চন্দনাইশে জব্বার অবশেষে ঠাঁই নিল আ’লীগে

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ : দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে এলডিপি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী এলডিপি থেকে বহিস্কারের পর ঠাঁই করে নেয় আ’লীগে। বহিস্কারের ৯ মাস পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিকালে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপির হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আ’লীগে যোগদান করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সহ চন্দনাইশ আ’লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন না। আগের দিন বিক্ষিপ্ত দু’একটি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

এলডিপি থেকে বহিস্কৃত চন্দনাইশের পর পর দুই দু’বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী আ’লীগে যোগদানকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে হাঁক-ডাক করেছেন অনেক। তিনি তার বক্তব্যে বলেছিলেন এলডিপি থেকে দুই শতাধিক নেতা এবং পাঁচ শতাধিক লোকজন নিয়ে আ’লীগে যোগদান করবেন। কিন্তু যোগদান অনুষ্ঠান চলাকালে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে এর পাঁচ ভাগের একাংশ লোকও অন্য দলের দেখা যায়নি।
মূলত চন্দনাইশের ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের বিজয়ী নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের সংবর্ধনাকে ঘিরে লোক সমাগম হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ নিজ নিজ এলাকা থেকে তাদের সমর্থকদের নিয়ে বিশাল বিশাল মিছিল সহকারে অনুষ্ঠান স্থলে আসতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে সংবর্ধনা সভাটি বিশাল জনসভায় রূপ নেয়। এরই মাঝখানে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী বাদক দল নিয়ে কয়েকশ লোকজন সহ সংবর্ধনা স্থলে এসে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর হাতে নৌকা চিহ্নিত ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে চতুর্থ বারের মত তিনি আ’লীগে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজের জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে কর্নেল অলির হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করে ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হন।

২০০৮ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালের কর্নেল অলি বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি প্রতিষ্ঠা করলে, আবদুল জব্বার চৌধুরী কর্নেল অলির সাথে এলডিপিতে যোগ দেন। প্রথমে গণতান্ত্রিক যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কেন্দ্রীয় এলডিপির সম্মেলনে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। পরবর্তীতে গত ডিসেম্বরে পৌর মেয়র নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী কর্নেল অলির ভাতিজা আয়ুব কুতুবীর পক্ষে কাজ না করায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও হত্যা মামলার আসামীর অপরাধে গত ৩০ ডিসেম্বর এলডিপি থেকে বহিস্কৃত হয়। সে থেকে জব্বার চৌধুরী দীর্ঘ ৯ মাস রাজনীতিক দলবিহীন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে কর্মসূচিগুলিতে সরব ছিলেন।

এরই মাঝে গত ২৬ জুন উপজেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত ইফতার মাহফিলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে যোগ দিয়ে প্রথম বারের মত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেন। ফলে রাজনীতিক মহলে আলোচনায় উঠে আসে জব্বার চৌধুরী। গুঞ্জন উঠেছিল তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। পরবর্তীতে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে জব্বার চৌধুরী আ’লীগে যোগদানের জন্য আ’লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে শুরু করেন। অবশেষে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী তার ডাকে সাড়া দিয়ে নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের সংবর্ধনা সভার মাধ্যমে তাকে আ’লীগের ঘরে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জব্বার চৌধুরী বলেছেন, তার সে যোগদান অনুষ্ঠানে পৌর এলডিপির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আহমদুর রহমান, সাতবাড়ীয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ, পৌরসভা গণতান্ত্রিক যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন, কেশুয়ার মো. সেলিম, জামিরজুরীর নুরুল হুদা, দিয়াকুলের মহিউদ্দিন, আলী আকবর, বেলাল সহ হাশিমপুর, চাগাচর, সাতবাড়ীয়া, কেশুয়া ও বিভিন্ন এলাকার ৭ থেকে ৮ হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে তিনি আ’লীগে যোগদান করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, আ’লীগের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, নির্বাচনী ইশতেহার পূরণের কারণে সাধারণ জনগণ আ’লীগকেই পছন্দ করেন। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আ’লীগে যোগদান করেছেন।
উপজেলা আ’লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান জব্বার চৌধুরীর যোগদান বিষয়ে উপজেলা আ’লীগ ও আ’লীগের কার্যকরী পরিষদ অথবা বর্ধিত সভায় কোন রকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তাছাড়া দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাথেও এ ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি বিধায় দক্ষিণ জেলা আ’লীগের কোন নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় নাই। সে সাথে উপজেলা আ’লীগের সিংহভাগ নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। জব্বার চৌধুরী বাদী হয়ে ২০০১ সালে আ’লীগের অনেক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। শুধু তাই নয় সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে নগরীর এলডিপি কার্যালয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের মামলায় সে প্রধান আসামী। এ সকল বিষয়ে ২০০১ সালে নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের পাশে থাকা বলে সমীচীন মনে করেন। তাই সংবর্ধনা সভায় যায়নি। তাছাড়া কেন্দ্রীয় আ’লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুনভাবে আ’লীগে যোগদান করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন লাগে। এক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি। ফলে নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ-বিক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেছেন, চট্টগ্রাম-১৪ সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী তিনিই সমন্বয়ক এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সাথে সমন্বয় করে বৃহত্তর স্বাধীনতার ঐক্যকে গড়ে তোলার প্রত্যাশায় এ যোগদান অনুষ্ঠান ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
অপরদিকে উপজেলা এলডিপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আকতার আলম বলেছেন, জব্বার চৌধুরী যে সকল এলডিপির নেতা-কর্মীদের নাম বলেছেন, তারা কেউ এ অনুষ্ঠানে যায়নি। তিনি এলডিপি বা অঙ্গসংগঠনের ওয়ার্ড পর্যায়ের কোন নেতা-কর্মীকে তার সাথে নিতে পারেন নি। কিছু লোক ভাড়া করে এনে দু’একশ জন লোক নিয়ে তিনি যোগদান করেছেন। তাছাড়া তিনি পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় যাওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে দলের সকল পদ-পদবী থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়েছিল। সে আমাদের দলের কেউ নয়। তাই তার সাথে এলডিপির কোন নেতা-কর্মী এ যোগদান অনুষ্ঠানে যায়নি। জব্বার চৌধুরী বিগত এক সপ্তাহ ধরে তার বাড়ীতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের এলডিপি নেতা-কর্মীদের ডেকে নিয়ে, প্রয়োজনে টাকার বিনিময়ে হলেও এ অনুষ্ঠানে যোগদানের চেষ্টা করেছিলেন। অবশেষে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
উক্ত সংবর্ধনা সভা ও জব্বার চৌধুরীর যোগদান অনুষ্ঠানে আ’লীগের একটি বৃহৎ অংশ অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। কার্যকরী পরিষদের ৩ জন সহ-সভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সম্পাদক, ১ জন সাংগঠনিক সম্পাদক সহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেককে অনুপস্থিত দেখা যায়। তাছাড়া চন্দনাইশ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার নেতৃত্বাধীন শেখ টিপু চৌধুরী ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুর রহমান চৌধুরী, অনেক ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক সহ একটি বিশাল অংশ এ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত দেখে অনেকে হতবাক। বিজ্ঞ রাজনীতিক মহলের মতে জব্বার চৌধুরীর যোগদানকে কেন্দ্র করে আ’লীগের ঐক্যের মধ্যে কোন ধরনের অনৈক্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছে কিনা এ বিষয়ে আবার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন।

কারণ জব্বার চৌধুরী কর্নেল অলির সাথে রাজনীতি করাকালীন আ’লীগের অনেক নেতা-কর্মী জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। যারা এখনো সে মামলার ঘাঁনি টানছে। ২০০১ সালে অর্ধ শতাধিক মামলায় ১১শ আ’লীগ নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। অনেক আ’লীগের নেতা-কর্মী সেদিন স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সংসারে এক সাথে বসবাস করতে পারেনি। আর সে সময় দাপটের সহিত বিএনপির রাজনীতিতে কাজ করেছেন কর্নেল অলির পাশাপাশি আবদুল জব্বার চৌধুরী। প্রথমে ছাত্রলীগ, পরে ছাত্রদল, যুবদল, এলডিপি। চতুর্থ বারের মত দল বদল করে আ’লীগে যোগদান করেছেন। জব্বার চৌধুরী একজন সুবিধাবাদী রাজনৈতিক হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে চন্দনাইশ আ’লীগের রাজনীতি ভিন্ন মেরুকরণে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের কাছে মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.