বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান ও ছাড়পোকার আক্রমণ

মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম  :  ১৩ মে ২০১৬ রাত ১১.০০ টা তূর্ণা এক্সপ্রেসের শোভন চেয়ার শ্রেণীর ‘ন’ বগির যাত্রী হয়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। আমার মেয়ে চুয়েট থেকে সদ্য পাস বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এর ডাচ বাংলা ব্যাংকের ১৪ মে -১৬ এর মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। ট্রেন ছাড়ার পর প্রথমে আসে জিআরপি পুলিশ। পুলিশ যাত্রীদেরকে সতর্ক করছে মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখতে। এটা ভাল দিক। কিন্তু চলন্ত ট্রেনে নাকি ছিনতাইকারীরা ছাদের উপর অবস্থান করে। জানালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আবার আসে সাদা পোশাকের পুলিশ। তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই তারা পুলিশ নাকি ছিনতাইকারী। আমার মেয়ের ভ্যানিটি ব্যাগটিতে তার সারাজীবনের অর্জন মূল সার্টিফিকেটগুলো রয়েছে। তাই যত্ন করে তার হাতের সাথে ভ্যানিটি ব্যাগের ফিতা পেঁচিয়ে হাতে ধরে রেখেছে।

সাদা পোশাকের পুলিশ এসে বলছে, ভ্যানিটি ব্যাগটি পায়ের নিচে রাখতে। আমি বললাম, এতে তার মূল্যবান সার্টিফিকেট আছে। তারপরও ভ্যানিটি ব্যাগটি পায়ের নিচে রাখতে চাপ। যে এ কাজটি করতে বলেছে-আমার ধারণা সে বা তার বংশের কেউ এ মূল্যবান সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারে নি এখনও। চলন্ত ট্রেনের জানালা বন্ধ-কিভাবে ছিনতাইকারী ছিনতাই করবে ? যদি চলন্ত ট্রেনে ছিনতাইকারী থাকে তবে পুলিশ কি করে ? তারা কি যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার জন্য ট্রেনে ডিউটি করে ? ইউনিফর্মের পুলিশ প্রতিটি ব্যাগ, ট্রলি এবং পুটলি সবকিছুই চেক করেছে। কোন যাত্রী তাদের কাজে মন:ক্ষুণ্ম হয় নি। যেহেতু ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ ও রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর লোক দায়িত্ব পালন করে তাদেরকে প্রত্যেকে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু সাদা পোশাকের ব্যক্তিদের অমার্জিত ব্যবহার প্রতিটি যাত্রীকে ক্ষুব্ধ করেছে। সাদা পোশাকের ব্যক্তিদের বক্তব্য হচ্ছে-জনে জনে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়।

এ বক্তব্যটি এসেছে পুলিশের আইজি ও দেশের শীর্ষ চেয়ারের ব্যক্তির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে। ট্রেনের যাত্রীরা রাতে ভ্রমণ করছে তারা নিজেরা সতর্ক। কিন্তু জনে জনে নিরাপত্তা তো কেউ চায় নি। ট্রেনের কয়েকশত যাত্রীর নিরাপত্তা দেয়ার জন্যইতো তাদেরকে ট্রেনে ডিউটি দেয়া হয়েছে। আমি এবং আমার মত অনেকেই তাদের দায়িত্বহীন কথাবার্তা ও আচরণ প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কি তাদের বেতন হয় না ? পুলিশের আইজি, রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডেন্ট এবং তাদের প্রতিটি সদস্য অন্তত: প্রতিদিনই যাত্রীর ট্যাক্সের টাকায় মাসের শেষে বেতন পায়। তাদের আরো দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন ও সংযত আচরণের জন্য নির্দেশ দেয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উচিত।

পুলিশের আচরণ ছাপিয়ে প্রতিটি যাত্রীর ভোগান্তি দেখেছি যাত্রার শেষ গন্তব্য কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত। প্রতিটি সিটে ছাড়পোকার দল যাত্রীদের কামড়িয়ে যাত্রাপথকে বিষময় করে দিয়েছে। আমাদের বগিতে নারী-শিশুসহ সকলেই ছাড়পোকার কামড়ে অতীষ্ঠ হয়েছে। আমার জামার উপর থেকে আমি ৩/৪টি ছাড়পোকা ধরে মেরেছি। আমাদের ‘ন’ বগিতে একটি ছোট শিশু ছাড়পোকার কামড়ে পুরো যাত্রাপথ কেঁদেছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন সদস্য ছাড়পোকার কামড়ে সিট ছেড়ে টয়লেটের সামনে বসে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছেছে। আমি প্রতিটি বগিতে হেঁটে হেঁটে ছাড়পোকার আক্রমণের অভিযোগ পেয়েছি। আমার মনে হয় রেলওয়ের যাত্রীসেবায় ছাড়পোকার ঔষধ কেনার টাকা রেলের বাজেটে আছে। এ বিষয়টি রেলমন্ত্রী দেখবেন বলে আশা করি।

লেখক –  অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.