মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মাহে রমজান

0

আবছার উদ্দিন অলি  :  বছর ঘুরে আবার এলো রোজা। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মাহে রমজান, উৎসব মুখরভাবে পালিত হচ্ছে। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত তিন ভাগে বিভক্ত। সব ধরনের অন্যায় ত্যাগ করে আদর্শ নীতি-নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র দিয়ে মানুুষকে আল্লাহর রহমতের বৃত্তে আশার চেষ্টা করতে হয়। আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারলে মানুষের কাছে প্রিয় হওয়া যায়। রোজা আমাদের শিক্ষা দেয় আত্মশুদ্ধি, ব্যক্তিত্বের সংস্কার এবং নিজেস্ব সংকীর্নতা গুলো কাটিয়া ওঠার। রমজান মাসে ইফতারির কদর বেশ আকর্ষনীয়। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার রোজাদারদের কাছে খুব প্রিয় বিষয় হয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। এর ধর্মীয় গুরুত্ব যেমন রয়েছে তেমনি সামাজিক গুরুত্ব বহন করে। পরিবার পরিজন নিয়ে এক সাথে ইফতার এবং অফিস আদালত কলকারখানা মালিক শ্রমিক মিলিয়ে একসাথে ইফতারের সংস্কৃতি আমাদেরকে ঐক্যের বন্ধনে অটুট থাকার মানষিকতা জাগিয়ে তোলে। আমরা সবাই এক হয়ে শ্রেণী বৈষম্য ভূলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একসাথে ইফতার করে থাকি।

স্বাস্থ্যকর কি অস্বাস্থ্যকর যাচাই বাচাই করার তাগিদ কারো নেই। লাল রং মিশ্রিত পোড়া তেল দিয়ে ভাজা ইফতারি, রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ভাজা মুরি, কেমিক্যাল যুক্ত পেপে, কলা, আম, ফরমালিন যুক্ত মাছ রোজা রাখার পর খালি পেটে রোজাদাররা খেয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী। এ সমস্ত বিষাক্ত ভেজাল খাবার খেয়ে হৃদরোগ, জন্ডিস, ডাইরিয়া, ডায়াবেটিক, কিডনী, লিভার ইত্যাদি রোগের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। চট্টগ্রামের পুরো শহরকে রাস্তা বানানো হলেও যানজট কমবেনা। সেই সাথে স্কুল, কলেজ বন্ধ দিয়ে যানজট কমানোর উদ্যোগে সুফল পাওয়া যেতে পারে। অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদ রাস্তার পাশে পার্কিং বন্ধ করা, ইট, বালি, দোকানের মালামাল, নির্মাণ সামগ্রী রাখা বন্ধ করতে হবে। সিটি সার্ভিসের যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা রাস্তার উপর ট্রাক রাখা বন্ধ করা। ফ্লাইওভারের কাজ যেখানে হচ্ছে বিশেষ করে কদমতলীতে বড় গাড়ী চলাচল বন্ধ করে দেওয়া। সর্বোপরি ট্রাফিক ও পুলিশ সার্জেন্ট যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে সংখ্যা বাড়ানো হলে যানজট থেকে মুক্তি মিলবে।

ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছে, এরপরও নকল ভেজাল সেমাই ও নুডুলস কারখানা সন্ধান মিলছে। প্রতিদিন জরিমানা করে চলছে। তারপরও থেমে নেই ওজন এ কম দেওয়া ভেজাল খাদ্য বিক্রি, বেশী দামে বিক্রির প্রতিযোগিতা। এসব অপকর্ম যেন রোজার জন্যই অপেক্ষা করে বসে থাকে। পুরো রমজান মাস জুড়ে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। সেই সাথে অপরাধীদের জেল জরিমানা করা জরুরী। ভেজাল খাদ্য উৎপাদন বিপননের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চলতে থাকলে ভেজাল কম হবে। পৃথিবীর সব দেশে তাদের উৎসব গুলোতে দ্রব্য মূল্যের দাম কম। সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি হয়। যথা রকম সুযোগ সুবিধা থাকে তা উৎসব গুলোতে প্রদান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিপরীত চিত্র। রমজান এলেই দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ানো যেন রীতিমত কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে এর থেকে বেরিয়ে আসা যাচ্ছেনা। রোজা এলেই মিথ্যা কথা বলা, ঠকবাজি, চুরি, ওজনে কম দেওয়া ভেজাল বিক্রি দ্রুত বেড়ে যায়।

বিকেল হওয়ার সাথে সাথে গ্রাম গঞ্জে ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরের পাড়া, মহল্লা, বিপনি কেন্দ্র ও অভিজাত এলকায় হরেক রকম রসনা বিলাসী ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বেগুনী, পেয়াজু, মরিচ, চপ, ডিম চপ, মার্টন হালিম, বীফ হালিম, ফিস কাবাব, চিকেন উইংস, ফিস বল, কাবাব, ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল, লাচ্ছা সেমাই, ফিন্নি, জিলাপী, চিকেন চাপালিজ, আখনী বিরানী, চিকেন বিরানী, হরেক রকম ইফতারী বিক্রি হচ্ছে। চিকেন হালিম ৩৪০ টাকা, মার্টন হালিম ৪০০টাকা, বীফ হালিম ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফিন্নি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, মিষ্টি দই ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, রোজা উপলক্ষ্যে চলছে ইফতারি বেচা কেনা। ডিজিটাল ব্যানারে স্পেশাল ইফতারি বিক্রির হাক-ডাক চলছে। স্পেশাল ইফতারির দৌড়ে নরমাল খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিকেল নামার আগেই শুরু হয় ইফতারের তোড়জোড়। হোটেল, রেস্তোরা, মসজিদ, বিপনি বিতান গুলোর সামনে বাজার গুলোর পথের ধারে বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ, জিইসি, নিউ মার্কেট, বহদ্দার হাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ান হাট, হালিশহর, অলংকার মোড়, আন্দরকিল্লা, ষ্টীল মিল, কাঠগড়, সদরঘাট, মুরাদপুর, কাজের দেউড়ী, জামালখান সহ পুরা নগরী হয়ে উঠে ইফতারির বাজার। ৫টা বাজার সাথে সাথে ইফতারি কেনার জন্য উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় নগরীর প্রাণ কেন্দ্র গুলোতে কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে এই যে ইফতারি সামগ্রী যা খাচ্ছি, তা কতটা স্বাস্থ্যকর। কেমিক্যাল যুক্ত, রং মিশ্রিত, চর্বি যুক্ত, খোলামেলা, ভেজার খাবার সারাদিন রোজা রাখার পর যা পান করছি তা অনেকটাই বিষ।
সরকারী বেসরকারী তৎপরতার কারনে পাইকারী ও খুচরা বাজারে পণ্যের সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। সময়মত আমদানি হয়েছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য। বিপনন ব্যবস্থার কোন অনিয়মের খবর আপতত নেই, রাজনৈতিক আন্দোলনও তেমন জোরালো নয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যেন বেপরোয়া। কোন নিয়মনীতি সরকারী ঘোষণা মানতে রাজি নয় তারা। বড় ছোট ব্যবসায়ীরা এখন যেন একজোট। সিন্ডিকেট করে সবজি ও পেঁয়াজের তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ছোলা, বেসন, চিনি, ডালের দাম। বড় মজুদ থেকে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃক্রিম সংকট তৈরির ক্ষমতা রয়েছে হাতেগনা কয়েক জন ব্যবসায়ী। তারা দাম সামান্য বাড়িয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। ব্যবসায়ীদের মনোভাব এমন হয়েছে যে, পণ্যের জন্য দাম হাঁকা হবে ক্রেতারা সেটাই দিতে প্রস্তুত থাকে। বাজারে এই ফ্রি ষ্টাইন নীতির ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। যারা রোজা আগের দিন অর্থাৎ রবিবারে ২৯শে জুন বাজার করেছেন তাদের কাছে এর উত্তর রয়েছে। বাজার অর্থনীতির নিয়ম মাফিক নয়। চলছে ব্যবসায়ীদের মর্জি মাফিক।

রোজার সাথে পাল্লা দিয়ে যুক্ত হয়েছে যানজট দুপুর ৩ টা থেকে আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং, জিইসি, মুরাদপুর, কর্ণফুলী ব্রীজ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, টেরীবাজার, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট, বহদ্দার হাট, বিআরটিসি, ফলমন্ডী, যেন যানজটের দুর্গো হিসাবে প্রস্তুতি নেই। প্রথম রোজা থেকে যানজটের নতুন রূপ সৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। বর্ষার বৃষ্টি বাদল রাস্তা ঘাট ভাঙ্গা চুরা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান রাস্তা সম্প্রসারন ও ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের কারনে এমনিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগর বাসীকে। তার সাথে যানজট সঙ্গী হয়েছে খুব যতœ সহকারে। এবার পুরো রোজা পড়েছে বর্ষায়। তাই বর্ষার পানিতে নগরীর এমনিতে বেহাল অবস্থা তার উপরে রমজান মাসে পড়তে হবে আরো ভোগান্তি।

বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য হোক কিংবা বর্ষার বৃষ্টি হোক আর রমজানের জন্য হোক লোডশেডিং এর ভূত টা এখনও রয়েগেছে। অন্তত পক্ষে সেহরী ইফতার তারাবী এই তিন সময় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ভালো সার্ভিস দিতে পারছে না। নগর বাসীর মধ্যে লোডশেডিং নিয়ে যে ভয় ছিল তা রয়ে গেছে। তবে মার্কেটে বিদ্যুতের অপব্যবহার সাইন বোর্ড ও রাস্তায় অপ্রয়োজনীয় বাতি জ্বালানো বিশাল বিশাল তোরন ও গেইট নির্মান করে আলোক সজ্জার ব্যাপারে কঠোর হবে। ২৭ রমজান পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়ে চেম্বারের পক্ষ থেকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি চলবে।

৩০ জুন সোমবার থেকে শুরু হয়েছে রোজা। আত্মশুদ্ধি ও খোদাভীতিই সিয়াম-সাধনার মূল লক্ষ্য। রমজানে আমাদের মন-মানসিকতা পরিবর্তণ করতে হবে। রোজা সৎ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হতে শেখায়। এতসব অনিশ্চয়তার পরও রমজানের বাকী দিনগুলো ভালই ভালই কাটুক- এমনটিই প্রত্যাশা। ৩০ রোজার পর মহা-মিলনের ঈদ বয়ে আনুক আনন্দের জোয়ার। এক মাস রোজ রাখার পর যে আনন্দ নিয়ে আমরা ঈদ করি। তার সাথে কোনকিছুরই তুলনা হয়না।

পণ্যের মোড়কে খুচরা মূল্য উল্লেখ না থাকা, নির্ধারিত মূল্যের বেশী দাম নিলে, মেয়াদোত্তীর্ণ পন্য বিক্রি ও প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করা বাটখারা ও ওজন পরিমাপ এ কার চুপি করা অবৈধ প্রক্রিয়া পণ্য উৎপাদন ও ক্ষতিকারক দ্রব্য খাদ্য পণ্যে মিশানোর বিষয়ে প্রতিদিন বাজারে বাজারে অভিযান পরিচালনা প্রয়োজন। রোজাকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করা মোটেও কাম্য নয়। ব্যবসায়ীদের একটি মাস অন্তত সংযত হওয়া উচিৎ। পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে তাল মিলিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ভেজার মিশ্রন কাজে লিপ্ত রয়েছেন। এটা কি সংযমের মাস রোজার লক্ষণ? আমরা রোজা রাখব, তারাবির নামাজ পড়ব, গরীবকে সাহায্য করব। এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হব।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.