চসিকের গৃহকর নিয়ে বর্তমান মেয়র বনাম সাবেক মেয়রগণ

0

জুবায়ের সিদ্দিকী :: নগরবাসীর উপর বর্ধিত অযৌক্তিক গৃহকর ধার্যের ব্যাপারে সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের অনমনীয় ভুমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব ও সংকট নিরসনে দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারী সেবা সংস্থাকে দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর আহবানে অনুষ্ঠিত সভায় মেয়রকে জনস্বার্থে নিজ অবস্থান থেকে সরে আসার জানানো হয়েছে।

সংগঠনের সভপতিমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলী ও নির্বাহী সদস্যদের নিয়ে এ সভা গত ২০ অক্টোবর শুক্রবার মহিউদ্দিন চৌধুরীর চশমাহিলস্থ নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ জনগনের আশা আকাঙ্খার ধারক এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জনকল্যানমুখী। চট্টগ্রাম নগরীতে ক্ষেত্র বিশেষে শতভাগের চেয়েও বেশি করারোপ করে সরকারের বিরুদ্ধে একটি দুরাচারী মহলের জনগনকে ক্ষেপিয়ে তোলার আলামত সুস্পষ্ট হয়েছে।

তাই আইন ও মন্ত্রনালয়ের দোহাই না দিয়ে সিটি মেয়রকে জনগনের মনের ভাষা বুঝে গৃহকর বৃদ্ধি বিষয়ে জনস্বার্থে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসার জন্য আবারও আহবান জানানো হয়। সভায় আরো বলা হয়, অতি বর্ষন ও জোয়ারের ফলে আগ্রাবাদ, হালিশহর, কালুরঘাট ও বাকলিয়াসহ নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলো বছরের অর্থেক সময় প্লাবিত হয়ে থাকে। সভা থেকে এ সমস্ত এলাকায় হোল্ডিং ট্যাক্স জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত মওকুফ করার দাবী জানানো হয়।

এ ছাড়া সভায় অভিযোগ করা হয়, পরিচ্ছন্ন বিভাগের ব্যর্থতার ফলে নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকা আবর্জনার ভাগাড় সৃষ্টি হয়। এতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেঅ সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সাম্প্রতিক অতি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার ফলে নগরীর যে সমস্ত সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, সেগুলো দ্রুত সংস্কার করার জন্য সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএর প্রতি জোর দাবী জানানো হয়। সিডিএর মেগাপ্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়, সরকারের বরাদ্দ দেয়া এই মেগা প্রকল্পগুলোর ডিজাইন, কার্যকারিতা এবং প্রকল্পগুলোর সুফল সম্পর্কে জনগনের কাছে উপস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরী।

এ বিষয়ে জনগনকে অন্ধকারে না রেখে প্রকল্পের ষোলআনা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা উচিত। এ ছাড়া প্রি-পেইড মিটার চালুর পর থেকে জনভোগান্তি বেড়েছে। এর নিরসন হওয়া জুরুরী। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে জনগনের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে ট্রান্সফরমারগুলো মেরামত দ্রুত করার দাবী জানানো হয় সভায়। সভায় সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জনবল নিয়োগ পরীক্ষা সুপরিকল্পিতভাবে ঢাকায় গ্রহন করার কারনে নিয়োগ বানিজ্য বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

ঢাকার বাইরে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া চট্টগ্রাম বন্দরের নীতিমালা পরিপন্থী, যা চট্টগ্রামবাসীর প্রতি অবজ্ঞার সামিল। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ও কর্নফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষায় নিয়মিত ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। অথচ দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ড্রেজিং এর বিকল্প নেই। অথচ দেখা যাচ্ছে যে, এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যমুলকভাবে উদাসীন।

তাই অত্যাধুনিক একাধিক ড্রেজার ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করে কর্ণফুলী নদীতে অবিলম্বে জরুরী ভিত্তিতে ড্রেজিং কার্যক্রম চালাতে হবে। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, আইন সম্পাদক এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, ত্রান সমাজ কল্যান সম্পাদক হাজী মো: হোসেন, ধর্ম সম্পাদক হাজী জহুর আহমদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক দেবাশীষ গুহ বুলবুল, উপ-প্রচার সম্পাদক শহিদুল আলম, উপ-দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী প্রমুখ।

এদিকে সাবেক মেয়র রাজনীতিবিদ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন.’৬০ লক্ষ নগরবাসীকে প্রতিপক্ষ না ভেবে সর্বদলীয় মিটিং ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুর। তিনি আরও বলেন,’আমি মেয়র থাকা অবস্থায় নগরীর গরীব মানুষের ঘরবাড়িকে করের আওতামুক্ত রেখেছিলাম। তিনি বলেন,’ আমার আমলে নগরীর কোন এলাকা জলাবদ্ধতা ছিল না। শহরের প্রতিটি রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী ছিল। নগরীর ৩৬টি ছোট বড় খাল আজ প্রভাবশালীদের দখলে।

ফলে একটু বৃষ্টি ও জোয়ার আসলেই নগরবাসীর ব্যবসা-বানিজ্য, ঘর-বাড়ি মসজিদ, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া এবং জনগণের চলাফেরায় চরম বিঘœ ঘটে। ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা লোকসান গুহনতে হয়। প্রাচ্যের রানী হিসেবে খ্যাত নগরবাসীর এই বেহাল অবস্থা দেখভাল করার কোন অভিভাবক নেই। আজ চট্টগ্রাম শহরের জন্য একজন সৎ, দক্ষ, পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী রাজনীতিবিদের বড়ই প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন,’রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ এই চট্টগ্রাম থেকে রাষ্ট্রকে যোগান দিয়ে আসছে। অথচ চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য কোন বরাদ্দ নেই। এই বৈষম্যমুলক আচরন স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করে নগরবাসীকে রাস্তায় নামিয়ে নগরীর উন্নয়ন সম্ভব নয়।

হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের দাবীতে গণঅধিকার ফোরামের এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সাবেক মেয়র মনজুর আলম মেয়র আ.জ.ম নাছিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন,’ আপনি চট্টগ্রাম মহানগরের অভিভাবক। মেয়র হিসেবে ৬০ লাখ মানুষের দায়িত্ব আপনার উপর।

এ শহরের রক্ষনাবেক্ষন ও উন্নয়নের সিংহভাবগ আপনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে তাতে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,আপনি বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দলের মহানগরের সাধারন সম্পাদক।

আশা করছি আপনার দায়িত্ব পালনকালে সরকারের ভাবমুর্তি আরও উজ্জল হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আয়তনের ভিত্তিতে ট্যাক্স নির্ধারন করে ৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা পর্যন্ত নির্ধারন করা হয়েছে। সেখানে ১২ শতাংশ ট্যাক্সস নেয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আমরা ১৭ শতাংশ ট্যাক্স দিচ্ছি মন্ত্রনালয়ের আদেশে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা মাথায় রেখে ট্যাক্স ধার্য করলে নগরবাসী আপনার উপর খুশী হবেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.