খোশগল্পের আড়ালে চুরি চক্রের ৯ মহিলা সদস্য গ্রেপ্তার

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকা হতে নির্মানাধীণ ভবনের নির্মাণসামগ্রী চোর চক্রের ৯ মহিলা সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এয়াকুব নগরে নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

জানা গেছে, আসামীরা সকলেই একটি সংঘবদ্ধ নারী চোর চক্র। নির্মণাধীন বিল্ডিং এর কর্মরতদের সাথে খোশগল্পের আড়ালে চুরি করা তাদের পেশা। তারা ৯/১০ জনের নারী চোর দলের একটি টিম। তারা যেখানে যায় সেখানে আগে থেকে রেকি করে চুরি কিভাবে করা যায়। তারা সকলেই নির্মানাধীন বিল্ডিং টার্গেট করে। বিল্ডিংয়ের ভিতর কোথায় কি আছে সেটা আগে থেকে দেখে আসে।

তারা একটি বিল্ডিংয়ে ওঠার সময় কেউ যদি দাড় করায় তাহলে তাকে টাইলসের কাজ করার জন্য আসছে বলে জানায়। সে মোতাবেক কোন মিস্ত্রি যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে তারা একই উত্তর দেয় যাতে কারো কোন সন্দেহ না হয়। তাদের মধ্যে একজন সিড়ির নিচে থেকে পানের বাটা নিয়ে বসে থাকে এবং পান খাচ্ছে ও কিছু কাজ করার জন্য বসেছে এরকম ভাব নিয়ে থাকে আর অপরাপর আসামীরা সকলেই ওপরে উঠে যায় মূল্যবার সামগ্রী চুরি করার জন্য।

কেউ যদি সিড়ি দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করে তাহলে তাকে দাড় করিয়ে খোশগল্প করতে থাকে যাতে উক্ত ব্যক্তি সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে না পারে। এর ফাকে ওপরে উঠা মহিলা চোর দলের সদস্যরা ২য় তলায় ওঠে সেখানে কি কি জিনিস আছে সেটা সাথে সাথে চেক করে তাৎক্ষনিক পরিকল্পনা নিয়ে কিভাবে চুরি করে নিয়ে যাবে।

একপর্যায়ে তারা সুযোগ বুঝে বিল্ডিংয়ের তার (ক্যাবল), পাইপ ফিটিংসের মালামালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কৌশলে শাড়ির আড়ালে চুরি করে নিয়ে যায়। সুযোগ বুঝে চুরি শেষে তারা বিল্ডিং থেকে নেমে চলে যায়। এভাবে তারা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে আসছিল।

ভবনের অংশীদার এনামুল হক প্রকাশ এনাম (৩৮) জানান, একদিন আগে ভবনের সিকিউরিটি মো. সোহেল মালামাল খোয়া যাওয়ার কথা জানান। এরপর তাকেসহ ভবনে কর্মরত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন সিকিউরিটি বলেন, ভবনে টাইলসের কাজ করতে কিছু মহিলা আসছিল। ২ দিন তারা এসে সবার সাথে খোশগল্পে মেতে থাকে। তিনি আরো জানান, তিনি কেউকে টাইলসের কাজ দেননি। তার সন্দেহ হলে পরে ও মহিলারা আসলে তৎক্ষনাত তাকে জানানোর জন্য বলে যান।

গতকাল ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার তারিখ বেলা অনুমান সাড়ে ১২টার সময় উক্ত মহিলারা পূনরায় নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে এসে তারা টাইলস এর কাজ করার জন্য দেখতে এসেছে জানিয়ে বিল্ডিং এর নির্মান কাজের জন্য নিয়োজিত ব্যক্তিদের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বসে খোশ গল্প করা আরম্ভ করে।

নিরাপত্তাকর্মী মো: সোহেল একথা জনালে তিনি কৌশলে তাদের আটকে রাখার কথা বলে কোতোয়ালী থানাকে খবর দেন।  তাৎক্ষনিক নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে চলে আসেন।  ধৃত মহিলাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে তারের ক্যাবল চুরির কথা।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গত ৯ ও ১৩ এপ্রিল দুইদিনে ৩৩ বান্ডিল তারের বান্ডিল চুরি করে নিয়ে যায়। জানা গেছে, ৩৩ বান্ডিল তারের ক্যাবলের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।

কোতোয়ালী থানার এস আই সুকান্ত চৌধুরী জনান, আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং নির্মানাধীন বিল্ডিং হতে উক্ত তার (ক্যাবল) চুরি করার কথা স্বীকার করলেও চোরাই মালামাল সংক্রান্তে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের পরিচয়ঃ রোকসানা বেগম (২৮), পিতা-মৃত কাশেম, স্বামী-মো: সমির, সাং-রেলবিট, এর পাশে, ভাসমান, থানা-আকবরশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম, হেলেনা বেগম (২৮), পিতা- মৃত ময়না, স্বামী-মো: লিটন, মাতা- মৃত মিচিরণ, সাং-খাইসাদি, আব্বাস আলীর বাড়ী ( থানার পাশে), থানা-কিশোরগঞ্জ সদর, জেলা-কিশোরগঞ্জ, বর্তমানে-আকবরশাহ কাঁচা বাজারের উত্তর পাশে, জসিমের কলোনী, থানা-আকরবশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম, শাহিনুর বেগম (২৫), পিতা-মৃত আশরাফ আলী সিকদার, মাতা-মৃত জাহানারা বোগম, স্বামী- মো: বাবুল মোল্লা,  সাং-কাতিক দে আশরাফ আলী সিকদার এর বাড়ী, থানা-কাঠাখালী, জেলা- বাগেরহাট, বর্তমানে-ফিরোজশাহ কলোনী, মিনারের গোড়া, হারুন ইনচার্জ এর ভাড়াঘর, থানা-আকবরশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম, পারভিন আক্তার (২৬), পিতা- মো: করিম, মাতা- মো: রিয়াজ, সাং-দক্ষিন হাতিয়া, (মতিন সিকদারের বাড়ী), থানা-হাতিয়া, জেলা-নোয়াখালী, বর্তমানে- ছোট পোল, মইন্যাপাড়া, দুলালের কলোনী, থানা-হালিশহর, জেলা-চট্টগ্রাম, বিবি ফাতেমা (৩০), পিতা- বেলায়েত হোসেন, মাতা- চাঁন বেগম, স্বামী- মো: মোহর আলী, সাং-হাসানহাট, শরীফপুর, রেল বিটের পাশে, থানা-সুধারাম, জেলা-নোয়াখালী, বর্তমানে-ছোটপুল, জাকের কলোনী, থানা-হালিশহর, জেলা-চট্টগ্রাম, রেনু বেগম (৩০), পিতা-মৃত মো: শফি, মাতা- মৃত রহিমা খাতুন, স্বামী- মো: হাসান, সাং-বাস্তাপুর (মুরশিদ কোম্পানীর বাড়ী), থানা-লক্ষীপুর সদর, জেলা-লক্ষীপুর, বর্তমানে- আকবরশাহ, কাঁচা বাজারের উত্তর পাশে, জসিমের কলোনী, থানা-আকবরশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম, মরিয়ম বেগম (৪৫), পিতা-আজাহার বেদা, স্বামী- আমির হোসেন, মাতা- সালেহা বেগম, সাং- চর বোরহান, হাওলাদার বাড়ী, থানা-দমমিনা, জেলা- পটুয়াখালী, বর্তমানে- বড়পোল এর পাশে মইন্যাপাড়া, সেলিমের কলোনী, থানা-হালিশহর, জেলা-চট্টগ্রাম, বিবি রহিমা (৩৫), পিতা-সুলতান আহম্মদ, স্বামী-নজরুল ইসলাম, সাং-চর জ্যোতি (শামসুদ্দিন হাওলাদারের বাড়ী) থানা-মনপুরা, জেলা- ভোলা, বর্তমানে- আকবরশাহ,  চট্টগ্রাম, পারভিন বেগম (২৮), পিতা-মো: রফিক, স্বামী-মো: রাশেদ, সাং-কানকির চর, থানা-চর জব্বার, জেলা- নোয়াখালী, বর্তমানে- আকবরশাহ, কাঁচা বাজারের উত্তর পাশে জসিমের কলোনী চট্টগ্রাম।

সিটি নিউজ/ডিটি

 

 

 

 

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.