উজানটিয়া ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ দেয়ার অভিযোগ

0

বশির আলমামুন: কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউপি সচিব মোজাহের আহমদের বিরুদ্ধে এক রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় পেকুয়া সদর ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য শাহনেওয়াজ জড়িত বলে তথ্যে ওঠে এসেছে। এ ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন এক ইউপি সচিব ও ইউপি সদস্য।

রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেয়ায় পেকুয়া উপজেলা সহ পুরো জেলা জুড়ে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ইউপি সচিব মোজাহের আহমদ ইতিপূর্বে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার (৩০ মে) দুপুরে পেকুয়া উপজেলার সদর চৌমুহুনী এলাকার স্থানীয় কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা মো: আলী নামের এক রোহিঙ্গাকে আটক করে পেকুয়া থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ্দ করেন। এসময় রোহিঙ্গা মো: আলীর কাছে থেকে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব মোখতার আহমদ চৌধুরী ও সাবেক ইউপি সচিব মো: মোজাহের আহমদ এর স্বাক্ষরিত একটি জন্ম নিবন্ধন উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ ওই রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সন্ধ্যার দিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়াড়র ইউপি সদস্য মো: শাহনেওয়াজ আজাদের জিম্মায় ছেড়ে দেন।

এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) কানন সরকার বলেন, আটক ব্যক্তির নামে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ রয়েছে। তাই তাকে স্থানীয় ইউপি সদস্যর জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিধিদের প্রমাণ করতে হবে ওই নাগরিক রোহিঙ্গা কিনা। রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন প্রদানের বিষয়টি গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চকরিয়া উপজেলা লক্ষারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইউপি সচিব মোজাহের আহমদ রোহিঙ্গা নাগরিক মো: আলীকে জন্ম সনদ প্রদানের সময় পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদে সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বর্তমানে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সচিব পদে কর্মরত রয়েছে। পেকুয়া সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোখতার আহমদ চৌধুরী ও ইউপি সচিব মোজাহের আহমদ স্বাক্ষরিত রোহিঙ্গা নাগরিককে দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং জন্ম নিবন্ধন বহিতে ওই রোহিঙ্গার নাম রয়েছে এবং ১৪/০৪/২০০৮ ইংরেজী তারিখ তা নিবন্ধন করা হয়। পরে ০৬/০২/২০০৯ ইংরেজী তারিখ রোহিঙ্গা মো: আলী, জন্ম তারিখ ০১/০১/১৯৭৫ ইংরেজী। পিতা-মৃত সোলতান আহমদ, মাতা-মৃত আছিয়া বেগম, ঠিকানা-মিয়া পাড়া, ৪ নং ওয়ার্ড়, ইউনিয়ন-পেকুয়া, উপজেলা-পেকুয়া, জেলা-কক্সবাজারের স্থায়ী নাগরিক হিসেবে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। যার জন্ম নিবন্ধন নং ১৯৭৫২২১৫৬৮৩০৪৪৭২৮ অনলাইনেও রোহিঙ্গার নামে জন্ম নিবন্ধন রেকর্ড রয়েছে।

এ প্রতিবেদক পেকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব মোজাহের আহমদ কর্তৃক ওই রোহিঙ্গাকে দেওয়া জন্মনিবন্ধন ঠিকানায় ৩১ মে সকালে ও বিকালে দুই দফায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা হয়। পেকুয়া মিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা কেউ ওই ব্যক্তিতে চিনেন না। মো: আলী নামের ওই রোহিঙ্গা মিয়া পাড়ার বাসিন্দা নয় বলে স্থানীয়রা জানান।

মিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো: জয়নাল আবেদীন জানান, সচিব মোজাহের আহমদ পেকুয়া ইউনিয়ন পরিষদে থাকাকালীন সময়ে হাজারো নিরীহ মানুষের কাছ থেকে নানা উপায়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। রোহিঙ্গাকে জন্ম সনদ দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ইউপি সচিব মোজাহের আহমদের শাস্তিসহ গ্রেফতার দাবি করেছেন।

রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানের বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সচিব মোজাহের আহমদ বলেন, ইউপি সদস্যের সুপারিশের ভিত্তিতে সেসময় মো: আলীকে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছিল। সে রোহিঙ্গা কিনা সেটা আমি জানিনা। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বার যাকে বলে তাকেই সেসময় জন্ম সনদ দেওয়া হতো।

ইউপি সদস্য শাহনেওয়াজ আজাদ বলেন, মোঃ আলী যে রোহিঙ্গা তা সঠিক। যেই সময় তিনি জন্ম নিবন্ধন করেন বর্তমান সময়ের মত সেই সময় তেমন কড়াকড়ি ছিলনা। আর রোহিঙ্গার জন্ম নিবন্ধন করার বিষয়টি গতকালকে থানা থেকে অবগত হয়েছি। এখানে আমি জড়িত নয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কক্সবাজার জেলার উপ-পরিচালক শ্রাবস্তি রায় বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিধিদের প্রমাণ করতে হবে ওই নাগরিক রোহিঙ্গা কিনা। রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন প্রদানের বিষয়টি গুরুতর অপরাধ। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিটি নিউজ/এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.