চলমান সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের উদ্দেশ্যে চারটি পরামর্শ : হোসেন জিল্লুর
গোলাম সরওয়ার,সিটি নিউজ : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সিটি নিউজকে বলেন, জাতিকে নাড়া দেওয়া সুবিশাল এক নৈতিক ও সাহসী অর্জনের কৃতিত্ব এর দাবিদার চলমান সড়ক নিরাপত্তা জনিত ছাত্র-ছাত্রী প্রতিবাদ আন্দোলন এর উদ্দেশ্যে এই অর্জন সুসংহত করতে ৪টি(চারটি)পরামর্শ :
১। অনিরাপদ সড়ক বাস্তবতা অব্যহত থাকলে পুনরায় সক্রিয় হও্য়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে চলমান প্রতিবাদ অধ্যায়ে বিরতি দিয়ে স্কুলে ফিরে যাওয়া।
২। আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় তিনটি সুস্পষ্ট দাবি উত্থাপন:
– প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনকে সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইনে রূপান্তর করা।
– আইন চুড়ান্ত অনুমোদনের আগে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব সহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাবলিক মতবিনিময়।
– জবাবদিহিতার উদাহরণ ও প্রশিক্ষণ অব্যহত রাখতে প্রতিমাসে একদিন ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে পুলিশের সহায়তায় ছাত্র-ছাত্রীদের লাইসেন্স-ফিটনেস পরীক্ষার সুশৃঙ্খল কর্মসূচি চলমান রাখা।
৩। যেহেতু ছাত্র-ছাত্রীদের গত কয়েক দিনের কর্মসূচি উশৃঙ্খল ও ভাঙচুরের ঘটনামুখী ছিলনা, তাই বাস মালিকদের নিরাপত্তার অজুহাতে অযৌক্তিক অঘোষিত পরিবহন বিরতি যা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে তার তাৎক্ষণিক অবসান।
৪। সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এর সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কি কি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হবে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এক সপ্তাহের মধ্যে।
এদিকে, গতকাল রোববার ৫ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে রোড সেইফটি অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এ্যালায়েন্সের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-তে বেশ কিছু চিহ্নিত ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে। এ আইনটি করতে গিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে গেছে। এ আইনের শিরোনাম নিয়েই ঘাটতি আছে। এটার শিরোনামটা ঠিক করতে হবে। শিরোনামে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নামটি না থাকলে এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য জনমনে পরিষ্কার হবে না।
তিনি জানান, খসড়া আইনে কিছু টেকনিক্যাল টার্ম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে যাদেরকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ ধারা ৪৪-এ মহাসড়কের ও ধারা ২৬ (৫)-এ রঙচটা, বিবর্ণ, জরাজীর্ণ কিংবা ঝুকিঁপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ইত্যাদি।’ আইনগত ব্যাখ্যার সুবিধার্থে ধারা ২-এ এ টার্মগুলোর সংজ্ঞা প্রদান করা জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়া সরকার ও যাত্রী সাধারণের অংশগ্রহণে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করতে সুপারিশ করেন।
যাত্রী ছাউনি, ওভারপাস, আন্ডারপাস, জেব্রাক্রসিং, বাস স্টপেজ, ফুটপাত, বাস টার্মিনালের স্থান নির্ধারণ, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও যাত্রী প্রতিনিধিত্বের বিধান অর্ন্তভুক্ত করার প্রস্তাব করেন এবং সড়কে চালক ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগার নির্মাণ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো প্রণয়ন করার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা মামলার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত তদন্ত প্রয়োজন। কারণ, এই তদন্ত প্রক্রিয়া অন্যান্য ফৌজদারি মামলার তদন্ত থেকে ভিন্ন। এখানে কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক সহায়ক যন্ত্রপাতি, বিশেষায়িত পদ্ধতি ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ।’ সড়ক পরিবহন আইনের উপর প্রণিতব্য বিধিমালায় দুর্ঘটনা মামলা তদন্ত প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে দ্রুত নগরায়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন খাতের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিত বিকাশের স্বার্থে আধুনিক নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর প্রয়োজন। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনা এক নতুন মহামারি হিসেবে জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে।’
তিনি দ্রুত ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে একটি ক্ষতিপূরণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান এই আইনে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আহতদের সাহায্যকারীগণের আইনগত সুরক্ষা করে একটি পৃথক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন। এছাড়া সকল পরিবহন স্থাপনা নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব করার বিধান রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ।