গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা ও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

0

সিটি নিউজ ডেস্ক : করোনার সংকটে কর্মহীন ও আয়-রোজগার কমে যাওয়া ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা, সকলশ্রেণীর গণপরিবহনে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও মনিটরিংরের দায়িত্বরত সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

গত ১৫ ও ১৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া গণপরিবহনে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে আজ ১৭ জুলাই শনিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশকালে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দাবী জানানো হয়।

সংগঠনের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উর্ধ্বগতিতে “করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির” সদস্যরা যখন দেশে কারফিউ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঠিক তখনই সরকার মানুষের জীবন-জীবিকা ও ঈদ অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে আজ ১৪ জুলাই মধ্য রাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৮ দিনের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরনের শর্তে ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়া আদায় সাপেক্ষে সকল শ্রেণীর গণপরিবহন চালু করে। এতে যাত্রী, চালক, কন্ডাক্টর ও সহকারি সকলের বাধ্যতামুলক মাস্ক পরিধান করা। অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে সকল শ্রেণীর গণপরিবহন চলাচল করা। গণপরিবহন চালুর আগে এবং শেষ গন্তব্যে পৌছানো পর জীবাণু নাশক ছিটিয়ে জীবাণু মুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলার গণপরিবহন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ সকল শর্তাবলীর মধ্যে শুধুমাত্র মাস্ক পরিধানের বিষয়টি অধিকাংশ পরিবহনে অনুসরণ করলেও অন্যান্য শর্তাবলী মানা হচ্ছে না।

বেশিরভাগ পরিবহনে আসনভর্তি করে যাত্রী বোঝাইয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকার গণপরিবহনের ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা দিলেও কোন কোন গনপরিবহনে ৩০০ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

পর্যবেক্ষণকালে দেখা যায়, রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে মিরপুর-১০ থেকে নীলক্ষেত সরকার নির্ধারিত বাস ভাড়া ১৫ টাকা। করোনা সংকটে ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়ায় এই পথে ২৬ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো। গত দুইদিন এই পথে ৪০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে। একই পথে সিএনজি অটোরিকশায় স্বাভাবিক সময়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হলেও গত দুইদিন যাবত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে।

রাজধানীর গাবতলী মাজার রোড থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত সিটি সার্ভিসের ৮ নম্বর বাসে নিয়মিত ১৫ টাকা বাস ভাড়া আদায় করা হয়। ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়ায় ২৪ টাকা আদায়ের কথা থাকলেও গত দুইদিন ধরে এই পথে ৩০ টাকা হাওে ভাড়া আদায় করা হয়েছে। বিআরটিসি বাসে কাকলী থেকে বাংলা মোটর নিয়মিত ১২ টাকা ভাড়া আদায়ের স্থলে ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়ায় ২০ টাকা আদায়ের কথা থাকলেও এই পথে ৩০ টাকা ভাড়া আদায় হয়েছে এবং ফার্মগেট থেকে মতিঝিল, ফার্মগেট থেকে গুলিস্থান নিয়মিত ১০ টাকার ভাড়া আদায়ের স্থলে ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়ায় ১৬ টাকা আদায়ের কথা হলেও এই পথে গত দুইদিনে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। মতিঝিল থেকে মিরপুর-১০, গুলিস্থান থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত ২৫ টাকা নিয়মিত ভাড়া আদায়ের স্থলে এই রুটের অধিকাংশ বাসে ৬০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া স্বাভাবিক সময়ে ৮০ টাকার বাস ভাড়া গত দুইদিন ২০০ টাকা হারে আদায় হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে ৩৫ টাকা বাস ভাড়া গত দুইদিনের বেলায় ৭০ টাকা এবং সন্ধ্যার পর ১০০ টাকা পর্যন্ত আদায় হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর শাহ আমানত সেতু থেকে পটিয়া স্বাভাবিক সময়ে ২৫ টাকার বাস ভাড়া গত দুইদিন দিনের বেলায় ৫০ টাকা সন্ধ্যার পর থেকে ১০০ টাকা আদায় হয়েছে। এই পথে শাহ আমানত সেতু থেকে চকরিয়া স্বাভাবিক সময়ে ১০০ টাকার বাস ভাড়া গত দুইদিন যাবত ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা হারে আদায় হয়েছে। এসব পথে দ্বিগুণ যাত্রী বোঝায় করে যাতায়াত করেছে প্রতিটি বাস-মিনিবাস।

এদিকে দুরপাল্লার রুট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ঢাকা আশুলিয়া বাইপাইল মোড় থেকে রংপুর নিয়মিত পথে ৬০০ টাকার বাস ভাড়া গত দুইদিন যাবত ২১০০ টাকা হারে আদায় করতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম থেকে রংপুর ৮৫০ টাকার বাস ভাড়া ২২০০ টাকা আদায় হয়েছে। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে ভোলা-মজু চৌধুরী ঘাট ২২০ টাকা বাস ভাড়া গত দুইদিনে ৫০০ টাকা হারে আদায় হয়েছে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে বিশ^রোডের পদুয়ার বাজার নিয়মিত বাস ভাড়া ৫০ টাকার স্থলে গত দুইদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হারে আদায় করা হয়েছে। মিরসরাই থেকে মিঠাছড়া নিয়মিত ভাড়া ৫ টাকা ভাড়ার স্থলে ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে মিরসরাই নিয়মিত ভাড়া ২৫ টাকার স্থলে ৫০ টাকা বাস ভাড়া আদায় করা হয়েছে।

এছাড়াও রাজশাহী সদর হাসপাতাল থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া সরকার নির্ধারিত অ্যাম্বুলেস ভাড়া ৭২০ টাকার স্থলে ৫,০০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।

অন্যদিকে নৌ-পথের বিভিন্ন রুটের লঞ্চ ও স্টিমারের পাশাপাশি খেয়াঘাটগুলোতে গত দুইদিন যাবত যাত্রী পারাপারে ভাড়া ডাকাতির মহোৎসব শুরু হয়েছে। যাত্রী প্রতি ২টাকা ভাড়া আদায়ের স্থলে কোন কোন খেয়াঘাটে ১০ টাকা, কোথাও ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বরগুনার বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটে বিষখালী নদী পারাপারে ২ টাকার ভাড়ার স্থলে ১০০ টাকা ভাড়া আদায়ের চিত্র দেখা গেছে। এসব খেয়াঘাটগুলোতে গত দুইদিন যাবত যাত্রীদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল পারাপারে ১০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা, বাইসাইকেল ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পাঁচ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, আসবাবপত্র ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা ও হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ভোর ৫ থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পারাপারের এক নিয়ম, কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পরেই ওই কোন কোন খেয়াঘাটে নদী পারাপারে রিজার্ভের কথা বলে যাত্রী প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায়ের দৃশ্য দেখা গেছে।

সিটি নিউজ/এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.