চট্টগ্রামে খালেদার শোডাউনে উজ্জীবিত বিএনপি

0

জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটিনিউজ ::  দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল ঝিমিয়ে থাকা বিএনপি যেন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার সফর ঘিরে ২৮ অক্টোবর বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মিছিলের নগরীতে পরিনত হয়। বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা একদিকে নেত্রীকে স্বাগত জানাতে রাজপথ প্রকম্পিত করেছেন, তেমনি নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ব্যাপক শোডাউনেরও প্রস্তুতি নেয় দলটি। যে কারনে জন¯্রােতে চট্টগ্রাম নগরীর বিস্তীর্ন সড়ক দুপুরের পর থেকে মিছিল স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল।

বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ছাড়াও খালেদা জিয়াকে দেখতে পথে পথে উৎসুখ জনতার ভিড়ও ছিল লক্ষ্যনীয়। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর তৃনমুলের বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠে। এর উপর দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় পর নেত্রীর চট্টগ্রাম সফর নেতাকর্মীদের দারুনভাবে উজ্জীবিত করে তুলেছে। এরই প্রতিফলন ছিল নগরীর রাজপথে। খালেদা জিয়ার আগম ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগরীর অলিগলি থেকে শুরু করে মফস্বলের গ্রামে গ্রামে নেত্রীকে স্বাগত জানানোর ধুম প্রস্তুতি চলছিল এক সপ্তাহ আগে থেকে।

ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে চট্টগ্রামের সড়কগুলো। এ দিন দুপুরের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মিছিল বের হয়। মিছিলগুলোর গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ। কিন্তু সার্কিট হাউজের আশপাশের সব সড়ক বিকেল হওয়ার আগেই লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। স্তব্দ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।এ দিকে রোহিঙ্গ শরনার্থীদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে বেগম খালেদা জিয়ার এ সফর হলেও বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে যেন নির্বাচনি আমেজ বইছে।

ফলে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির নেতারা নিজেদের শক্তি জানান দিতে নিজ নিজ উদ্যোগে ব্যাপক শোডাউন ছিল লক্ষ্যনীয়। পাশাপাশি দলের তৃনমুলের সাধারন সমর্থকরাও খালেদা জিয়াকে দেখতে ছুটে আসেন। নেত্রীর আগমন ঘিরে নগরীর বিস্তীর্ন সড়কে ছাত্রদল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে। নেত্রীর ছবিসংবলিত ব্যনার ফেস্টুন নিয়ে অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও হাজির হন।
ওইদিন সড়ক পথে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বিকেল নাগাদ বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম পৌছার কথা থাকলেও পথে পথে বিলম্বের কারনে পৌছাতে রাত হয়ে যায়। বিএনপি নেতারা জানান, সিটি গেইট এলাকায় থানা পর্যায়ের নেতারা নেত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি নগর বিএনপির পক্ষ থেকে সার্জিট হাউজে স্বাগত জানানোর কর্মসুচী ছিল চোখে পড়ার মত। নেত্রীর আগমনে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব ভুলে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। এর আরও সাপ্তাহ খানেক আগে থেকে গ্রহন করা হয় ব্যাপক প্রস্তুতি।

রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ত্রান বিতরনে সড়কপথে তিন দিনের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আগমনকে ঘিরে বন্দরনগরী সহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রানচাঞ্জল্যের সৃষ্টি হয়ে হয়ছ। দারুন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তৃনমুলের নেতাকর্মীরা। নেত্রীকে স্বাগত জানাতে গ্রহন করা হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। এ অঞ্চলের সাবেক মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ব্যাপক শোডাউনের আয়োজন করেন। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিষ্টুরতম গনহত্যার মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ ও প্রাণসামগ্রী বিতরনে চট্টগ্রাম কক্সবাজার আগমন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। টানা তিনদিনের সফরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দুই রাত্রী যাপনের কথা ছিল।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্যাতিত ও মজলুম রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাঝে ত্রারসামগ্রী বিতরন ও তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর এ মানবিক কর্মসুচী চাড়া এ সফরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে কোন রাজনৈতিক কর্মসুচী নেই। তবে দীর্ঘ ৫ বছর পর দলের চেয়ারপারসনে কাছ থেকে দেখতে পাবেন এ আনন্দে উদ্বেলিত এ অঞ্চলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। মানবিক কর্মসুচীর বাইরে এ অঞ্চলের নেতাদের সাথে একাধিক সৌজন্য বৈঠকের কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। এসব বৈঠকে এ অঞ্চলে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলনের বিষয়টিও আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল একধা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের প্রতিটি নির্বাচনে প্রায় সব কটি নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করেন বিএনপি প্রার্থীরা। ২০০১ সালে সরকার গঠনের পর বিএনপি বিপুল সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্ঠা করেন চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রামের কালুঘাট বেতারকেন্দ্র থেকেই স্বাধীনতার মহানায়ক জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতা ঘোষনাপত্র পাঠ করেন তৎকালীন মেজর জিয়া। চট্টগ্রামের বিএনপির কোন্দল নিরসন করতে এসে আততায়ীর গুলিতে মৃত্যুবরন করেন তিনি। এর পর থেকে বিএনপির ভীত মজবুত হতে থাকে চট্টগ্রামে। সর্বশেষ বিগত ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সফরে আসেন বেগম খালেদা জিয়া।

কক্সবাজারে রামু ও উখিয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার পর সেখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যান তিনি। কক্সবাজারের উখিয়ায় জসভায় ভাষন দেয়ার পর সড়কপথে চট্টগ্রাম এসে সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করেন বেগম জিয়া। এর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে ঘিরে টানা দুই বছর উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে কোন রাজনৈতিক কর্মসুচীতে আসেননি তিনি। বিএনপির আন্দোলনের এক পর্যায়ে মামলা ও পুলিশী ধরপাকড়ের কারনে অনেকটা নিরব নিস্তব্দ হয়ে পড়ে দলটি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,’ বেগম খালেদা জিয়ার সফরকে ঘিরে এ অঞ্চলের নেতাকর্মীরা এখন উজ্জীবিত।

এখানকার সাধারন মানুষও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আগ্রহ নিয়ে বেগম জিয়াকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন। বিএনপির ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয় থেকে আশপাশের সড়কে পা বাড়ালেই লাঠি হাতে ধাওয়া দিত পুলিশ। গত ৭-৮ বছর এমন চিত্রই দেখা যেতো। কিন্তু এবার দেখা গেছে ভীন্নচিত্র। খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে কাজির দেউড়ি থেকে ওয়াসা, সিআরবি, টাইগারপাস, চকবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে মুহুর্মুহু স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। বরং পুলিশকেই দেখা গেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবাধে মিছিল করার সুযোগ দিতে। বাধামুক্ত রাজপথ পেয়ে নগরীতে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

নগরীর প্রবেশদ্বার সিটি গেইট থেকে কর্নেল হাট হয়ে একে খান মোড় ও জিইসি মোড় থেকে ওয়াসা মোড় আলমাস হয়ে কাজীর দেউড়ি পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ঢল নামে। নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফুর্ত অবস্থান দেখে উৎফুল্ল নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন,’সরকার যদি বিএনপিকে বাধা না দেয়, রাজপথে কেমন বিস্ফোরন হতে পারে তার প্রমান দিয়েছে চট্টগ্রামবাসী। বাধামুক্ত রাজপথ পেলে আমাদের প্রতিটি কর্মসুচীতে নেতাকর্মীদের এমন ঢল নামবে। কিন্তু প্রশাসন সবসময় বিএনপিকে চাপে রাখে। কর্মসুচীতে অহেতুক বাধা দেয়।

বিএনপির চেয়ারপারসনের চট্টগ্রাম আগমনে পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছে জানিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,’দলীয় নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ প্রশাসন নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করেছে। পুলিশের এমন ভুমিকা সত্যিই প্রশংসিত’।

সার্কিট হাউজের সম্মুখে বিএনপির তিন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর মো: নাছির উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্ঠা গোলাম আকবর খোন্দকার ও এসএম ফজলুল হক, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারন সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সামশুল আলম ও মীর হেলালের নামে তাদের অনুসারী ও কর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন প্রদর্শন করে। তবে এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামে কোন ব্যানার ফেস্টুন চোখে পড়েনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.