সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গার প্রবেশ

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া,সিটিনিউজ : মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। রাতের আঁধারে বিভিন্ন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন। বিজিবির কড়া নজরদারির মাঝেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, উখিয়ার বালুখালী, পালংখালী, উলুবনিয়া ও টেকনাফের হোয়াইক্যং, লম্ববিল, উৎছিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলার পুলের ডেইল, রঙ্গীখালী ও চৌধুরীপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে।

শুক্রবার(২৫ আগস্ট) বিকেলে নাফ নদী পাড়ি দেওয়া প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে বিজিবি ঠেকাতে পারলেও রাতের বেলা তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। শনিবার ভোরের আলো ফোটার পর থেকে ওই এলাকায় তাদের আর দেখা যায়নি। হোয়াইক্যং’র সিএনজি চালক নুর মোহাম্মদ জানান, রাতের আঁধারে সিএনজি, মাহিন্দ্রা ও টমটম যোগে দলে দলে রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছে। তারা নিজেরাই এসব ভাড়া মেরেছেন বলে জানান নুর মোহাম্মদ। এদিকে লেদা শরণার্থী ক্যাম্পের বস্তি কমিটির নেতা আনোয়ার হোসেন জানান, মিয়ানমারের হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে ইতোমধ্যে ৬ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গার প্রবেশ

তারা টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পেগুলোতে অবস্থান করছে বলেও জানান তিনি। তবে কক্সবাজার ৩৪ বিজিরি অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করেন। তিনি জানান, সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি রয়েছে। কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ডুকতে দেওয়া হবে না। উল্লেখ্য,মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭৭ রোহিঙ্গা মুসলিম ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য রয়েছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর রোহিঙ্গা যোদ্ধারা পুলিশ পোস্টে হামলা এবং একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে এ সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর শুক্রবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে গুলি করে হত্যা ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।

মিয়ানমার থেকে মিয়ানমারের ঢেকেবুনিয়া উত্তর পাড়া থেকে পালিয়ে আসা জকরিয়ার স্ত্রী হাফসা বেগম বলেন, গত ক’দিন ধরে সামরিক জান্তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এদেশে আশ্রয় নিয়েছি। ওখানে পরিস্থিতি শান্ত হলে ফেরৎ যাব। একই গ্রামের ৫২ বছরের বৃদ্ধা মৌঃ আবু জাফর বলেন, সেখানে ঘর বাড়ি রেখে এখানে পালিয়ে এসেছি। ওখানে একটি খামার বাড়ি সহ অনেক জমি জমা রয়েছে। ৯০ বছরের বৃদ্ধা সামরুক বলেন, অবাজি এড়ে মিলেটারী অল এনগরি জুলুম গরেদ্দে এতল্লায় প্রাণ বাচাইবল্লাই বলি এড়ে আস্সিদে। ৫০ বছরের ভেলুয়া খাতুন বলেন, আই ছাড়া আর কিয়াই এড়ে নুআইয়ে। এড়ে পুয়ার বাপ ও পুয়াইন্দরে ধরি লগিয়ই মিলেটারী বাহিনী।

একই গ্রামের খুশি আলমের ছেলে রশিদ আহমদ (৬২) বলেন, ঢেকেবুনিয়া উত্তর পাড়া এলাকার ২১০ টি পরিবার চলে এসেছে। ওখানেই পরিস্থিতি শান্ত হলে চলে যাব। ঘুমধুম ও তুমব্রু বিওপি সদস্যরা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.