আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিঃ ফখরুল

0

সিটি নিউজঃ বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি হচ্ছে জনগণের দল। বিএনপির কর্মী সভাও এখন জনসভায় পরিণত হচ্ছে। বিএনপির কর্মী বলতে সুনির্দিষ্ট কিছু নেই। সমস্ত জনগণই হচ্ছে বিএনপির কর্মী। আওয়ামীলীগ বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা পারেনি। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মত জেগে উঠেছে।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি স্থানীয় সরকারসহ সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

তিনি আজ ১১ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। নগরীর নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয় মাঠে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মীর্জা ফখরুল বলেন, এই বীর প্রসবীনি চট্টগ্রাম থেকেই শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবার অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছেন। এই চট্টগ্রামে কিছু বিপদগামী সেনা কর্মকর্তা তাকে হত্যা করেছে। চট্টগ্রাম একটি ঐতিহাসিক জায়গা। এই চট্টগ্রামের মানুষ সকল আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে থেকেছেন। তিনি চট্টগ্রামবাসীকে তারেক রহমানের সালাম ও শুভেচ্ছা জানান।

তিনি বলেন, আমরা একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি। এত কঠিন সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে আর আসেনি। যারা এক সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিল তারাই এখন গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। তারা সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। তিনি এখন গুরুত্বর অসুস্থ, তিনি সেই নেত্রী যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। আর এ সরকার তাকে কারাগারে পাঠিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।এ সরকারের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে আছে। পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর সাথে এই সরকারের কোন পার্থক্য নেই।

তিনি আরো বলেন, এই আওয়ামী লীগ কিন্তু কেয়ারটেকার সরকারের দাবি নিয়ে এসেছিল। তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল, হরতাল করেছিল। জনগণের দাবি আমরা মেনে নিয়েছিলাম, কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু তারা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের গদি রক্ষার জন্য কেয়ারটেকার সরকারের বিধান তুলে দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে স্বৈরাচারকে সহযোগিতা করে সংবিধানে এমন সব আইন সংযোজন করে। এসবের বিরুদ্ধে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, যারা বিএনপি করেন, অঙ্গসংগঠন করেন, আপনারা কখনোই হতাশ হবেন না। আপনাদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, খুন করছে, গুম করছে, তারপরও আপনারা কিন্তু মাথা নোয়াননি। হার স্বীকার করেননি। সেজন্য বলছি, হতাশা কখনো আপনাদের আসল জায়গায় পৌঁছে দেননি। বিএনপির দিকে মানুষ আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। বিএনপি আন্দোলন শুরু করবে, সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের নেত্রীকে মুক্ত করবে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, আমাদের নেতাকমীদের হত্যা করে, মামলা দিয়ে জেলে পুরে, গুম করে এই দেশের দেশপ্রেমিক মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবেন না। আজ সরকারের অবস্থা কি হয়েছে ? তারা একটা নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। সরকার নিজের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য যখন যে যা-ই হুকুম দিচ্ছে, সেটাই মেনে নিচ্ছে। আমাদের সীমান্তে ভারত প্রতিদিন মানুষ হত্যা করে, সরকারের প্রতিবাদ করার সাহস হয় না। আমরা নদীতে পানি পায় না, সরকার ভারতের কাছ থেকে পানি আনতে পারে না। প্রতিবছর ২৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে আর এই সরকার ভ্যাটের জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন করছে।

তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বলেছিলাম, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নিবাচন কমিশন গঠন করুন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় রাষ্ট্রপতি আমাদের কথা শোনেননি। তিনি এমন সব লোকজন দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, যাদের কোনো যোগ্যতাই নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথা শুনলে মনে হয় উনার নির্বাচন কমিশন পরিচালনার কোনো যোগ্যতা নেই। তিনি এমন ইভিএম চালু করেছেন, সিইসি’র নিজের আঙ্গুলের ছাপই মেলে না। এরা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে তামাশায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক হাইব্রিড নেতা, মন্ত্রী-এমপি আছে। এই চট্টগ্রামেও একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আছেন, যিনি অনেক বড় বড় কথা বলেন, খুব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও কথা বলেন। আরে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কি আপনার জন্ম হয়েছিল ?

তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে বন্দুকের জোরে। তারা সবসময় বলে বিএনপি নাই, বিএনপির কোনো শক্তি নাই। আরে বিএনপির যদি শক্তি না-ই থাকে, তাহলে বিএনপির বিরুদ্ধে এত কথা বলেন কেন ? এমন একটা দিন নেই, এমন একটা ক্ষণ নাই, এমন একটা বক্তৃতা নাই, বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেন না। তাহলে বিএনপি হচ্ছে সরকারের জন্য একটা বড় সমস্যা। আসলে সমস্যা হচ্ছে বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নির্বাচনে বিশ্বাস করে, জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে। বিএনপি অতীতে যেমন লড়াই-সংগ্রাম করেছে গণতন্ত্রের জন্য, এবারও লড়াই করে বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বেআইনিভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই রায় চূড়ান্ত হয়নি, তিনি এখনও জামিন পাবার যোগ্য। এদেশে অনেক মন্ত্রী-এমপির সাজা হয়েছিল, কিন্তু মন্ত্রীত্ব টিকে ছিল। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীরেরও সাজা হয়েছিল। এমনকি ইয়াবা সম্রাট বদিরও সাজা হয়েছিল। তারা জামিন পেয়েছেন অথচ বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের একটাই ভয়, যদি খালেদা জিয়া মুক্তি পান, তাহলে এই অন্যায়ভাবে হত্যা-নির্যাতন করে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে, লুটপাট করছে সেটা করতে পারবে না। কিন্তু এদেশের জনগণ কখনোই এই অন্যায় মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। অনেকে আমাদের প্রশ্ন করেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে যাচ্ছেন কেন ? আমরা একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমের ক্ষমতার পরিবতনে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথে ক্ষমতার পরিবর্তনের পথ নেই, হওয়া উচিৎ না। সেই কারণেই আমরা সব নির্বাচনে অংশ নিই। আমরা অতীতে দু’য়েকটা নির্বাচন বাদ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এটা সঠিক হয়নি। এরপর থেকে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমাদের দলকে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে চাই। আমরা মনে করি, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
নির্বাচন সম্পকে আমরা আগেই বলেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আমরা আগেই নিয়েছি। ওটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আমরা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলে মনে করি।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, এমন একটি সময়ে আমরা সমাবেশ করছি যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই। ভোটাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে বার বার। গণতন্ত্রের নেত্রী দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছে এই অবৈধ সরকার। মঈন ফখরুদ্দিন সরকারের প্রতিহিংসার শিকার তারেক রহমানকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে দেশের বাইরে রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এম. এ. নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টর মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহসভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সম্পাদক মন্ডলী, সদস্য, থানা, ওয়ার্ড বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.