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে ফ্যাক্টর হতে পারেন এই নারী ভোটাররা। পৌর এলাকার এ সকল পুরুষ ভোটারদের মধ্যে অনেক ভোটার বিদেশে থাকার কারণে ভোট দিতে পারবেন না। তাই নারী ভোটারের দিকে ঝুঁকছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এলডিপি, ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থীসহ ৪ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী মাহাবুবুল আলম খোকা দ্বিতীয়বারের মত মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। অপরদিকে বিএনপি, এলডিপি ও ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী প্রথমবারের মত মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ক্লিন ইমেজের কারণে সাধারণ ভোটারদের মাঝে তাদের গ্রহণ যোগ্যতাও কম নয়। তাই ৪ জনের মধ্যে নির্বাচনী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। বিএনপি, এলডিপি, ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী ভিন্ন কৌশল নিয়ে মাঠে আছেন। তারা সভা-সমাবেশের চেয়ে গ্রুপ করে কর্মীদের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগও প্রতিটি মহল্লায় সব অঙ্গ সংগঠনকে নিয়ে কর্মীসভা করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এবারের পৌর নির্বাচনে এলাকার উন্নয়ন, বিগত দিনের জনপ্রতিনিধিদের কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত সখ্য প্রাধান্য পাচ্ছে। তাছাড়া দলীয় ইমেজও একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহাবুবুল আলম খোকা বলেছেন, বিগত ৫ বছরে এ পৌরসভার অনেক উন্নয়ন করেছেন। আরো কিছু উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। এ সকল কাজ শেষ করতে হলে তাকে আরেকটি মেয়াদে মেয়র পদে নির্বাচিত করার আহবান জানান। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাছাড়া তিনটি প্রকল্পে রাস্তা-ড্রেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানান। অনুমোদন পেলে পৌরসভার রাস্তাঘাট, ড্রেনসহ যাবতীয় উন্নয়নকাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বলেছেন, তার দাবি- মানুষ যেন তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তাহলে তাদের দলীয় প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।

এলডিপি প্রার্থী আইনুল কবির বলেছেন, চন্দনাইশ কর্ণেল অলির ঘাঁটি, এখনও মানুষ কর্ণেল অলিকে ভালবাসে তাই তার প্রতীক ছাতায় ভোট দিতে পারলে তিনিই জয়লাভ করবেন। মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের সঙ্গেই দীর্ঘদিন ধরে কর্নেল অলির সাথে কাজ করে চন্দনাইশ পৌরসভায় সাধারণ মানুষের প্রিয় হয়েছেন তিনি। তরুণ ও নবীন ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী ফারুক বাহাদুর বলেছেন, চন্দনাইশের মানুষ সুন্নী আকিদায় বিশ্বাসী। তার ধারাবাহিকতায় পর পর দুইবার উপজেলায় মাও. সোলাইমান ফারুকী ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিশেষ করে নারী ভোটারেরা ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকেন। এবারও যদি ভোটারেরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন তাহলে তিনি নির্বাচিত হবেন এটাই তার বিশ্বাস। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরোও ১দিন। রাত পোহালে ভোট যুদ্ধে নামবে চন্দনাইশ পৌরসভার ৪ মেয়র, ৫৬ কাউন্সিলর প্রার্থী।

গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আ’লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাহাবুবুল আলম খোকা ও ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মোমবাতির প্রার্থী ফারুক বাহাদুর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুললেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত মাঠে থাকার মত ব্যক্ত করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.