৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করবে শ্রমিক ফেডারেশন

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর সংস্কারসহ ৮ দফা দাবিতে ২১ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এ সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ দিন পর আরও ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করবে শ্রমিক ফেডারেশন।

সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর সংস্কারসহ ৮ দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকালে শেষ হচ্ছে। আগামী ২১ দিন গণপরিবহণ চলাচল করবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা সরকারকে অবহিত করবো আমাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে দাবি মেনে না নিলে আবারও ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করবো।

এর আগে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে গতকাল রবিবার সকাল ৬টা থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারাদেশে ৪৮ ঘন্টার কর্মবিরতি পালন করছে।

রাজধানীর রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। নগরীতে সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসির বাসও ছিল তুলনামূলকভাবে কম। পরিবহন শ্রমিকরা যেমন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, তেমনি চলছে না পণ্যবাহী কোনো পরিবহনও।

কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বিশেষ করে বাস টার্মিনালগুলোর আশপাশে কর্মবিরতির সমর্থনে পরিবহন শ্রমিকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ চোখে পড়ে। যাত্রী ও চালকের মুখে, কাপড়ে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে রক্ষা পায়নি কলেজ শিক্ষার্থী ও রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও। ছাড় পায়নি সচিবালয়ের গাড়িও। বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাস, ট্রাক পথে আটকে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই মুহূর্তে সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তন করে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব না। অন্যদিকে ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিকরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তা সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বলেন, যেকোনও ধরনের নৈরাজ্য শক্তহাতে দমন করা হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইন না বুঝেই পরিবহন শ্রমিকরা ঘর্মঘট করছেন। তিনিও শ্রমিকদেরকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহবান জানান।

অপরদিকে আইন সংশোধনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের সঙ্গে না বসা পর্যন্ত সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী। যদি দাবি পূরণ করা হয়, তাহলে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কি আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী লোক? ২০১৩-১৪ সালে কি আমরা জীবন দিয়ে বিরোধীদলের অবরোধ ঠেকাই নাই? কারও সঙ্গে আমাদের বিরোধ নাই।’

অন্যদিকে, পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মকবুল আহমেদ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা কর্মবিরতি সমর্থন করি না। কারণ যেদিন আইনটি পাস হয় সেদিন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা (নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা) সংসদে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা সেদিন কোন ধরনের প্রতিবাদ করেননি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জনগনকে কষ্ট দেওয়ার এই কর্মসূচি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি।

শ্রমিকদের আট দফা দাবি সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে, শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না, সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে, ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে, ওয়েস্কেলে (ট্রাক ওজন স্কেল) জরিমানা কমানোসহ শাস্তি বাতিল করতে হবে, সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.