জীবনের শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিক চান একটা স্বীকৃতি

0

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাধীনতার ৫০ বছরেও চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিক আহমদের স্বীকৃতি মেলেনি এখনো! চেষ্টা তদবির দৌড় ঝাপ না করায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান মেলেনি আজো। সাদাসিদে জীবন যাপনে অভ্যস্ত তিনি বর্তমানে নিজ বাড়ীতে জীবনের শেষ সময় পার করছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিক আহমদ ১৯৪৭ সালের ৭ আগষ্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্ধা গ্রামে সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা মৃত এজাহার মিয়া ও মাতা মৃত জয়নাব খাতুন।

১৯৬৫ সালে চরকানাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্টিক পাশ করেন । ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে এইচ,এস,সি, ১৯৬৯ সালে বোয়ালখালী কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে বি.কম, স্বাধীনতা উত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রীতে অধ্যয়ন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিক আহমদ বলেন, ‘১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করি। ১৯৬৯ সালে বোয়ালখালী কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে বি.কম এ ভর্তি হই। জন্মভূমির প্রতি এই টান থেকেই ১৯৭১ সালে দেশ রক্ষার স্যার আশুতোষ কলেজের গণিত শাস্ত্রের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চৌধুরীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। স্যারকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে অপারেশন গুলোতে অংশ গ্রহন করি। এপ্রিলে স্যারসহ আমরা ভারত যাবার প্রস্তুতি নিতে থাকি। পরে ভারত যাওয়ার জন্য বান্দরবান থেকে পাহাড়ি পথে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পদুয়া হয়ে দোভাষী বাজারে উপস্থিত হন। স্যারের গাড়ী ছিল সবার আগে। জিপ রওয়ানা হয় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্দেশ্যে। ইমাম গাজ্জালি কলেজ পেরুবার পর আমরা গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। জানতে পারি স্যারের উপর হামলা হয়েছে। এই হামলায় স্যারসহ অনেকে শহীদ হন। পরে আমার আর ভারত যাওয়া হয় নি। চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি।মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পরে পাকহানাদার বাহিনী আমার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আমার মা-বাবার উপর অনেক নির্যাতন করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৭৫ সালের পরে আমি দীর্ঘ ৩০ বছর জীবিকার তাগিদে বিদেশে ছিলাম।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিক আহমদের স্ত্রী শামশুন নাহার বলেন, আমার বড় ভাই বোয়ালখালীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এখলাছুর রহমানের লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকলেও শহীদ গেজেটে এখনো আসেনি এই বীরের নাম। ঠিক তেমনি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমার স্বামীর নাম নেই কোথাও! আমাদের পরিবারে কেন এই দুর্দশা বুঝতে পারছি না!

মোঃ রফিক আহমদের ছেলে মোজাম্মেল হক এরশাদ বলেন, সরকারিভাবে কোন সুযোগ-সুবিধা আমাদের দরকার নেই। আমি চাই আমার বাবা মৃত্যুর আগে যেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটা পায়। গত ১৯ জানুয়ারী অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। যার আবেদন নাম্বার ৭০৮১৬৪০০৫২০৩২৫। বর্তমানে আমার বাবা অসুস্থ । মস্তিস্কের এক পাশে ব্লক ধরা পরে। যার কারনে অনেক কথা এখন ভূলে যাচ্ছেন।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিক আহমদের ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি । তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশনের নেতাদের অতি পরিচিত মুখ ও সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর সমসাময়িকের মধ্যে প্রয়াত চৌধুরী হারুনুর রশীদ এমপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মহসীন খান, বোয়ালখালীস্থ উপ পুলিশ কমিশনার কবি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ উল্লেখযোগ্য । পটিয়া ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম কাতারের সৈনিক প্রবীণ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিক আহমদ ।

সিটি নিউজ/এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.