চন্দনাইশে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি-থুতনিতে মাস্ক ব্যবহার

0

চন্দনাইশ প্রতিনিধি: করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও সাধারণ মানুষের মাঝে নেই সচেতনতা। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি,মাস্ক ব্যবহার করছেন থুতনিতে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দিন দিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা, হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, শনাক্ত হচ্ছে বেশী। উপজেলার বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চায়ের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ফুটপাত, বাজার, রিকশা-অটোরিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াতকারী অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মুখে মাস্ক নেই। যাদের মাস্ক রয়েছে, তাদের বেশিরভাগ থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রেখে দিব্যি গল্প-গুজবসহ কাজকর্ম করছেন।

চন্দনাইশ সদরে একজন মহিলা ও একজন পুরুষের মুখে মাস্ক নেই। কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, বাজার করতে তড়িঘড়ি করে চলে আসায় ভুল করে মাস্ক রেখে এসেছেন। অপরদিকে দুইজনের থুতনিতে মাস্ক পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে জানতে চাইলে তারা বলেছেন,কথা বলার জন্য মাস্ক নিচে নামানো হয়েছে।

চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবু রাশেদ বলেন, মানুষের মাঝে করোনা-ভীতি কেটে যাওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবাধে চলাফেরার কারণে করোনার দ্রত সংক্রমণ হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগসহ সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে দেয়া ১৮টি নির্দেশনা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারা যেন নিজেরা মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তত রেখে সেবা নিতে আসা মানুষের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পরার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে।

কেউ কেউ পরলেও বেশিরভাগ সময়েই তা থাকছে থুতনিতে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়লেও সচেতন হননি মানুষ। চন্দনাইশে সেভাবে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। মাস্ক ব্যবহারেও দেখা যাচ্ছে চরম অনীহা। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করছেন। যারা ব্যবহার করছেন, তাদের মধ্যেও বেশিরভাগ যথাযথভাবে ব্যবহার না করে থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখছেন।

প্রধান সড়কের বাইরে অলিগলিতেও মাস্কের ব্যবহার খুব কম হচ্ছে। মগবাজার, মধুবাগ ও হাতিরঝিল এলাকার বিভিন্ন সড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনমজুর, শ্রমিক, হকার, রিকশাওয়ালাসহ বিভিন্ন মোড়ে অবস্থানকারী কিশোর-যুবকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তেমন দেখা যায়নি। বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিল না। এক মহিলা জানান, তীব্র গরমে ঘামে শ্বাস নিতে এমনিতেই কষ্ট হয়। এ অবস্থায় মাস্ক মুখে না পরে থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন।

কলেজ গেইট মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা সাত-আট অটো রিকশাচালকের মধ্যে মাত্র এক বয়স্ক ব্যক্তির মুখে মাস্ক দেখা গেছে। তারাও জানালেন গরমের কারণে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। চন্দনাইশ সদর এলাকার দুই ধারের সড়কের চলাচলকারী পথচারীদের মধ্যেও তেমন মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন অফিস কিংবা ভবনের নিরাপত্তা কর্মীদের মুখেও মাস্ক ঠিকমতো ছিল না।

চন্দনাইশ সদর এলাকায় চায়ের দোকানে মাস্ক না পরে পাশাপাশি বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে অনেককে। এসব এলাকায় দিনমজুর, হকার, রিকশাচালককে সচেতন করার মতো কাউকে দেখাও যায়নি। এসব এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদের মুখেও মাস্ক তেমন ছিল না।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য ও প.প. কমকর্তা ডাঃ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেছেন, করোনা সংক্রমণের মাত্রা খুব দ্রত বাড়ছে। এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। গরমের চিন্তা করলে হবে না। শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে না পারলে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টসাধ্য হবে। এর পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারসহ অন্য প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

করোনা সংক্রমণ রোধে বুধবার থেকে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী ওঠানোর সরকারি নির্দেশনা থাকলেও চন্দনাইশে অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। টিকা নেওয়ার পরও করোনা পজিটিভ হওয়ায় ও রেকর্ডসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা। এতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মাত্র তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে ২০০-৩০০ জনের ওপরে। ২৭ মার্চ সর্বোচ্চ ৩৫৩ জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ২৯৪ জন এবং উপজেলায় ৫৯ জন। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায় গত দুই সপ্তাহে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে যথাক্রমে ২৯০ জন, ২১২, ২৫৫, ২০৮, ২৬৯, ২৭২, ২০০, ১১১, ২০০, ২১২ এবং ১৫৯ জন। দুই মাস আগে শনাক্তের হার ছিল ২ থেকে ৪ শতাংশ; বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ থেকে ১৩ শতাংশে। মোট রোগীর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে শনাক্তের হার ৭৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং ১৪ উপজেলায় ২১ শতাংশ। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫১১ জন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তবে বাড়ছে না সচেতনতা। বিষয়টি উদ্বেগের। মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেশিরভাগ মানুষ। এ জন্য চেকপোস্ট বসানোসহ উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ বন্ধ করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মাস্ক পরতে বাধ্য করতে নিয়মিত চালানো হচ্ছে অভিযান; করা হচ্ছে জরিমানাও।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণের হার। নতুন করে করোনা রোগী শনাক্তের হারে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। এই হার নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরার বিকল্প নেই। সেসঙ্গে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। মানুষ নিজ থেকে সচেতন না হলে জরিমানা করে কিংবা দিয়ে তেমন লাভ হবে না।’করোনা প্রতিরোধক টিকা নেয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। বর্তমানে তিনি ‘হোম আইসোলেশনে’ আছেন। সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের প্রধান ডেডিকেটেড জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে আছেন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে একেবারে সামনে থেকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি ছাড়াও সম্প্রতি আরও বেশ কয়েকজন সম্মুখযোদ্ধা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঝুঁকি এড়াতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে প্রশাসন।

সিটি নিউজ/এসআরএস/ডিএইচ

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.