গোলাম সরওয়ার, চট্রগ্রাম : চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রোপচার ও অবহেলায়’ রিমার মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে একটা মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে মেহেরুন্নেসা রীমার বাবা মো. খায়রুল বশার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, চিকিৎসায় অবহেলায় আর কত মৃত্যু ঘটবে আমার মেয়ে সার্জিস্কোপ হাসপাতালের ডাক্তার শামীমা সিদ্দিকী রোজীর অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। এই ডাক্তার আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি তার ফাঁসি চাই।’
নেপথ্য কারণ হলো-প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা সেদিন হাসপাতালে ভাঙচুর করার ঘটনাটি। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাল্টা মামলা করার হুমকি দেওয়াতে মৃত প্রসূতির স্বজনরা আটকে গেছেন। গত রোববার সন্ধ্যায় সার্জিস্কোপ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছোট ভাই খায়রুল বাশারের মেয়ে ও অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা রিমা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ব্যক্তিগত সহকারী নিয়াজ মোর্শেদ নিরু গতকাল বলেন, ‘ঘটনার দিন রাতে আমরা থানায় মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় পাল্টা মামলা করার কথা বললে আমরা বিষয়টি নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবো বলে থানা থেকে ফিরে আসি।’
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সেদিন রাতে দুই পক্ষ থানায় উপসি’ত ছিল। কিন’ দুই পক্ষের কেউই মামলা করতে রাজি হয়নি। তারা আপোষের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করেছে।’
দু পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা করার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি মামলা করতে চায় তা তো নিতে হবে। আর রোগীর স্বজনরাও যদি করতে চায় তাও নেবো।’ ঢাকা থেকে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এসে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী নিয়াজ মোর্শেদ নিরু।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, থানায় সম্ভব না হলে আদালতে মামলা করবেন স্বজনরা। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউই মামলা করার বিষয়ে মুখ খুলছেন না। সার্জিস্কোপ হাসপাতালের (ইউনিট-২) প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না জানিয়ে এ প্রসঙ্গে এমডির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নওশাদ কাদেরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘এ পদে এখন নেই’ জানিয়ে এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সার্জিস্কোপ হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা হারিয়েছে তারাই বুঝে হারানোর বেদনাটা। সেটা যেভাবেই হোক। আমি বিষয়টা তদন্ত করবো। যদিও ঘটনার বিষয়টা আমার নলেজে নাই। তারপরও এটা আমি খতিয়ে দেখবো।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলা করার পরিকল্পনার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
খায়রুল বাশার বলেন, ‘ডা. রোজী ৯ জানুয়ারি রাতে আমাকে বলেছিলেন, সব দায়িত্ব তার। তার কথায় আস্থা রেখে, একজন ডাক্তার হিসেবে তাকে বিশ্বাস করে আমি অস্ত্রোপচারের ফরমে সই দিয়েছিলাম। কিন’ তিনি যেনতেনভাবে আমার মেয়ের অস্ত্রোপচার করেছিলেন বলেই আজ আমি মেয়ে হারিয়েছি, একজন নবজাতক তার মায়ের কোল হারিয়েছে। রোজী একা নন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সমান দায়ী এ হত্যাকাণ্ডে।’
রিমার ভাই, আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে অংশ নেন। প্রতিবাদে আন্দোলন করলেও ঘটনার তিন দিনেও অবহেলার অভিযোগে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি রিমার স্বজনরা ।