জমিয়াতুল ফালাহ’য় আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের ৬ষ্ঠ দিন

0

কারবালা ময়দানে ইয়াজিদি বর্বরতা ও নৃশংসতার
কথা জেনে মানবতার অন্তরে রক্তক্ষরণ ঘটছে

চট্টগ্রাম অফিস  :      জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে ১০ দিনব্যাপী ৩০তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের গতকাল (মঙ্গলবার) ৬ষ্ঠ দিনে বক্তারা বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম বর্বরতা ও নৃশংসতার নজির সৃষ্টি করেছিল পাষ- ইয়াজিদ। কারবালার ফোরাত নদীর পানি কুকুর বিড়াল পর্যন্ত পান করার সুযোগ পেয়েছিল। অথচ ৩/৪ দিন ধরে ক্ষুধার্র্ত ও পিপাসায় কাতর নবী পরিবারের অবুঝ নিষ্পাপ শিশু আলী আসগর, আলী আকবরসহ আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) সদস্যদেরকে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত রেখেছিল দুরাচারী ইয়াজিদ। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘন্যতম নৃশংসতার দৃষ্টান্ত আরেকটি খুঁজে পাওয়া যায় না। বক্তারা বলেন, ৬১ হিজরিতে দুরাচারী জুলুমবাজ ইয়াজিদের জঘন্যতম বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার কথা জেনে যুগে যুগে আহলে বায়তপ্রেমী মানুষের রক্তক্ষরণ ঘটে। তারা বেদনার অশ্রুতে বুক ভাসিয়ে শ্রদ্ধায়-কৃতজ্ঞতায় আহলে বায়তে রাসূল (দ.)কে স্মরণ করেন।
শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে আহলে বায়তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্মরণে ৬ষ্ঠ দিনের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন চবি রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. আ ন ম মুনির আহমদ চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ও শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্র্ষদের প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব সূফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন জমিয়াতুল ফালাহর খতিব, শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আলকাদেরী (ম.জি.আ)। আলোচক ছিলেন চবি আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাওলানা মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ ও পীরজাদা মাওলানা মুহাম্মদ খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী (ঢাকা)। প্রধান অতিথি আলহাজ্ব সূফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। এখানে ইসলামী দিবস সমূহে আচার উৎসব অনুষ্ঠান বাধাহীনভাবে চলে আসছে। মহররম মাস নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার কথা জেনে আবেগে আপ্লুত হয়। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলামের সঠিক পথে ছিলেন। আর ইয়াজিদ ছিলেন নামধারী মুসলমান। সে নিজ স্বার্থে ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ইসলামের বিকৃতি ঘটিয়ে ইসলামের শান্তির সৌধকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী বলেন, হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) আদর্শের ওপর যারা প্রতিষ্ঠিত তারাই মূলত প্রকৃত মুসলমান। আর যারা আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) শান মর্যাদা অনুধাবনে অক্ষম তারা বড়ই দুর্ভাগা। দুনিয়া আখিরাতে তাদের এ জন্যে কঠিন দুরবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আ ন ম মুনির আহমদ চৌধুরী বলেন, কারবালার ঘটনা যুগে যুগে সত্যানুসন্ধিৎসু মুসলমানদের আদর্শিকভাবে ঘুরে দাঁড়াবার প্রেরণা জোগায়। সত্য প্রতিষ্ঠা, দ্বীন প্রচার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কীভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় বাস্তবে দেখিয়ে গেছেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। আলোচক ড. মাওলানা জাফর উল্লাহ বলেন, ইয়াজিদ মুসলমন নামের কলংক। সে ইসলামী সোনালী যুগের খেলাফত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মনগড়া মতবাদ প্রতিষ্ঠা করে ইসলামের ইনসাফভিত্তিক দর্শনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। আজ যারা ইসলামের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়ে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের গর্জে উঠতে হবে। পীরজাদা মাওলানা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী বলেন, ইসলাম স্বেচ্ছাতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র অনুমোদন দেয় না। অথচ পাপিষ্ট ইয়াজিদ সেদিন আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েনি, সে ইসলামের নামে জুলুমতন্ত্র কায়েম করেছিল। ইয়াজিদকে ও তার দোসর সন্ত্রাসী বোমাবাজদের ঘৃণা করা মুসলমানদের নৈতিক দায়িত্ব।
মাহফিলে অতিথি ছিলেন হাটহাজারী ইমাম শেরে বাংলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন শাহজাদা সৈয়দ আমিনুল হক আলকাদেরী, পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর আলহাজ্ব মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, প্যারামাউন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ডা. আব্দুল করীম। মাহফিলে কোরান মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী (মিশর)। হামদ ও নাতে রাসূল (স.) পরিবেশন করেন পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক নাত খাঁ হাসান বিন খুরশিদ। মাহফিল সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউল হক। মাহফিলে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা, সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল লতিফ, আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, আলহাজ্ব খোরশেদুর রহমান, আলহাজ্ব আবদুল হাই মাসুম, ব্যাংকার হাফেজ মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ, আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবুল মনসুর সিকদার, আলহাজ্ব জাফর আহমদ সওদাগর, আলহাজ্ব সিরাজুল মুস্তাফা, আলহাজ্ব দিলশাদ আহমেদ, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমদ, আলহাজ্ব মাহবুবুল আলম, মওলানা হাফেজ আহমদুল হক, সাংবাদিক আইয়ুব আলী, হাফেজ মাওলানা সৈয়দ জালালুদ্দিন, মাওলানা জিয়াউল হক, হাজী আবুল কালাম, মুহাম্মদ রেজাউল করিম রেজু, অধ্যাপক মাওলানা রেজাউল করিম, মুহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা, হাজী মনির আহমদ, কাজী মুহাম্মদ ইউনুস, আ. ব. ম খোরশিদ আলম খান, এস. এম. ওসমান গণি, আলহাজ্ব এ এম মঈন উদ্দীন চৌধুরী হালিম, কায়েস চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান, সৈয়দ শরফুদ্দীন, তৌহিদুল কাদের প্রমুখ। ওয়েব সাইটে প্রতিদিনের মাহফিল সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। সালাত-সালাম পরিবেশন শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম মিল্লাতের সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর দরবারে মুনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আলকাদেরী (ম.জি.আ.)।
মহিলাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা ঃ গতকাল ৬ মহররম মঙ্গলবার থেকে ১০ মহর্রম শনিবার পর্যন্ত ৫ দিন বড় প্রজেক্টরে মহিলাদের তকরির শোনার জন্য মসজিদ কমপ্লেক্সের নিচ তলায় পর্দাসহকারে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১০দিনব্যাপী এ মাহফিল চলবে ২৪ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত । প্রতিদিনের মাহফিলে সবাইকে অংশগ্রহণের জন্য জমিয়াতুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদের খতিব, শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরস এর সদস্য অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন আলকাদেরী (মজিআ) অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.