চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতায় আহত-১০
চন্দনাইশ প্রতিনিধিঃ চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতায় মহিলাসহ ১০ জনের অধিক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ২ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে সাধারণ কাউন্সিলরদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ নং ওয়ার্ডে পূর্ব জোয়ারায় মো.ফরিদ উদ্দিনের ছেলে মো.ফোরকান (২৮), নুরুল আমিনের ছেলে মেজবাহ উদ্দিন (৩৪), রহিম উদ্দিনের ছেলে মো. অভি (২১), পূর্ব চন্দনাইশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মো.লেদু মিয়ার ছেলে মো. হাবিব (২০), সিকদার বাড়ির মুত সোলাইমানের ছেলে মো. জাহেদ (৪৫), উত্তর জোয়ারার মৃত রসু মহন চৌধুরীর ছেলে দুলাল চৌধুরী (৭০), দক্ষিণ গাছবাড়িয়ার আবদুর সুবানের ছেলে আনঞ্জুমান খাতুন (৭০), আবুল বশরের ছেলে মো.সুমন (২৮), জহির উদ্দিনের ছেলে আজিম উদ্দিন (১৬), আনজু মিয়ার ছেলে মো.ফজল করিম (৪৮) আহত হয়। আহতদেরকে চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। আহতদের মধ্যে মেজবাহ উদ্দিন ও মো. হাবিবকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
নির্বাচন চলাকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে ৮ নং ওয়ার্ডের বুলার তালুক এলাকায় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন হলে ভোটারদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়। কমিশনার সমর্থকদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একইভাবে দক্ষিণ গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১ জন কমিশনার সমর্থক কেন্দ্রে ফাঁকা গুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করে। এসময় ভোটারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এদিকে গাছবাড়িয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের সাথে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুরে ৩ নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ পূর্ব জোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ কমিশনার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন আহত হয়। এ সময় প্রায় ২০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। এ সকল ঘটনার সংবাদ পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট, র্যা ব, পুলিশ, বিজিবি সদস্যরাসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বললেন ৩ মেয়র প্রার্থী
চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে দাবি করেছেন ৩ মেয়র প্রার্থী ও এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারী সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত পৌরসভার ১৬ টি কেন্দ্রে বড় ধরনের কোন অঘটন ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আ’লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র মাহাবুবুল আলম খোকা ভোট দিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নারী-পুরুষ লাইনে দাড়িয়ে তাদের ভোট পছন্দের প্রতীকে প্রয়োগ করতে পারছেন। এভাবে নির্বাচন পরিচালিত হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম চন্দনাইশ সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১ টায় স্বস্ত্রীক ভোট দিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতি নেই। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ছাতার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে, ব্যালেট পেপার দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কেন্দ্রে যাওয়ার পর স্যারের জন্য একটি ব্যালেট পেপার দেন। এ অর্থ হচ্ছে ব্যালেট পেপার তারা অন্যদেরকে দিচ্ছে না। প্রার্থীর বড় ভাইয়ের মেয়ের নিকট থেকে মেয়রের ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে অন্য একজন নৌকায় সীল মারে। ভোটের পরিবেশ নেই। সুষ্ঠু ভোট জনগনের অধিকার। এ পরিবেশ বেশি দিন বিরাজ করবে না। সূর্য উদয় হলে অস্ত্র যায়, আবার উঠে। মানুষের মনের মাঝে যে বিক্ষোভ জমা হচ্ছে এটা ভালো নয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম এদেশের মানুষের স্বাধীনতা ও ভোটাধিকারের জন্য। পাকিস্তান শাসনামলে তিনি অনেকবার ভোট দিয়েছেন বলে দাবি করে বলেন এখন তার চেয়ে খারাপ অবস্থা।
এলডিপি সমর্থিত ছাতা প্রতীকের প্রার্থী আইনুল কবির ভোট দিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তার এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ১২ বছরের নির্বাচনে এ কেন্দ্রে এ ধরনের ভোট ডাকাতি কোন সময় হয়নি। বহিরাগতদের অবাধ বিচরণের কারণে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সাড়ে ১০ টার মধ্যে মেয়রের সব ভোট শেষ হয়ে যায় বলে দাবি করেন।
বিএনপি সমর্থিত ধানের শীর্ষের প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী তিনি চন্দনাইশ আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেছেন, এ কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। তবে অন্য সব কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে। নৌকার সমর্থকেরা মেয়রের ব্যালেট নিয়ে নিজেরাই সিল মারছেন। শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের ভোটগুলো গোপন বুথে গিয়ে দিতে পেরেছেন সাধারণ ভোটারেরা।
ইসলামী ফ্রন্ট সমর্থিত মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী ফারুক বাহাদুর বলেছেন, আমরা নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত মাঠে থাকার কথা বলেছি এবং ছিলাম। কিন্তু প্রত্যকটি কেন্দ্র থেকে তার নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দিয়ে মেয়রের ব্যালেট পেপার নিয়ে নৌকার সমর্থকেরাই সিল মেরেছে।
সিটি নিউজ/ডিটি