বর্ষিয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আর নেই

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ বর্ষিয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি (ইন্না— রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সময়নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বরেণ্য অভিনেতা এটিএম সামসুজ্জামানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কোয়েল আহমেদ বলেন, ‘আব্বা আর নেই। আব্বা আর নেই। শুক্রবার বিকেলে আব্বাকে বাসায় নিয়ে আসছিলাম। উনি হাসপাতালে থাকতে চাইছিলেন না। তাই বাসায় নিয়ে আসছিলাম। আমি রাত ২টা ৩০ মিনিটে আব্বার বাসায় আসছি।’

গুণী এ অভিনেতার মৃত্যু সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এর আগে গত বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এটিএম শামসুজ্জামানকে। তার অক্সিজেন লেভেল কমে গিয়েছিল। হাসপাতালে ডা. আতাউর রহমান খানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা।

১৯৬৫ সালে অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র আগমন হয় এটিএম শামসুজ্জামানের। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। প্রবীণ এ অভিনেতা আজও দর্শকের কাছে নন্দিত।

এক নজরে এটিএম শামসুজ্জামান
এটিএম শামসুজ্জামান। একটি নামই শুধু নয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটি দুর্দান্ত ইতিহাস। একাধারে তিনি একজন অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। শুরুতে মঞ্চে কাজ করতেন অভিনেতা হিসেবেই। এ ছাড়া চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। এরপর আসেন খল অভিনয়ে। অসংখ্য চলচ্চিত্রে এটিএম শামসুজ্জামানের খল চরিত্রগুলো আজও জীবন্ত।

এটিএম শামসুজ্জামানের ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিল আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। তার বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

হাসির ছলে কূটচালে মানুষের ক্ষতি করতে সিনেমার পর্দায় এটিএমের জুড়ি মেলা ভার। তার চরিত্রগুলো চিত্রনাট্যে সেভাবেই লেখা হতো। দীর্ঘ একটা সময় তিনি খল চরিত্রে সিনেমার নির্মাতাদের কাছে সেরা ভরসা হিসেবে ছিলেন।

এরপর তিনি ঝুঁকে পড়েন কৌতুক প্রধান চরিত্রের অভিনয়ে। বেশির ভাগ সময়ই তাকে দেখা যেতে লাগল হাস্যরসের সংলাপে। ধীরে ধীরে তিনি কমেডি চরিত্রে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে গেলেন। সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটক ও টেলিফিল্মেও এটিএম শামসুজ্জামান নতুন করে সারাদেশের মানুষকে বিনোদিত করতে শুরু করেন। চলচ্চিত্র ‘টক জাল মিষ্টি’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘জামাই শ্বশুর’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, নাটক ‘পত্র মিতালী’সহ অনেক কাজ তার উদাহরণ হয়ে আছে।আরও পড়ুন: এটিএম শামসুজ্জামান আর নেই

১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন।

১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত দায়ী কে? চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান বরেণ্য এই অভিনেতা।

শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। জলছবি, যাদুর বাঁশি, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়।

তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রটি। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। এর আগে নারায়ণ ঘোষ মিতার লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া খল চরিত্রে তার কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো- অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক।

এ ছাড়া বেশকিছু চলচ্চিত্রে তিনি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অনন্ত প্রেম, দোলনা, অচেনা, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, চোরাবালি।

১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তদের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন শাবনূর-রিয়াজ জুটির এবাদত নামের ছবিটি।

অভিনয়-নির্মাতার পাশাপাশি একজন লেখক হিসেবেও এটিএম শামসুজ্জামানও নন্দিত। কাহিনিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান গল্প, কবিতা লেখারও চর্চা করেছেন নিভৃতে।

অভিনয় জীবনের শুরুতে ষাটের দশকে টিভি নাটকে অংশগ্রহণ ছিল তার। তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকসমূহ হলো- রঙের মানুষ, ভবের হাট, ঘর কুটুম, বউ চুরি, নোয়াশাল, শতবর্ষে দাদাজান

এ ছাড়া তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে-মলুয়া, বড় বউ, অবুঝ মন, ওরা ১১ জন, শ্লোগান, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, সংগ্রাম, ভুল যখন ভাঙ্গলো, চোখের জলে, লাঠিয়াল, অভাগী, নয়নমনি, যাদুর বাঁশি, গোলাপী এখন ট্রেনে, অশিক্ষিত, সূর্য দীঘল বাড়ী, ছুটির ঘণ্টা, লাল কাজল, পুরস্কার, প্রিন্সেস টিনা খান, রামের সুমতি, ঢাকা ৮৬, দায়ী কে?, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, দোলনা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, অজান্তে, স্বপ্নের নায়ক, তোমার জন্য পাগল, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, জামাই শ্বশুর, আধিয়ার, শাস্তি, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, আমার স্বপ্ন তুমি, দাদীমা, আয়না, ডাক্তার বাড়ী, চাঁদের মতো বউ, মন বসেনা পড়ার টেবিলে, এবাদাত, বিশ্বাসসহ অসংখ্য ছবি।

সিটি নিউজ/ডিটি

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.