ফটিকছড়িতে প্রেমঘটিত কাহিনীর রহস্য!

জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ (ফটিকছড়ি ): প্রেম মানে না জাত-কুল, ধর্ম-বর্র্ণ, এ যেন চিরন্তন সত্য। তারই প্রমাণ মিলল ফটিকছড়ির রনি-জ্যুতির প্রেম কাহিনীতে । তাদের এ প্রেম লায়লি-মজনুর প্রেমকেও হার মানাতে বসেছে। রনি কান্তি দে উপজেলার কাঞ্চন নগর ইউনিয়নের রাজা রাস্তার বাড়ির মৃত ধনা কান্তি দের ছেলে। সবেমাত্র ফটিকছড়ি কালেজ থেকে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছে সে। পাশ্ববর্তি এলাকার মুসলিম পরিবারের মেয়ে জান্নাতুল নাঈমা জ্যুতির সাথে বিগত পাঁচ বছর পূর্ব থেকে মন দেওয়া নেওয়া চলে আসছে তার। জ্যুতি  কাঞ্চুরহাট দাখিল মাদ্রাসা থেকে দুই বছর পূর্বে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে থামিয়ে দেয় শিক্ষা জীবন। দুজন দুই ধর্মাবলম্বী হলেও তাদের প্রেমে চলতে থাকে প্রেমের নিয়মে। এক পর্যায়ে উভয় পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে কয়েক দফা সালিশী বৈঠক হয়। উভয়ে পরিবার থেকে শারীরিক অত্যাচারের শেষটুকু হজম করে। কিš‘ মেয়ের পরিবার যখন জোর করে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেন, তখনই পাল্টে যায় চিত্র। প্রেমিক জুটি সিদ্ধান্ত নেয় পালিয়ে যাবে অজানায়। এক শুক্রবারে ভোর সকালে মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিš‘ সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও ছেলেটি বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। তার পরিবার বিষয়টি টের পেয়ে আটকে রাখে রনিকে। জব্ধ করে ফেলা হয় তার মুঠোফোনটি। মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রেমিকের সাথে বার বার যোগাযোগ করতে চাইলেও ব্যার্থ হয়। পরে মেয়েটি তারেক নামের তাদের এক বন্ধুর সহায়তায় পালিয়ে যায় কুমিল্লায়। সেখানে তাদের পরিচিত এক ব্যক্তির বাসায় আশ্রয় নেয়। প্রেমিক রনি কৌশলে বন্দি থেকে পালিয়ে ছুটে যায় প্রেমিকা জ্যোতির কাছে। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পার হতে না হতে মেয়ের পরিবার সহযোগী তারেককে ধরে বেধড়ক পিঠিয়ে তাদের অবস্থান জেনে নেন। পরদিন শনিবার সকালে গোপনে সেখানে গিয়ে উভয়কে নিয়ে এসে ফটিকছড়ি থানায় সোপার্দ করেন। শনিবার রাতে থানা হাজতে কথা হয় প্রেমিকজুটির সাথে। প্রেমিকা জান্নাতুল নাঈমা জ্যুতি বলে, আমি এভাবে পালিয়ে পরিবারকে ছোট করতে চাইনি। বাধ্য হয়ে পালিয়ে গেছি। আমি রনির জন্য পৃথিবীও ছাড়তে রাজি।’ প্রেমিক রনি বলেন, আমি জ্যুতির জন্য ধর্ম ও পরিবার ত্যাগ করতে প্র¯‘ত। ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে জ্যুতিকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চাই’। উভয়কে ফটিকছড়ি থানা হাজতে উভয়কে আলাদাভাবে রাখা হয়। ছেলে পক্ষের কাউকে পাওয়া না গেলেও মেয়ের বাবা আবুল বশর এসেছেন ছেলেটির বিরোদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করতে। মামলা দায়ের করে চলে যাওয়ার সময় কিছু কিনে খেতে মেয়ের হাতে দিয়ে যান কিছু টাকা। সেই টাকা দিয়ে মেয়েটি কিছু জুস,কেক আর কলা কিনে আনল এক পুলিশ কনেস্টবল দিয়ে। আর সেই সব খাবার নিজে না খেয়ে পাঠিয়ে দিল প্রেমিক রনি কান্তি দের কাছে। রনিও যখন শুনল তার জ্যুতি পাটিয়েছে! তখনই দু‘হাত বাড়িয়ে লুফে নিল সেসব খাবার। ফটিকছড়ি থানার উপ-পরিদর্শক(এস.আই) শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, মেয়ের বাবা বাদী হয়ে রনির বিরোদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেছে। অপহরণ মামলার প্রেক্ষিতে তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হবে।
অপরদিকে প্রেমকে কেন্দ্র করে বন্ধুত্বের বলি হলেন ফটিকছড়ি কলেজের মেধাবী ছাত্র জাবেদ হোসেন (১৯)। দীর্ঘদিনের বান্ধবীর আত্মহত্যার পর নিজের উপর মিথ্যা অপবাদ সইতে না পেরে গত সপ্তাহে রোববার সন্ধ্যায় বিষপানে তিনিও বান্ধবীর পথ অনুসরন করলেন। পরে চমেক হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। নিহত জাবেদ উপজেলার সুন্দরপুর ছোট ছিলোনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ির প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনের একমাত্র পুত্র। জাবেদ ফটিকছড়ি কলেজের চলতি এইচ এস সি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী। তার আত্মহত্যার রহস্য অনুসন্ধানে জানা যায়, জাবেদের পরিবার উপজেলা সদরের তেজন্দ্র স্কায়ার সংলগ্ন একটি ভবনে ভাড়া বাসায় গত সাত বছর পূর্ব থেকে বসবাস করেন । একই ভবনে ভাড়ায় থাকতেন রাঙ্গামাটিয়া চৌমহনী এলাকার বদিউল আলম (প্রকাশ এজেন্সি বদির) পরিবার। সেই সূত্রে বদির কন্যা নিগার সুলতানা নিকার সাথে জাবেদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়। বিগত সাত বছরের বন্ধুত্বে আবদ্ধ থাকা জাবেদ-নিকা ফটিকছড়ি কলেজে একই ক্লাসে পড়ালেখা করছিল। এরিমধ্যে, নিকার সাথে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় মেয়র ইসমাইল হোসেনের বাড়ির ‘অনিক’ নামক এক ছেলের সাথে। তার সাথে নিকার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে নিকা বুঝতে পারে অনিক একটি বকাটে ছেলে। তখনই তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এতে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। তখনই সৃষ্টি হয় নতুন ঝামেলা। তাদের এই সম্পকের ফাঁটলের পেছনে জাবেদের হাত রয়েছে এবং জাবেদের সাথে নিকার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এমন ধারণা করে জাবেদকে অনিক সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বেদড়ক পিঠিয়ে আহত করে। এ নিয়ে কলেজের বড় ভাইদের বিচার দেন জাবেদ। বিষয়টি নিয়ে বেঠকে বসেন ফটিকছড়ি কলেজের সিনিয়র কয়েকজন ছাত্র। সেখানে জাবেদ দাবী করেন নিকার সাথে তার শুধুই বন্ধুত্ব। অন্যদিকে একই বৈঠকে অনিক দাবী করেন নিকার সাথে জাবেদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাই তাকে পাত্তা দি”েছ না নিকা। বিষয়টি মিমাংসাধীন ছিল। এরিমধ্যে অনিক, নিকা ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। এ নিয়ে পরিবারের চাপ ও অনিকের হুমকির কারণে নিকা মাসখানেক পূর্বে নিজ ঘরে শরীরে কেরোসিন ডেলে আগুন লাগিয়ে দেন। মুমূর্ষ অব¯’ায় চারদিন পর চমেক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। জাবেদের ঘনিষ্ট বন্ধু আনোয়ার জনি বলেন, নিকার সাথে জাবেদের শুধুই বন্ধুত্ব ছিল। নিকার মৃত্যুর পূর্বে জাবেদসহ আমি নিকাকে হাসপাতালে দেখতে যাই। নিকার এমন মৃত্যুর পর জাবেদ মানসিকভাবে খুবই ভেঙ্গে পড়ে। তার উপর নিকার মৃত্যুর জন্য জাবেদ দায়ী বলে অনেকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আসছিল। তার এই যন্ত্রনা থেকে কয়েকদিন আগে সেও বিষপানে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। সে চলতি এইচ.এস সির মাত্র তিনটি পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষা দেওয়াও বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষ তার বিষপানের দশমিনিট পূর্বেও আমার সাথে কথা বলেছিল। তবে, এধরণের কিছু করতে যা”েছ তা আমাকে জানায়নি। জনি আরো বলেন, জাবেদ আমাকে বলেছিল অনিকের বিচার আল্লাহ করবে। তাকে যেন অন্যকেউ কিছু না করে। এ নিয়ে অনিকের সাথে বার বার যোগাযোগ করতে চাইলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। একের পর এক প্রেমঘটিত সিনেম্যাটিক কাহিনী নিয়ে গোটা উপজেলা তোলপাড় হলেও ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কোন পক্ষ কোন প্রকার অভিযোগ নিয়ে আসেনি।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.