আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দেশজুড়ে ঝটিকা অভিযান চালাচ্ছে আফগানিস্তানের তালেবানরা। এই মধ্যে নাইনপিন খেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধসে পড়েছে। সেখানে এখন তালেবানের সদম্ভ উপস্থিতি। গুরুত্বের দিক দিয়ে এখন বাকি শুধু কাবুল। তাও চারদিক থেকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে তালেবানরা। ফলে পূর্বাহ্নেই পূর্বাভাস করা যায়, কাবুলের নিয়ন্ত্রণ এবং পুরো আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতের মুঠোয় আনা এখন শুধু সময়ের ব্যাপারমাত্র। পাকিস্তানের প্রভাবশালী অনলাইন ডন-এর এক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। এর শিরোনাম ‘আফগানিস্তানস ফিউচার’ বা আফগানিস্তানের ভবিষ্যত।
এতে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে পতন ঘটতে পারে কাবুলের। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, তারা রাজধানী থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে পুলে আলম এলাকা দখল করে নিয়েছে। ফলে এটা বলা যায় যে, যতটুকু আন্দাজ করা হয়েছিল, তার চেয়ে দ্রুতগতিতে তারা অগ্রসর হচ্ছে। এমনকি তালেবানের ঘোর বিরোধীরা শাসন করতেন যে মাজারে শরিফ শহর, সেখানেও তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন সেই শাসকরা। পক্ষান্তরে আতা মোহাম্মদ নূর এবং আবদুল রশিদ দোস্তাম পালিয়ে গেছেন বলে খবরে বলা হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোকে এখন সচেতন হতে হবে যে, কাবুলে তালেবান সরকারের সঙ্গে কিভাবে কাজ করতে হবে বা চুক্তি করতে হবে, তা যতটাই অপ্রীতিকর হোক না কেন। একই সঙ্গে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অগ্রাধিকার এজেন্ডায় প্রশ্ন করা উচিত, বহুজাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে তালেবানদের সম্পর্ক কি হবে।
এ প্রেক্ষিতে তালেবানরা যদি শক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতা দখল করে তাহলে তাদেরকে এড়িয়ে চলবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রকৃত সত্য হলো, সব সময়ই কাবুল দখল হয়েছে শক্তির মাধ্যমে। এমনকি ৯/১১ হামলার পরে সামরিক হস্তক্ষেপে তালেবানদের পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর তারা কাবুলে প্রতিষ্ঠা করে ‘নর্দান এলায়েন্স ইন আফগানিস্তান’। পাকিস্তান এবং অন্যরা আফগানিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রস্তাব করেছে- এটাই হতে পারে আদর্শ পথ। কিন্তু এর সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। যদিও আফগানিস্তান সরকার দোহা’য় সমঝোতা প্রক্রিয়ায় আবারো তালেবানদের সুযোগ দিয়েছে, এতে তালেবানরা তেমন উদ্বুদ্ধ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, যুদ্ধক্ষেত্রে তারা সর্বোচ্চ সুবিধা অর্জন করে নিচ্ছে।
আফগানিস্তানে বর্তমানের এই বিশৃংখল ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের তড়িঘড়ি করে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণাকে। সঙ্গে দেশকে সুরক্ষা দেয়ার অক্ষমতা রয়েছে কাবুলের। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এবং বর্তমান শাসকরা আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলেছেন। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যত দ্রুত সম্ভব সেনাদের তুলে নেয়ার কথা বলেন। পক্ষান্তরে পাকিস্তান একটি নিরপেক্ষ এ কথাটা কাবুলকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। কারণ, অতীতে আফগানিস্তানের তালেবানদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র ছিল বলে তারা এবারও সেই একই রকম কথা বলছে। সব কিছু মিলে আফগানিস্তানে এখন উত্তাল পরিস্থিতি।
তালেবানদের কাছে অবশ্যই একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে- যখন তারা কাবুল দখল করবে, তখন যদি বহুজাতিক সন্ত্রাসীকে স্বাগত জানায়, তাহলে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে। নিষিদ্ধ টিটিপির মতো পাকিস্তান বিরোধী জঙ্গিদের সঙ্গে ওয়ার্কিং সম্পর্ক আছে আফগানিস্তানের তালেবানদের। যদি এসব জঙ্গিকে খোলা মাঠে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে তাতে ভয়াবহ এক নিরাপত্তা আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। ইটিআইএমের মতো উইঘুর মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। অন্যদিকে আফগানিস্তানে বড় অংকে উপস্থিতি আছে আল কায়েদা এবং আইএস। তালেবানরা ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের পর পরিণতি যদি আবার ফেরত না চায় তাহলে তাদের উচিত হবে- তারা যে ভূখ- দখল করেছে, তা যেন কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ ব্যবহার করতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
সিটি নিউজ/এসআরএস