রোহিঙ্গারা দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে : স্থানীয়রা অসহায়
নিজস্ব প্রতিনিধি,সিটিনিউজ : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। গত এক মাসে অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গারা ।
পুলিশ ও এনজিও কর্মীদের উপর হামলা, রামুতে এক যুবককে খুন, ৪ স্থানীয়কে হামলায় আহত ও ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ডাকাতি কালে স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা আটকসহ নানা রকম ভয়ঙ্কর অপরাধে তারা লিপ্ত হচ্ছে । রোহিঙ্গাদের অপকর্মে স্থানীয়রা একপ্রকার অসহায়।মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নতুন পুরাতনসহ ১০ থেকে ১২ লাখ ।
সংখ্যালঘু হয়ে গেছে উখিয়া–টেকনাফের স্থানীয় মানুষগুলো । আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য–বাসস্থান, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা জোরদারে নিরলস কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। অব্যাহত ত্রাণ বিতরণে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে ত্রাণের পাহাড় পড়ে গেছে। ফলে রোহিঙ্গারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পাওয়া ত্রাণ খোলা বাজারে অল্প দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। এদিকে আশ্রিত রোহিঙ্গারা তাদের হিংস্র রূপগুলো দিন দিন মেলে ধরছে। খুন, ডাকাতি, ইয়াবা ও মানবপাচার, হামলা এবং বনভূমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।
রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড : রোহিঙ্গাদের হামলায় ১৭ সেপ্টম্বর রবিবার উখিয়ার পালংখালি এলাকার মুরগির খামার ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন আহত হয়। গত ১৬ সেপ্টম্বর উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের হামলায় রোহিঙ্গা খুনের ঘটনা ঘটে। যেই সংবাদটি বিদেশি গণমাধ্যমেও স্থান পায়। ৭ অক্টোবর কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা বস্তি লাগোয়া খাল থেকে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৮ অক্টেবর কুতুপালংয়ে ত্রাণের টোকেন বিতরণ করতে গিয়ে মুক্তি নামের এনজিও কর্মী রোহিঙ্গাদের কবল থেকে বাঁচতে গাছে উঠে পড়ে। ১৯ অক্টোবর মহিষ বিক্রিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হোছনের ছেলে ধলাইয়া ও কালাইয়ার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় স্থানীয় আবু সিদ্দিকের। একপর্যায়ে রোহিঙ্গা দুই সহোদর ক্ষুদ্ধ হয়ে আবু ছিদ্দিককে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে। ২১ অক্টোবর আহত সিদ্দিকের চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। ২২ অক্টোবর রোহিঙ্গা নারী দিল বাহার ও সৈয়দ আহমদ ক্যাম্পে অবৈধভাবে মুদির দোকান স্থাপনে বাধা দিলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির আহমদের উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় এসআই কবির আহত হয়। এছাড়াও রোহিঙ্গারা প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথায় ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়ছে। ২৮ অক্টোবর গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বর্তমানে কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারীকে আটক করেছে র্যাব–৭। ৯ হাজার ৮শ ইয়াবাসহ আটক ফাতেমা খাতুন আকিয়াব জেলার মংডু উপজেলার পানিরছড়া গ্রামের মো. রুহুল আমিনের স্ত্রী। এ সময় উদ্ধারকৃত ইয়াবার ট্যাবলেটের আনুমানিক মূল্য ৩৯ লক্ষ ২০ হাজার বলে জানিয়েছেন মেজর মো. রুহুল আমিন। ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে রাজাপালং ইউনিয়নের হাজিম্যা রাস্তার মাথায় গুরা মিয়ার গরু চুরির সময় হাতে নাতে আটক হয় রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইউনুছ (২০)। তার ভাষ্যমতে, ১৭ অক্টোবর হাঙ্গর ঘোনা গ্রামের মৃত লুলু বড়ুয়ার বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গরু চুরির ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা জানান, গত শুক্রবার বালুখালী ক্যাম্পে একটি মসজিদের পাশে আশ্রয় নেয়া ৪ এনজিও কর্মীকে কুপিয়েছে রোহিঙ্গারা। এ ঘটনায় ২টি অস্ত্রসহ দুই জনকে আটক করা হয়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেদের সুযোগ–সুবিধা বিসর্জন দিচ্ছে স্থানীয়রা। এরপরও রোহিঙ্গাদের অপকর্মের শিকার হওয়া বড়ই নির্মম। রোহিঙ্গারা যাতে কোনো অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ ও সাদা পোশাকে অন্যান্য বাহিনীর লোকজন।