চন্দনাইশে অবাধে পাহাড় কাটছে দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীরা

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ :: সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চন্দনাইশ উপজেলার পাহাড়ি এলাকার লর্ট এলাহাবাদ, লর্ট শ্রীমাই, কা ননগর দোহাজারী লালুটিয়া সহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ের মাটি কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে এক শ্রেণির অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। ভুমিদুস্যদের কালো থাবায় বিলীন হচ্ছে চন্দনাইশের পাহাড়ি টিলাগুলো।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উঁচু-নিচু পাহাড়ের টিলা কেটে সমতল করছে। এ সকল পাহাড়ের মাটি বিভিন্ন ইটভাটা ও ভিটা ভরাটের যোগান দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা।

স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বন বিভাগের আওতাধীন একের পর এক পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে বর্তমানে এসব এলাকায় পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে।

বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময়ে একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করে দেয়া হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ তথা পাহাড়। সে সাথে চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী পেয়ারা বাগান, আনারস, কাঁঠাল ও লেবু বাগান।

এ কারণে চন্দনাইশে নির্মল প্রকৃতির পরিবেশ এখন বিপর্যয়ের মূখে পড়েছে। অবশিষ্ট থাকা পাহাড়গুলোকে জরুরী ভিত্তিতে রক্ষা করা না হলে এ অঞ্চলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

বছরের পর বছর ধরে পাহাড়, নদী, খাল, সবুজ বনঘেঁষা দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে উঠেছে ৩০টির অধিক অবৈধ ইটভাটা। আর এসব ইটভাটা গুলোতে মাটি যোগান দিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড় কাটার মাটি। ফসলি জমির টপসয়েল তথা উর্বর অংশ।

প্রশাসনের নাকের ডগায় সর্বত্রই সমানতালে পাহাড় কাটা চললেও যেন কারো মাথা ব্যথা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

উপজেলার কা ননগর, লর্ট এলাহাবাদ, লর্ট শ্রীমাই, গুইল্যাছড়ি, সৈয়দাবাদ, দোহাজারী, জামিজুরী, দিয়াকুল, রায় জোয়ারা সহ বেশকিছু স্পটে অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে স্ক্যাবেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ট্রাকে বোঝাই করে মাটি সরবরাহ করছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, সামান্য টাকার বিনিময়ে না বুঝে অনেকই এ নগদ অর্থের দিকে ঝুঁকে পড়ে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার এ মহলটি মালিকানাবিহীন পাহাড় থেকে মাটি কেটে বিপুল অংকের টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানে না পাহাড় কাটা আইনগত অপরাধ। এ ব্যাপারে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারও সর্ম্পূন নীরব ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পাহাড় কাটা বন্ধের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণকে পাহাড় কাটার আইনগত বিষয়ে সচেতন করতে হবে, জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

অবাধে পাহাড়ের টিলা কেটে ধ্বংস করছে পরিবেশ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পরিবেশ ধ্বংসের এ চিত্র দেখেও না দেখার বান করে চলেছে। এতে করে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এলাকার আশেপাশের লোকজনের কাছে প্রতি গাড়ী ৪ থেকে ৫শ টাকা দরে বিক্রি করে দিচ্ছে এসব পাহাড়ি টিলার মাটি।

পরিবেশ আদালাতের বিশেষ পিপি এড্ভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তারপরও পাহাড় কাটা যেন থেমে নেই।

পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাছাড়া এ সকল পাহাড়ি এলাকায় নিজস্ব ভুমি হলেও মাটি কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। তাছাড়া সরকারি বনভুমিতে পাহাড় কাটা রোধ করার দায়িত্ব বন বিভাগের। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকবলের অভাবে অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনষ্টিটিউট অব ফরেষ্ট এন্ড এনভাইরেনমেন্টের প্রফেসর কামাল হোসেন বলেন, বেশ কয়েকবার পাহাড় ধ্বসে পড়ে অনেক মানুষ মারা গেছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। অবশিষ্ট পাহাড়কে রক্ষা করা না গেলে যে কোন সময় বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি ধুয়ে পার্শ্ববর্তী নদী, পুকুর, জলাশয়, জলাভুমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখতে না পারায় হঠাৎ করে প্লাবিত হচ্ছে এলাকা। এতে করে শষ্যের ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। এভাবে পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে এগুলো আরো বাড়তে পারে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.