দলীয় নেতাদের সাথে যে কারণে মহিউদ্দিনের যোগাযোগ বাড়ছে

0

সিটিনিউজবিডি:- নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অন্তত দু’দশক ধরে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থেকেই রাজনীতি করছেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সদ্য মন্ত্রিত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যপট যেন হঠাৎ পাল্টে গেছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দুই নেতা পরস্পরের বাসায় গিয়ে কুশল বিনিময় করেছেন। শুধু এই নেতার বাসায় নয়, মহিউদ্দিন চৌধুরী গিয়েছেন চসিক নির্বাচনের পর রাজনীতির মাঠে প্রভাব বিস্তারকারী সদ্য নির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছিরের বাসায়ও। এছাড়া গত বুধবার সাবেক দুই মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, এম মনজুর আলম বাসায় ঘুরে সময় কাটিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

রাজনীতির উত্তরসূরী ও বিরোধীদের বাসায় যাবার এসব খবরে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে সাবেক দুই মেয়রের বাসায় যাবার খবর সেই কৌতুহলের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনবার নির্বাচিত হয়ে টানা ১৭ বছর মহিউদ্দিনও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী জাতীয় পার্টির আমলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনির্বাচিত মেয়র ছিলেন। বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়ে এম মনজুর আলম পরাজিত করেছিলেন মহিউদ্দিনকে। আর এবার আ জ ম নাছির উদ্দিন আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত করেছেন মনজুরকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমি বুড়া হয়ে গেছি, চোখে দেখি না, কানে শুনি না। কখন কোথায় চলে যাই তার কোন ঠিক নেই। ঈদের সময় বৃষ্টির জন্য বের হতে পারিনি। গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যার দিকে বের হয়েছিলাম। নাছিরের বাসায় খানাপিনা খেয়ে বের হয়েছি। এরপর ঘুরতে ঘুরতে মাহমুদুল ইসলাম সাহেব এবং মনজুর সাহেবের বাসায়ও গিয়েছিলাম।

গত রোববার (১৯ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র খুলশির বাসায় যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। মন্ত্রী নিজে বাসার বাইরে এসে মহিউদ্দিনকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিজের ড্রইংরুমে নিয়ে যান।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বিএসসি দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের মধ্যে এক সময় বিরোধ ছিল। তবে এখন কোন বিরোধ নেই। দলীয় ইস্যুতে আমরা আওয়ামী লীগের সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। যে কোন সময়ের তুলনায় আ.লীগ এখন অনেক শক্তিশালী।

সিটি মেয়রের একান্ত সহকারী রায়হান ইউসুফ জানান, বুধবার রাত ৯টার দিকে নগরীর আন্দরকিল্লায় আ জ ম নাছির উদ্দিনের বাসায় যান এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এসময় নাছির বাসার চারতলায় অবস্থান করছিলেন। মহিউদ্দিন তার বাসায় যাবেন সেটা আগে থেকে জানতেন না নাছির। আকস্মিকভাবে মহিউদ্দিন তার বাসায় গিয়ে হাজির হলে ব্যস্ত হয়ে চারতলা থেকে নেমে আসেন নাছির। পরে দুই নেতা প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট এক সাথে সময় পার করেন। নাছিরের বাসায় মহিউদ্দিনের সঙ্গে যান নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকও।

মেয়রের বাসা থেকে বেরিয়ে মহিউদ্দিন যান নগরীর পাঁচলাইশে সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বাসায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে। সেখান থেকে রাত ১০টার দিকে তিনি বের হন। এরপর নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের বাসার দিকে ছুটেন মহিউদ্দিন।

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে দু’বার এবং একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে তিনবার মেয়রের চেয়ারে বসা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সদ্যসমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মহিউদ্দিনের সামনেই মনোনয়ন দেয়া হয় তারই উত্তরসূরী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে। সেই বৈঠকে মহিউদ্দিনকে ‘শারীরিকভাবে অসুস্থ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এরপর থেকেই মহিউদ্দিন বলতে শুরু করেন, তিনি বুড়া হয়ে গেছেন, কানে শুনেন না, চোখে দেখেন না।

এর আগে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও মান ভাঙাতে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাসায় গিয়েছিলেন মহিউদ্দিন। ২০১২ সালে নগর আওয়ামী লীগে কোন্দল যখন তুঙ্গে তখনও শীর্ষ নেতা ডা. আফছারুল আমিন, নুরুল ইসলাম বিএসসি’র বাসায় গিয়েছিলেন মহিউদ্দিন। তাদের মান ভাঙ্গিয়ে দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় করার চেষ্টা করেছিলেন।

সর্বশেষ নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী হওয়ার পর ঈদের পরদিন তার বাসায়ও যান মহিউদ্দিন। অবশ্য এর আগে বিএসসি যান মহিউদ্দিনের বাসায়। রাজনীতিতে মহিউদ্দিন বিরোধী হিসেবে পরিচিত বিএসসিসহ অনেক নেতা ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে মহিউদ্দিনের বাসায় গেলেও যাননি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির। এর আগে মহিউদ্দিনের ইফতারের দাওয়াতেও নাছির যাননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পান দীর্ঘসময় দলের মূলধারার বাইরে থাকা নাছির, যে কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন। একসময়ে দূরত্ব ঘুচিয়ে দুই নেতা ঐক্যবদ্ধ পথচলা শুরু করেন। এরপর সদ্যসমাপ্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই নেতাই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে মনোনয়ন পান নাছির। এতে দুই নেতার মধ্যে আবারও প্রচ্ছন্ন দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.