চট্টগ্রামে স্বপ্নের স্লুইচগেট: কাগজে আছে বাস্তবে নেই

0

জুবায়ের সিদ্দিকী-

শীত চলে গেছে। এসে গেছে বসন্ত। কয়দিন কিছুদিন পরই শুরু হবে গৃস্মের তাপদাহ। তারপর ফের বর্ষাকাল। বিগত বর্ষার দুর্ভোগ দুর্দশার কথা ভুলতে পারেনি নগরবাসী। মনে হয় আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতা আরও তীব্রতর হবে। বর্ষার পর গেল পাঁচ মাসে নগরবাসীর জন্য কোন সুখবর নেই। খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে ’বন্যা নিয়ন্ত্রন’ ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বেগাপ্রকল্পটি শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) থেকে ভুমি অধিগ্রহনের ২৭ শ কোটি টাকা বাদ পড়তে যাচ্ছে। এর ফলে নগরীর শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতু এলাকা পর্যন্ত নদীর তীরে চার লেনের রাস্তা নির্মানের স্বপ্নটির মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে।

তবে পাউবো সুত্র জানায়, প্রকল্পে ৬২ হেক্টর জমি ভুমি অধিগ্রহনে ২৭শ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে জমির দাম সামঞ্জস্য না করেই এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে ভুমি অধিগ্রহন বাজেট তিনগুন বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রনালয় আপত্তি দিয়েছে। গত জানুয়ারীতে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের যৌথসভায় ডিপিপি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এই সভায় সড়ক নির্মানের জন্য বরাদ্দ ২৭শ কোটি টাকা কাটছাট করে পুনরায় ডিপিপি প্রস্তুত করার নির্দেশ দেয়া হয়। পাউবো সুত্র জানান, কাটছাট করার পর ৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ১৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। আগামী এপ্রিলে প্রকল্পটি করিকল্পনা কমিশনে প্রেরন করা হবে।

গত বছরের অক্টোবর মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড় নগরীর জলাবদ্ধতামুক্ত করনের লক্ষ্যে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ডিপিপি প্রস্তাবনা প্রেরন করে। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড়ে কয়েক দফায় পর্যালোচনা সভা অনুষ্টিত হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারী পানি সভায় প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিজান চাকমা বলেন,’মন্ত্রনালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড়ের সভায় প্রকল্পের ব্যয় কমানোর তাগিদ দেয় হয়েছে। তাই চার লেনের সড়ক নির্মানের লক্ষ্যে ভুমি অধিগ্রহনরের জন্য প্রস্তাবিত ২৭ কোটি টাকা বাদ দিয়ে প্রকল্পের নতুন ডিপিপি তৈরী করা হচ্ছে। তবে শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত অংশ ছাড়াও মদুনাঘাট এলাকা সহ একাধিক এলাকায় ভুমি অধিগ্রহন করতে হবে। এ জন্য ৫শ কোটি টাকার প্রস্তাবনা রাখা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, বন্দর, নেভাল একাডেমি সহ সেবাধর্মী বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের ভিত্ত্বিতে এই প্রকল্পটি গ্রহন করে। গত বছরের ২৬ আগষ্ট মাসে চার হাজার ৯৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকার ডিপিপি পানি উন্নয়ন বোর্ডে দাখিল করা হয়। প্রকল্পে নগরীর ৩৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার নদীর তীরজুড়ে চার লেনের সড়ক রিটেইনিং ওয়াল, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ, স্লোব ও নগরীর ৪০টি খাল মোহনা খননের প্রস্তাবনা করা হয়। ৩০ আগষ্ট বোর্ডের সভায় যাছাই বাছাই করে সংযোজন বিয়োজনের নির্দেশনা দিয়ে চট্টগ্রাম ফেরত পাঠানো হয়। এরই মধ্যে ৬-৭ বার সংশোধন পরিমার্জন করা হয়।

সর্বশেষ সভায় সড়ক নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহনের টাকা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রনালয় ও বোর্ড। প্রকল্পে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ৩৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকায় সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪০টি খালের মোহনায় রেগুলেটর স্যুইচ গেইট নির্মান, দুই দশমিক ৭ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ১২ দশমিক ৯৭৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ রোড়, ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকায় স্লোব বসানো হবে। সিটি কর্পোরেশন এলাকার ছোট বড় ৪২টি খাল চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে হাটহাজারীর খন্দাকিয়া ও কাটখালী দুটি খালে রেগুলেটর রয়েছে। ৪০টি খালেস্যুইচ গেইট বসানো হবে। এরমধ্যে ১৩টি বড় খাল, ১৩টি মাঝারী খাল চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি ১৪টি ছোট খাল, ড্রেন-নালা রয়েছে। নগরীর প্রধানত খাল চাক্তাই, রাজাখালী খালেও স্যুইচ গেইট ও রেগুলেটর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এই দুটি খাল নৌ বানিজ্যের প্রধান মাধ্যম। এ দুটি খালেও স্যুইচ গেইট নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানায় পাউবো সুত্র। এর মধ্যে খাল খননের কাজ করবে সিটি কর্পোরেশন। পানি উন্নয় বোর্ডের (দক্ষিণ-পুর্বাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী একেএম শামসুল করিম বলেন.’আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। যে কোন ভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চাই আমরা। তিনি বলেন,’ চট্টগ্রামে জমির দাম বেশি। প্রকল্পের ডিপিপিতে সম্ভাব্য বাজেট ২৭শ ধরা হলেও বর্তমানে তিনগুন বেড়েছে।

এ নিয়ে মন্ত্রনালয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এদিকে চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ বানিজ্যিক এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর হাউজিং এষ্টেট, জেলা পুলিশ লাইন, বেপারী পাড়া, ছোটপুল, মুহুরী পাড়া, হাজিপাড়া সহ বৃহত্তর হালিশহর এলাকার দু:খ হিসেবে পরিচিত মহেষখালে এখনো স্যুইচ গেইট নির্মানের কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অথায়নে এ স্যুইচ গেইট করার কথা থাকলেও তারা এখন নিরব।

এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে গত বছর বর্ষার আগে তড়িগড়ি করে মহেষখালের মাঝামাঝি বন্দর আবাসিক এলাকা ব্রিজের পাশে একটি অস্থায়ী বাধ নির্মান করা হয়। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এম.এ লতিফের উপস্থিতিতে অস্থায়ী বাঁধ নির্মান কাজ উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল,’বর্ষার পর শীত মৌসুমে মহেষখালের মুখে স্থায়ীভাবে স্যুইচ গেইট নির্মান শেষ হবে। খবর নিয়ে জানা গেছে,’ এক বর্ষা গিয়ে এখন আরেকটি বর্ষা আসছে। এখনও বন্দরের সেই স্যুইচ গেইট নির্মান শুরুই হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ’চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা চট্টগ্রাম বিদ্বেষী আমলারা এই স্যুইচ গেইট নির্মানে কালক্ষেপন করছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.