লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত চাষীরা

0

জাহেদুল হক,আনোয়ারা : বঙ্গোপসাগরে উপকূল বেষ্টিত আনোয়ারার দুই ইউনিয়নে লবণ চাষের জন্য মাঠ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। সবেমাত্র ওই জায়গায় চিংড়ি ঘের গুটিয়ে লবণ মাঠ তৈরি করছেন তারা। গত দুই বছরে পরীক্ষামূলক লবণ চাষে সাফল্যকে পুঁজি করে এ বছর চাষীরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন।

শুক্রবার ২৯ ডিসেম্বর সরেজমিনে বারশত ইউনিয়নের পারকি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,প্রায় আড়াই‘শ একর মাঠজুড়ে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠ পরিচর্যায় নিয়োজিত অর্ধশতাধিক চাষী পরিবার। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবদি যেন চাষীদের অন্য কোন কাজ করার সময় নেই। উপজেলার উপকূলীয় দুই ইউনিয়ন রায়পুরের দক্ষিণ গহিরা ও বারশতের পারকি এলাকায় লবণ চাষ হচ্ছে। এখানে আগে তেমন জনপ্রিয় ছিল না লবণ চাষ। কয়েক বছর ধরে কক্সবাজারের মহেশখালী,কুতুবদিয়া,চকরিয়া ও পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাষীরা আনোয়ারা উপকূলে লবণ উৎপাদন শুরু করে। কম খরচে উৎপাদন ভাল হওয়ায় দিন দিন লবণ চাষে আগ্রহ বাড়ছে অনেকের। বছরের পর বছর বাড়ছে লবণ চাষের মাঠ। এসব মাঠে পুরোদমে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া।

জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ গহিরা ও পারকি এলাকায় চলতি মৌসুমে বাঁশখালী,চকরিয়া,পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার অর্ধশতাধিক চাষী প্রায় ২৫০ একর জমি লাগিয়ত নিয়ে লবণ উৎপাদন শুরু করেছেন। অথচ গেল মৌসুমে সেখানে লবণচাষ হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ একর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে আরো চারগুণ। তাদের দেখার দেখায় স্থানীয়রাও লবণচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

চাষীরা জানান, লবণ চাষের জন্য প্রথমে জমিকে ছোট ছোট ভাগ করে নেয়া হয়। এরপর ভেজা মাটিকে রোলার দিয়ে সমান করে বিছিয়ে দেয়া হয় মোটা পলিথিন। জোয়ার আসলেই মাঠের মাঝখানে তৈরি করা গর্তে জমানো হয় সাগরের লবণ পানি। বালতি ভরে বিছানো পলিথিনের উপর রাখা হয় পানি। জলীয় বাষ্প হয়ে উড়ে যায় পানি আর মাঠে জমে যায় লবণের আস্তরণ। সেই লবণ তুলে স্তুপ করে রাখা হয় যেন সরে যায় পানি। এরপরই বস্তায় ভরে লবণ তুলে দেয়া হয় বেপারীর হাতে। চাষীরা আধুনিক পলিথিন ও সনাতন পদ্ধতিতে মাঠে লবণ চাষ করছেন।

চকরিয়ার আরাফাত (৩৫) ও কুতুবদিয়া থেকে আসা চাষী কামাল উদ্দিন (৪২) জানান, প্রতি মৌসুমের জন্য কানিপ্রতি (৪০ শতক) জমি ৩ হাজার টাকায় লাগিয়ত নিই। প্রতি কানিতে চাষাবাদে খরচ পড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় খরচের দ্বিগুণ।

তারা আরো বলেন, ২৫০ একর মাঠে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫০ হাজার মণ। প্রতি মণ লবণের দাম নূন্যতম চারশ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে বাজারমূল্য দাঁড়াবে ৬ কোটি টাকা। এদিকে সাধারণ লবণ চাষীরা বলেন,সরকার যদি আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত এসব লবণ রফতানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণ চাষীরা আরও বেশি উপকৃত হবে। তারা এই লবণ শিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত করার জন্য লবণ উৎপাদনে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ জানান, পারকি এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লবণচাষ। কম খরচে লাভ বেশি তাই স্থানীয়রাও লবণচাষে ঝুঁকছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরো পাঁচ মাস লবণ উৎপাদন হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.