মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্তা নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ হাইকোর্ট চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাদরাসায় ৭ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। ১৪ মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।  এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পরে সেটি আমলে নিয়ে উক্ত আদেশ দেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার গণমাধ্যমকে জানান, চট্টগ্রামের মাদরাসার শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা আগামী রবিবারের (১৪ মার্চ) মধ্যে জানাতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক (ডিসি) পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিকে) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও ভিডিও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতের নজরে আনলে স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানান, আদালত জানতে চেয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষক ইয়াহহিয়া খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা, তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে কিনা। এছাড়া শিশুটির পরিবারকে কোনো চাপ দেয়া হয়েছে কিনা তাও জানাতে বলেছেন। এছাড়া মাদরাসাটি যে অধিদফতরের অধীনে তার কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।

তিনি জানান, শুনানিতে আদালত মন্তব্য করেছেন, এ ধরনের ঘটনা মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থার ইমেজ ক্ষুণ্ণ করেছে।
এদিকে শিশুটিকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত মাদরাসাশিক্ষক ইয়াহহিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (১০ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে রাঙ্গুনিয়ার সাফরভাটা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানান হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।

ওসি বলেন, মামলা দায়েরের জন্য শিশুর মা-বাবাকে রাজি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি তারা রাজি না হন, তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।

জানা গেছে, হাটহাজারীর পৌর এলাকার মারকাজুল কোরান ইসলামি একাডেমি মাদরাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী শিশু ইয়াসিন।  গত সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে মা পারভিন আক্তার ও বাবা মোহাম্মদ জয়নাল মাদরাসায় তাদের সন্তানকে দেখতে যান। কিন্তু ফেরার সময় ছোট্ট শিশুটি মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি যাওয়ার বায়না ধরে। এক পর্যায়ে সে মা-বাবার পিছু পিছু মাদরাসার মূল ফটকের বাইরে চলে আসে।

আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মাদরাসার হুজুর ইয়াহহিয়া। মা-বাবার সঙ্গে মূল ফটকের বাইরে কেন গিয়েছে শুধু এই কারণে শিশুটিকে বেত দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। আর শিশুটি বাঁচার আকুতি জানাতে থাকে। তারপরেও ক্ষান্ত হননি ইয়াহহিয়া। অনবরত চলে তার পিটুনি।

এ সময় শিক্ষার্থীদের কেউ একজন ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করলে, নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেন নেটিজেনরা।
৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, ইয়াসিনকে ঘাড় ধরে নিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক ইয়াহইয়া। কক্ষে নেয়ার পর তাকে বেত দিয়ে বেধড়ক পেটান।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘স্থানীয় একজন শিশুটিকে প্রহারের ঘটনা আমাকে জানান। আমি তাৎক্ষণিক হাটহাজারী থানার একটা টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চকলেট নিয়ে যাই। বাচ্চাটির সঙ্গে কথা বলি এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করি। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব এমন সময় ছাত্রের বাবা-মা এসে কান্নাকাটি করেন এবং শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে জানান।’

তিনি বলেন, তারা কিছুতেই মামলা করবেন না এবং আমাদেরকেও আইনগত ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ করেন। তাদেরকে অনেক বুঝানো সত্ত্বেও তারা লিখিতভাবে আমাদের অনুরোধ করেন আইনি ব্যবস্থা না নিতে। রাত ২টা পর্যন্ত অভিভাবকেরা আমার কার্যালয়ে অবস্থান করেন যেনো আইনি ব্যবস্থা না নিই।

পরবর্তীতে পুলিশকে বলা হয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

সিটি নিউজ/ডিটি

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.