মোজাম্মেল হক মানুষের মণিকোঠায় বিনম্র শ্রদ্ধায়

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ আজকের সূর্যোদয়ের প্রধান সম্পাদক শ্রদ্ধাভাজন খোন্দকার মোজাম্মেল হকের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী ২৮ শে জুন। গত বছরের এমনি দিনে মহামারী করোণায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। হঠাৎ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫ দিনেই শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করেন। সব কিছু ছিল গোছানো-সাজানো। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আমাদের ছেড়ে চেল যান। একাত্তরের এই বীর সেনানী ছিলেন সাহসী একজন কলম যোদ্ধা। দীর্ঘ ত্রিশ বছর যাবত উনার সহকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলাম। বন্ধুসূলভ আচরণ, ধৈর্য ও স্নেহ মমতার এক জলন্ত প্রতীক ছিলেন আমার সম্পাদক। সততা, নিষ্ঠা, নীতি ও আদর্শকে কখনো জলাঞ্জলী দেননি। কোন প্রলোভন তাকে প্রভাবিত করতে পারেননি। সাহসী সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হক কোন দল বা ব্যক্তির তাবেদারী করেননি। আজকের সূর্যোদয়ের প্রকাশনার প্রথম থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত আমি চট্টগ্রামে থাকলেও ছিলাম ছায়াসঙ্গী। বেশ কয়েকবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে আমি তার সঙ্গী হয়েছি। সাংবাদিকতা জীবনে কোন লোভ-লালসা ছিলনা। অমায়িক ব্যবহারে খুব অল্প সময়ে মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন। আমাকে নিউজের কোন এসাইন্টমেন্ট কখনো দেননি। সংবাদের বিষয় নির্বাচন ও পরিবেশনে কোন কাঁটাছেড়া ছিলনা।শিরোনামও তিনি পরিবর্তন করতেন না। আমার লেখার স্বাধীনতা ছিল। আমর এক রিপোর্টে একবার মামলা হলে তিনিও আসামী হিসেবে ২বার চট্টগ্রাম এসেছেন। চট্টগ্রাম থেকে বিদায়ের সময় বললাম, আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হল। তিনি বললেন, না, না, সাংবাদিকতা করলে এটা মেনে নিতে হবে। মরহুম আকতারুজ্জামান চৌধুরী ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে তার ছিল আন্তরিক সম্পর্ক। একবার ইউসিবিএল ব্যাংকের ব্যাপারে বাংলাদেশের সকল পত্র পত্রিকা বাবুর বিরুদ্ধে নিউজ করল, আমি করলাম না। আমি বাবুর পক্ষে রিপোর্ট পাঠালাম ঢাকায়। প্রধান সম্পাদক ফোন করলেন, শুধু বললেন, জুবায়ের, সাগরের স্রোতের বিপরীতে নৌকা কি চলে? আমি বললাম চলে, যদি আমার বৈঠা ঠিক থাকে। তিনি সেই রিপোর্ট ছাপিয়ে দিলেন। পরবর্তীতে আমার এই রিপোর্ট আদালতে বাবুভাই জামিনের সমর্থনে জমা দেন। জামিন হয়ে যায় বাবু ভাইয়ের। খোন্দকার মোজাম্মেল হক ও আমাকে বাবু ভাই অভিনন্দন জানান। মহিউদ্দিন চৌধুরী একদিন আমার সামনে প্রধান সম্পাদককে ফোন করে রসিকতা করে বললেন, “অবা গেদুচাচা অনে চাঁটগা আইয়ুন, অনারে মেজবাইন্না খানা ও শুটকি ভর্তা খাওয়াইয়ুম”। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সাথে ছিল আন্তরিক সম্পর্ক তবে পত্রিকাকে কখনো কোন রাজনৈতিক দলের মুখপত্র করেননি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে প্রিয় সম্পাদককে খুব পছন্দ করতেন ও খোঁজ নিতেন। সরকার বা কারো কাছে তার কিছু চাওয়া পাওয়া ছিলনা। বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হক অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেননি। তার ক্ষুরধার লেখনিতে বিএনপি জামাত জোট সরকারের ভীত বার বার নড়ে চড়ে উঠেছিল।


গেদু চাচা চিঠির মাধ্যমে সম্পাদক মহোদয় সাধারণ মানুষের খুব কাছে যেতে সক্ষম হয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ, সুবিধা-অসুবিধা ও ফরিয়াদ প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বরাবরে পৌঁছাতে পারতেন গেদুচাচার চিঠির মাধ্যমে। এরশাদ আমলে একবার ডিজিএফআই সম্পাদক মহোদয়কে বললেন, আপনি কি পাইছেন, রাষ্ট্রপতি কি আপনার চাচা। তিনি বললেন, রাষ্ট্রপতি যদি করিম-রহিমের চাচা হন তবে আমারও চাচা।
সারাদেশের মতো আজকের সূর্যোদয় মধ্যপ্রাচ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে তিনি সফরও করেছেন। যেখানে গিয়েছেন সেখানে প্রবাসীদের আতিতেয়তা তাকে মুগ্ধ করেছে। আজকের সূর্যোদয়ে প্রবাসীদের নিউজকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন সব সময়। প্রবীন ও সাহসী এই সাংবাদিকের অধীনে কর্মরত অবস্থায় ছিলাম এক বট বৃক্ষের ছায়াতে। যে কোন বিপদে তিনি আমার পাশে থাকতেন। আমার প্রতি ছিল বিশ্বাস ও আস্থা। সার্কুলেশনের টাকা পাঠা্তাম। বিল থাকত আমার কাছে। কাগজে কলমে কোন হিসাব নিতেন না। বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মোজাম্মেল হকের ১ম মৃত্যু বার্ষিকীতে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। আামি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
উল্লেখ,খোন্দকার মোজাম্মেল হকে নিউজপোর্টাল, সিটি নিউজ বিডি ডট কমের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.