উন্নয়ন শুধু প্রবৃদ্ধিই বৃদ্ধি করে না,পরিবতর্নও সাধন করে-ড.মসিউর রহমান
সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটি কর্তৃক আয়োজিত ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ এর আলোকে ‘উন্নয়ন রোডম্যাপ-চট্টগ্রাম বিভাগ’ শীর্ষক সেমিনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির চেয়ারম্যান ড. মসিউর রহমান’র সভাপতিত্বে আজ সোমবার ১৫ অক্টোবর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য সচিব টিপু মুন্শি এমপি।
বন্দর, ব্লু ইকনোমি, বিগ বি ইনিশিয়েটিভ ও ডেল্টা প্ল্যানকে গুরুত্ব দিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম উদ্দিন এফসিএ। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সহায়তায় এ সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী, চেম্বার সভাপতি মাহবুুবুল আলম, সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, পরিচালক এ. কে. এম. আক্তার হোসেন ও ছৈয়দ ছগীর আহমদ, চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এম. এ. ছালাম, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, এস. এম. আবু তৈয়ব ও ডা. মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএ’র সাবেক পরিচালক শওকত ওসমান, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, রিহ্যাব’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, রাঙ্গামাটি চেম্বারের সভাপতি মোঃ বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া, ফেনী জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান বি.কম, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন ও মোহাম্মদ নাসির, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ’র সাধারণ সম্পাদক শামীমা লুবনা হারুন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সহ- সভাপতি এ. এম. মাহবুব চৌধুরী, জিপিএইচ ইস্পাতের মিডিয়া এডভাইজর ওসমান গণি চৌধুরী এবং বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ব্যবসায়ী তথা চট্টগ্রাম বিভাগের স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন ভাবনা, অনুভূতি, চাহিদা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন-উন্নয়ন শুধু প্রবৃদ্ধিই বৃদ্ধি করে না, উন্নয়ন পরিবতর্নও সাধন করে থাকে। তাই আজ বাংলাদেশের সর্বস্তরে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বলে তিনি মনে করেন। ড. মসিউর রহমান কৃষির উন্নয়নের পাশাপাশি শিল্প গড়ে না উঠলে দেশের কাংখিত সমৃদ্ধি সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ মংলা ও পায়রা বন্দরকে অধিকতর কার্যকর করা, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগাতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাস নিশ্চিতকরণ, কানেক্টিভিটি, শেয়ার বাজার, কাস্টমস্ এর সক্ষমতা ও রাজস্ব কর ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অর্থনীতির সক্ষমতা অর্জনে আমাদের ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে উল্লেখ করে সকলকে এক সাথে কাজ করার আহবান জানান।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’র অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক টিপু মুন্শি এমপি বলেন-চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্দর, পর্যটন এবং মৎস্য খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র থেকে মাত্র ৩০% মৎস্য আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে। শিপব্রেকিং এবং আরএমজি খাতেও এ অঞ্চলে সম্ভাবনা প্রচুর। বর্তমানে চীন থেকে অনেক কার্যাদেশ বাংলাদেশে আসছে। তিনি মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সেল গঠন এবং আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লীড টাইম হ্রাস করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
চট্টগ্রামের উন্নয়নকে সারা দেশের উন্নয়ন উল্লেখ করে সামুদ্রিক অর্থনীতির মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব বলে মনে করেন টিপু মুন্শি এমপি।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম মিরসরাই ও আনোয়ারায় ইকনোমিক জোনের কাজ দ্রুত শেষ করে দেশী-বিদেশী প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপনের সহায়তার আহবান জানান এবং এক্ষেত্রে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করেন। তিনি আগামী ৫০ বছরের চাহিদাপূরণে বে-টার্মিনাল ফার্স্ট ট্রেক প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন, বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ এবং বন্দরে প্রবেশ ও বাহিরে অন্তত ৫টি করে গেইট চালু করার অনুরোধ জানান। এছাড়া আইসিডি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেন, এক্সপ্রেস ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং বুলেট ট্রেন চালু করা, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু রেলসহ নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ও গুণগত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার দাবী জানান।
চেম্বার সভাপতি চট্টগ্রামে ৫টি ব্যাংকের হেডকোয়ার্টার স্থাপন, বছরে একটি কেবিনেট মিটিং আয়োজন, বিএসটিআই’র সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি, বন্দরে প্রয়োজনীয় স্ক্যানার স্থাপন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধি, কোলকাতা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বিমান যোগাযোগ স্থাপন, চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিং চালু করা এবং হালদাকে অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় জাতীয় নদী ঘোষণার আহবান জানান।
চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী বলেন-প্রধানমন্ত্রী বাস্তবমূখী উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তিনি কর্ণফুলী নদীর দু’পাশে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ কালুরঘাট ব্রিজ যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে আশংকা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেডে এলএনজি সংযোগ প্রদানের অনুরোধ জানান। সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সহ-সম্পাদক জিয়াউল আবেদীন, রাজিউর রেজা চৌধুরী খোকন, সাইফুল্লাহ আল-মামুন, মোঃ রাজীব পারভেজ, ফৌজিয়া হক, শেখ সেলিম রেজা, আরশাদ জামাল দীপু, জোবায়ের হাসান রুবন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হাসান, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ কামাল মোস্তফা চৌধুরী, মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) ও মোঃ জহুরুল আলম, ব্যবসায়ী নেতা তাহের সোবহান, জাপানের অনারারী কনস্যুল জেনারেল মোঃ নুরুল ইসলাম, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শিরিন আখতার, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ’র যুগ্ম কমিশনার নাহিদ নওশাদ মুকুল, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি নাসির, এইচআরসি’র সিনিয়র পরিচালক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, বিএসটিআই’র পরিচালক ইঞ্জি.মোঃ সেলিম রেজা, বিটিসিএল’র চীফ জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জি. প্রবাল কুমার শীল, প্রিমিয়ার বিশ্ব বিদ্যালয়ের আর্কিটেক্ট ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সোহেল এম. শাকুরসহ সরকারী-বেসরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।