খাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গাছ পাচারের অভিযোগ

0
শ্যামল রুদ্র, খাগড়াছড়িঃ খাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূল্যবান গাছ কেটে বাইরে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাচার কাজে জড়িত সন্দেহে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ এক কর্মচারীকে দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানো নোটিশ। পাশাপাশি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবর লিখিত ভাবে পত্র পাঠিয়েছেন গবেষণা কেন্দ্রর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পিএসও-প্রশাসন)  ড.এস এম ফয়সল ।
 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে বেশ কিছু দিন ধরেই গাছ কেটে বাইরে পাচারের খবর চাউর হচ্ছিল এলাকায়। সম্প্রতি পাচারকৃত গাছ স্থানীয় কালডেবা ‘স’ মিলে চিড়াইয়ের সময় এলাকাবাসী হাতেনাতে আটক করে। পরে নানা প্রক্রিয়ায় ম্যানেজ করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও পাচারের বিষয়টি জনসমক্ষে চলে আসে ব্যাপক ভাবে। এ ধরনের  অনিয়ম অহরহ ঘটলেও  অতীতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জোড়ালো ভাবে খতিয়ে দেখা কিংবা অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কোন তথ্য জানাতে পারেননি কেউ। সংবাদ কর্মীদের বলা হতো গবেষণার স্বার্থে কিছু গাছ অপসারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্লকে  আরও কিছু কেটে গাছের ঘনত্ব হালকা করা দরকার । এ কূটকৌশল দীর্ঘ দিনের । কাগজে-কলমে ঠিকঠাক রাখতে নামকাওয়াস্তে কমিটি করে ওই সময় নিজেদের মধ্যেই ভাগাভাগি হতো এগুলো। এ নিয়ে কেউ কখনো উচ্চবাচ্য করাতো দূরের কথা, মুখ ফসকেও বের করেননি ভেতরের কোন খবর। পাছে থাকে, চাকুরি খোয়ানোর ভয়।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়াঞ্চল কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের টাওয়ার টিলা ব্লকে কফি বাগান সংলগ্ন অংশে ৭ টি, আনসার ক্যাম্পের পাশে ১টি এবং অফিস টিলায় ৩/৪টি গাছ কাটা হয়েছে। পাচারের সাক্ষী কাটা গাছের গোড়া দাঁড়িয়ে আছে ব্লক গুলোয় । আবার কোথাও গোড়া ওপরে পাচার চিহ্ন মুছে ফেলার প্রাণান্ত চেষ্টা দৃশ্যমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (প্রশাসন) ড.এস এম ফয়সল সংবাদ মাধ্যম কে জানান, সম্প্রতি গাছ কাটার তিনটি ঘটনার সময়ই তিনি বাইরে প্রশিক্ষণে ছিলেন। খবর পেয়েই গঠন করে দিয়েছেন ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। বিষয়টি এখন তদন্তনাধীন। এর বাইরে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটির প্রধান ড.আবদুস সালাম এই প্রতিবেদককে বলেন, সর্বশেষ ১১,১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারী টাওয়ার টিলা ব্লকে বিশালাকৃতির ৭টি কড়ই গাছ নিধন করে ‘স’ মিলে নিয়ে গেলে এলাকাবাসী আটক করে। ৫০/৬০ বছরের পুরনো গাছগুলোয় ২/৩শ ঘনফুট কাঠ হওয়ার কথা। নানামুখী দেন-দরবারের পর মোটা অঙ্কের টাকায় গাছগুলো বিক্রির খবর পাওয়া যায়। ফার্ম তত্ত্বাবধায়ক উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো.এমদাদুল হক গাছ কাটা থেকে বিক্রি পর্যন্ত জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ।
খাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গাছ পাচারের অভিযোগ
খাগড়াছড়ির রামগড় পাহাড়াঞ্চল কৃৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গাছ পাচারের অভিযোগ

জানা যায়, তিনি উপস্থিত থেকে বাগান শ্রমিক মম মারমা, লক্ষ্মী ত্রিপুরা ও ঊষা মারমাকে দিয়ে গাছ কেটে বাইরে নিয়ে যান। প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ড.আবদুস সালাম আরও বলেন, ইতিপূর্বেও মাতৃগাছ রক্ষার নামে অফিস টিলায় অত্যন্ত নির্দয় ভাবে বড় বড় প্রাচীন গাছ সাবাড় করা হয়েছে। গাছ কাটার সবকটি ঘটনাই আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত ফার্ম তত্ত্বাবধায়কের সম্পৃক্ততাই পাওয়া গেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। অবশ্য ইতিমধ্যে সন্দেহ ভাজনদের কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  (বারি’র) ডিজি বরাবর লিখিত ভাবে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

 সদ্য বদলি হওয়া অভিযুক্ত ফার্ম তত্ত্বাবধায়ক উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। গাছ পাচারের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসাতে একটি মহল ওঠে পড়ে লেগেছে। অপরদিকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ড. আবদুস সালাম ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২জন সদস্য সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, ফার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরাসরি কাঠ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অস্বীকারের সুযোগ নেই। ফার্ম শ্রমিক সংগঠন সভাপতি আবুল হাসেমসহ অন্য শ্রমিকরাও তদন্ত কমিটির বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
আবুল হাসেম এই প্রতিনিধিকে বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন ফার্ম তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশেই গাছ কেটে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আনসার ক্যাম্পের পাশে যে গাছটি কাটা হয়,এটি আটক করার দাবি করেন তিনি। রামগড় বনবিভাগের স্টেশন কর্মকর্তা মো.ইয়াহিয়ার ভাষ্যমতে, বৈধভাবে গাছ কাটার পূর্বে বনবিভাগের অনুমতি নিতে হয়। এখানে নিয়ম মানা হয়নি।
   বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র (বারি) মহাপরিচালক ড.মো.নাজিরুল ইসলাম  মুঠোফোনে অভিযোগ পত্র পাওয়ার বিষয়টি এই প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রামগড় কার্যালয়ে ঢাকা বারি থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হবে। গাছ পাচারে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক’র নাম ওঠায় তাকে অন্যত্র বদলির বিষয়টি প্রকারান্তরে আভাস দেন তিনি।
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.