আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই পাশে! মুখাগ্নি করলেন মুসলিম যুবক

মধ্যরাতে শ্মশানে কল্পনা কর্মকার ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপধ্যায় লেখেছিলেন ‘মরার আবার জাত কী’। কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রফুল্ল কর্মকার নামে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সে কথা মনে করিয়ে দিলেন, সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকেরা।

কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের হরিতলা এলাকার বাসিন্দা সত্তর বছর বয়সী প্রফুল্ল কর্মকার গত শনিবার রাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তার স্ত্রী কল্পনা কর্মকার মরদেহটি নিজ বাড়িতে নিতে চাইলেও বাড়ির অন্যরা করোনা আক্রান্ত থাকায় আপত্তি করেন। পরে ওইরাতেই মরদেহটি এম্বুলেন্সে করে মিরপুর উপজেলার পৌর শ্মশানে নেওয়া হয়।

মধ্যরাতে শ্মশানে কল্পনা কর্মকার ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। শ্মশানের গেটে তালা ঝুলছিল এবং বৃষ্টিও হচ্ছিল। এম্বুলেন্স থেকে দু’জন কর্মচারী শ্মশানের এক পাশে মরদেহটি নামিয়ে দিয়ে ফিরে যান। এসময় কল্পনা কর্মকার শ্মশান কমিটির সদস্যদের তার স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি জানান। কিন্তু কেউ তাতে সাড়া দেননি।

প্রফুল্ল কর্মকারের মৃত্যুর পর স্ত্রী কল্পনা তার পরিবারকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু দুই ছেলে, ছেলে বউ ও নাতি করোনায় আক্রান্ত থাকায় তারাও শ্মশানে আসতে পারেনি।

গভীর রাতে সবাই ফেরত গেলেও মরদেহটি ফেলে যেতে পারেননি প্রফুল্লের স্ত্রী কল্পনা রানী কর্মকার। রাতে বৃষ্টির গতি বাড়লে তিনি নিজেই মরদেহ সরিয়ে শ্মশানের পাশে গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নেন। সেখানে একাই পার করে দেন পুরো রাত। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষার পরও মরদেহ সৎকারে শ্মশান কমিটি বা নিজ আত্মীয়-স্বজনের কেউ আসেনি।

মিরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রফুল্ল কর্মকারের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত। তাই তারা মরদেহ সৎকারে আসতে পারেনি। তবে, হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মরদেহটির সৎকারে এগিয়ে আসেনি।

পরে গতকাল রবিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে সৎকারের ব্যবস্থা করতে বলেন। সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম যুবক মরদেহের মুখাগ্নি করে শ্মশানের পাশে সমাহিত করেন।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জানার পরপরই পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে অবহিত করা হয়। তারা স্থানীয়দের দিয়ে সমাহিত করার কাজ সম্পন্ন করেছেন।

প্রফুল্ল কর্মকারের বড় ছেলে আনন্দ কর্মকার জানান, তারা সবাই করোনায় আক্রান্ত। তাই শ্মশানে যেতে পারেননি। তার মা সারারাত বাবার মরদেহের সঙ্গে ছিলেন।

শ্মশান কমিটির সভাপতি আনন্দ দেবনাথ বলেন, ‘ওই পরিবারের সবাই করোনায় আক্রান্ত। এমনকি মৃতের স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত। এজন্য আমার কেউ সেখানে যেতে পারিনি। তবে সকালে তার ছেলে আমার কাছ থেকে শ্মশানের চাবি নিয়ে গেছে। এরপর আর কিছু আমি জানি না।’

সিটি নিউজ/এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.