করোনাকালে নিম্নআয়ের সীমিত সঞ্চয় শেষ এখন ঋণে জর্জরিত: পিপিআরসি ও বিআইজিডি

দেশে দরিদ্র বেড়েছে আড়াই কোটি মানুষ 

0

সিটি নিউজ : চলমান করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশে সব শ্রেণি পেশার মানুষের জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে।নিম্নআয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। তাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। কাজ হারিয়ে সীমিত সঞ্চয় শেষ তারা এখন ঋণে জর্জরিত। প্রতিনিয়ত তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে জীবনের সঙ্গে। এ বিষয়ে সম্প্রতি শেষ হওয়া এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর তথ্য- করোনার প্রভাবে দেশে এবার আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে নতুন করে। এদের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীই শহরে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত।

বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা বলছে, করোনার কারণে গত এক বছরে মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কাজ হারিয়ে দরিদ্রের মাঝে নিপতিত হয়েছে। কর্মহীন হয়েছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক, নিরাপত্তা প্রহরী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, পরিবহন ও রেস্তোরাঁ শ্রমিক, বেসরকারি স্কুলশিক্ষক ও নির্দিষ্ট বেতনে কর্মরত মানুষ।করোনায় আরো প্রায় চার কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) যৌথভাবে সমীক্ষাটি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ২০ এপ্রিল সকাল ১১ টায় এক ওয়েবিনারে সমীক্ষার বিস্তারিত তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।

তারা জানান, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ লোক।২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত হওয়া এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এ সংখ্যাটা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। তার মানে ‘পভার্টি ডায়নামিকস অ্যান্ড হাউসহোল্ড রিয়েলিটিস’ শীর্ষক সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ লোক এখন দরিদ্র। যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন, কিন্তু যে কোনো অভিঘাতে সীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাদেরই মূলত নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে সমীক্ষায়। তবে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে ৪৪ শতাংশ। জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।

ওয়েবিনারে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘কোভিডের আঘাত সব জায়গায় একইভাবে অনুভূত হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে তার প্রভাব কমই দেখা গেছে। সে কারণে শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত।’ জরিপের তথ্য থেকে তিনি জানান, গত বছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়, যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনো ফেরেনি। প্রাক-কোভিড সময়ের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীর আয় কমলেও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় গত জুনের তুলনায় এ বছরের মার্চে হয়েছে দ্বিগুণ।

ড.হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমেছে আশ্চর্যজনকভাবে। অরক্ষিত অদরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণির মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একই সঙ্গে সব শ্রেণিতেই ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে দেশের কৃষি খাত।’ তিনি বলেন, ‘কেবল কৃষক ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী বাকি সব পেশার মানুষের আয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কমেছে। কিন্তু পুনরুদ্ধারের কথা যখন বলা হয়, তখন মূলত সামষ্টিক অর্থনীতির বড় বড় খাত, যেমন তৈরি পোশাক খাতের কথাই উল্লেখ করা হয়। জাতীয় পরিসরে কৃষির কথা সেভাবে উচ্চারিত হয় না।’

বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, ‘এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম, এই করোনা পরিস্থিতিতে তারা শ্রমবাজার থেকে আরও দূরে ছিটকে পড়তে পারেন। পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরবস্থা আরও বাড়ছে।’

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.