হেফাজত ও খেলাফত মজলিস নিষিদ্ধের দাবি ইসলামী ফ্রন্টের

0

সিটি নিউজ: ইসলামের নামে নৈরাজ্যের প্রতিবাদ ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক-ধর্মীয়ক্ষেত্রে চলমান অস্থিরতা নিরসনকল্পে ৭ দফা দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে দলের মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদ।

ইসলামী ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বলেন-যারা এদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয় তারাই আজ ইসলামের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। দেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে রাজাকার, আল বদর, আশ শামস বাহিনীর বিচার হলেও একাত্তরে একই রকম যুদ্ধাপরাধে যুক্ত ওহাবী মতাদর্শী কওমি মুজাহিদ বাহিনীর বিচার না হওয়ায় তারা আজ এদেশে মধ্যযুগীয় কায়দায় তালেবানী মডেলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বলেন- নৈতিক পদস্থলন ও জঙ্গিবাদি কর্মকান্ডে যুক্ত হেফাজতকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কমিটি বিলুপ্তি বা নতুন কমিটি গঠন করা ইতোপূর্বে সংগঠিত জঙ্গিবাদি অপরাধকে মার্জনা করে না। সম্প্রতি পুলিশ প্রশাসনের প্রেস ব্রিফিংয়ে হেফাজতের রাজনৈতিক সংগঠন খেলাফত মজলিসের সাথে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততার কথা ওঠে এসেছে। এ তথ্য যদি সত্য হয় তবে খেলাফত মজলিসের নিবন্ধন বাতিলসহ জঙ্গি সম্পৃক্ততার কারণে এদলটিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন-এদেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে অনলাইনের সস্তা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তারা ফায়দা হাসিল করতে চায়। ১৯৭১ সাল হতে আজ পর্যন্ত কওমিদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-তারা সুযোগ পেলেই নিজেদের খোলস খুলে জঙ্গিবাদি রুপে আবির্ভূত হয়েছে। ২০১৩ সাল ও ২০২১ সালে দেশের জনগণ তাদের স্বরুপ চিনেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখা এ জঙ্গিগোষ্ঠী সরাসরি দেশের সার্বভৌমত্বের বিরোধি দেশি-বিদেশী শক্তির মদদে দেশে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।

তারা একের পর এক ধ্বংস করেছে দেশের সম্পদ -গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ইসলামের নামে ক্ষতি করেছে দেশের সম্পদ। জঙ্গিবাদে যুক্ত, ইসলামের নামে প্রতারণার অভিযোগে হেফাজতকে কঠোর হস্তে দমন ও তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করা সহ নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে খোলস পাল্টিয়ে তারা নতুনভাবে জঙ্গিবাদি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন-দেশের এমপিওভুক্ত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব মাদ্রাসা সুচারুরুপে পরিচালনার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা নীতিমালা তৈরি করা হলেও কওমি মাদ্রাসা গুলো সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা আলোকে পরিচালিত হচ্ছেনা। তারা সরকারি স্বীকৃতি ভোগ করে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে কাজ করছে। অতিমাত্রায় সরকারি সুবিধা গ্রহণের ফলে তারা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণে উৎসাহী হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাদেরকে আলিয়া নেসাবের মত একই সিলেবাসভুক্ত করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত করতে হবে। একমুখী মাদ্রাসা শিক্ষা পিছিয়ে পড়া কওমী শিক্ষার্থীদের সাধারণ ¯্রােতে মিলিত করবে।  শিক্ষারও মানোন্নয়ন হবে। সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসা বোর্ড হতে তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসাগুলোতে রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে যে ঘোষণা এসেছে তা অনেকটা জাতির সাথে প্রতারণার শামিল।

একইসাথে, কওমী-হেফাজতি জঙ্গিদের মদদদাতা যে দলেরই নেতাকর্মী বা সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা হোক না কেন, সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন-করোনাকালেও শিশু-নারী নির্যাতনের মাত্রা ক্রমশ: বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি রিসোর্ট কান্ডের পর গ্রেফতার হওয়া মামুনুলের নারী নিগ্রহ-অনাচার এবং বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েমের বিরুদ্ধে নারী আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ ওঠেছে। নিপীড়ক, ধর্ষক, হত্যাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয়ের উর্দ্ধে ওঠে দ্রুত আইনে সর্বোচ্চ সাজার ব্যবস্থা করলে দেশে এ ধরনের অপরাধের মাত্রা অনেকাংশ কমে যেতে পারে।

সংবাদ সম্মলনে উপস্থিত ছিলেন- আল্লামা এম এ মান্নান, আল্লামা সৈয়দ মছিহুদ্দৌলা, অধ্যক্ষ আল্লামা আহমদ হোসাইন আল কাদেরী, অধ্যক্ষ শাহ খলিলুর রহমান নিজামী, শাইখ আবু সুফিয়ান খান আবেদী, অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদ, রেজাউল করিম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার নুর হোসাইন, মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, ওবাইদুল মুস্তফা কদমরসুলী, আব্দুন নবী আল কাদেরী, মাওলানা ফেরদৌসুল আলম খান, মাওলানা আবদুল খালেক প্রমূখ।

সিটি নিউজ/এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.