স্মার্ট কার্ডে নেয়া হবে ডিজিটাল স্বাক্ষর

0

ঢাকা : অতি গোপনীয় ও স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত তথ্য চুরির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ডে ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিচয়পত্রে ডিজিটাল স্বাক্ষর রাখা হলে তথ্যের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে সরকার।

মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জাতীয় পরিচয়পত্রে বা স্মার্টকার্ডে ডিজিটাল স্বাক্ষর ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব একেএম লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে।

একই সঙ্গে চিঠির একটি অনুলিপি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিনকেও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বর্তমানে যাদের পরিচয়পত্রে স্বাক্ষর মেলেনা তাদেরও ডিজিটাল স্বাক্ষর দিয়ে আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য বলা হয়েছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, শিগগিরই স্মার্ট কার্ড নাগরিকদের হাতে তুলে দেয়া হবে, যা একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তবে ওই পরিচয়পত্রে ডিজিটাল স্বাক্ষর সুবিধা থাকলে নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা অধিকতর নিশ্চিত করতে সুবিধা হতো। এটা ছাড়া নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানির মুখে পড়তে হতে পারে। তাই স্মার্ট কার্ডে ডিজিটাল স্বাক্ষর রাখাটা জরুরি।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে এ উদ্যোগ না নিয়ে ভবিষ্যতে স্মার্ট কার্ডে ডিজিটাল স্বাক্ষর সংযুক্ত করতে গেলে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের সঙ্গে নাগরিকও হয়রানির শিকার হবে। এজন্যে দ্রুত ডিজিটাল স্বাক্ষর সার্টিফিকেট স্মার্ট কার্ডে যুক্ত করতে একটি সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন করার নির্দেশনাও ইসিকে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্মার্টকার্ডে ডিজিটাল স্বাক্ষর সংযুক্ত করা সংক্রান্ত একটি চিঠি হাতে পেয়েছি। এটি একটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

ইসি সচিবালয় কর্মকর্তারা জানান, নাগরিকদের উন্নতমানের স্মার্ট কার্ড দিতে ২০১৪ সালে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্প শুরু করে ইসি। বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্ড বিতরণ শুরু করেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

গত বছরের ২৬ মার্চ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্ড বিতরণ হবে বলে জানানো হয়। এ উদ্যোগটিতে ব্যর্থ হলে বাঙালির বর্ষবরণ উৎসব পহেলা বৈশাখে কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সে সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখেনি।

আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে সাড়ে নয় কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। এ জন্যে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০১৪ সালের অগাস্টেই। কিন্তু কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি না হওয়ার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়নি।

২০১৫ সালে ১৪ জানুয়ারিতে স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণের বিষয়ে ফ্রান্সের ওবার্থার টেকনোলজিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইসি। এরপরেও বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দেয় ইসি। তবে সেসব প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি।

তবে নাগরিকের বহুল কাঙ্খিত এ উন্নত মানে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড বিতরণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসির এনআইডি উইং। এ লক্ষে স্মার্ট কার্ড উৎপাদনের জন্য সেপ্টেম্বরে ১০টি মেশিন বসানো শুরু হয় এনআইডি উইংয়ে। এর পরেই এনআইডি সিপে তথ্য পার্সোনালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ডিসেম্বরে স্মার্টকার্ড উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৫০ লাখ কার্ড ছাপানো সম্পন্ন হয়েছে।

এরেই প্রেক্ষিতে এখন প্রধানমন্ত্রীর সময়সূচি পেলেই এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। নাগরিকের কাঙ্ক্ষিত এ জাতীয় পরিচয়পত্র প্রথমে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত ৪৭ লাখ নাগরিককে এ কার্ড দেয়া হবে। এর পরেই রাজধানীবাসীর মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় শহরগুলোতে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।

বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ কোটি ভোটার রয়েছে। এদের মধ্যে ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেয়ার কার্য্ক্রম হাতে নিয়েছে ইসি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.