যানজট নিরসনে কার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ বিআরটিএ

0

ঢাকা অফিস : ঢাকার যানজট নিরসনে প্রাইভেটকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। শুধু প্রাইভেট কারই নিয়ন্ত্রণ নয়, একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস মিনিবাসসহ অন্যান্য পরিবহনের মধ্যেও সমন্বয় করার পরিকল্পনা করছে তারা। এর বাইরে রাজধানীসহ দেশের সব মহানগর ও মহাসড়কগুলোতে যানজট এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরো কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিআরটিএ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব সড়ক মহাসড়কে চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের ওপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছে বিআরটিএ। একটি বিধিবদ্ধ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা করছে সংগঠনটি।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকার যানজট নিরসনে প্রাইভেটকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও বেশ কিছু পরিকল্পনার একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বিআরটিএ। এসব পরিকল্পনার মধ্যে ঢাকায় কার কয়টি প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস থাকবে তা নির্ধারণ করে দেবে বিআরটিএ। অর্থাৎ পরিবারপ্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করে দেবে তারা। তাছাড়া এসব যানবাহন ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে ব্যক্তিগত পর্যায়ের গাড়ির অনুকূলে ব্যাংক ঋণ প্রদান নিরুৎসাহিত করা বা ঋণ প্রদানে নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশও করেছে বিআরটিএ।

ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীদের গণপরিবহনে উৎসাহিত করতে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে পর্যাপ্তসংখ্যক এসি বাস সরবরাহের বিষয়টিও সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এছাড়া কম আসনবিশিষ্ট গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে বেশি আসনবিশিষ্ট গাড়ি যেমন আর্টিকুলেটেড বাসের প্রচলন করা, ডাবল ডেকার বাসের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি করা, সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ও তাদের নিজস্ব পরিচালনায় এসব সার্ভিসের প্রচলনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যেখানে স্কুলের সংখ্যা বেশি সে স্থানগুলোতে স্কুল শুরু ও ছুটির সময় অসংখ্য প্রাইভেটকারের ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রাইভেট যানবাহনের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে বিআরটিসির মাধ্যমে স্কুলের জন্য বাস বহর বৃদ্ধি করা, ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানাদেরও এতে অংশগ্রহণ করার সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে অনেক কোম্পানির পরিবর্তে একক কোম্পানিকে অনুমোদন দিলে স্বেচ্ছাচারিতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে। বেশি কোম্পানি হলে প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু একক কোম্পানির ক্ষেত্রে তারা যেটা করবে সেটাই জনগণকে মেনে নিতে হবে। যদি কর্তৃপক্ষ ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে এমন উদ্যোগ অবশ্যই ভালো কিছু নিয়ে আসবে।

বিআরটিএর দেয়া তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৩টি বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক যানবাহনের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাইভেটকারের সংখ্যা ২ লাখ ২৩ হাজারের মতো। যেখানে ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৯টি। শেষ সাড়ে ৪ বছরে প্রাইভেটকার নিবন্ধনের হার ছিল বছরে গড়ে ১৫ হাজার ৯১০টি। ২০১০ সালে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৬১৫টি, ২০১১ সালে ১১ হাজার ৪২৩টি, ২০১২ সালে ৮ হাজার ১৮৭টি, ২০১৩ সালে ৯ হাজার ২৩১টি, ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৯৭২টি ও ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৪২২টি প্রাইভেটকারের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাজধানীতে নিবন্ধিত জিপের সংখ্যা ২৮ হাজার ২৫৭টি ও মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৬৩ হাজার ২৩টি, যা কিনা গণপরিবহনের পর্যায়ে পড়ে না। অন্যদিকে নিবন্ধিত গণপরিবহনের মধ্যে বাস রয়েছে ২৪ হাজার ৫৮টি ও মিনিবাস রয়েছে ১০ হাজার ৫০টি।

বিআরটিএর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ প্রাইভেটকার।

প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পরিবহনে প্রাইভেটকার ব্যবহার বন্ধ করতে চাই। এ জন্য সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা পর্যায়ে শিক্ষার্থী পরিবহনে এসি বাস সার্ভিস চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। আশা করছি, এসব পরিকল্পনা সফলভাবেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.