মেজর সিনহা হত্যাঃ র্যাবের হাতে গ্রেফতার ৩ জনই পুলিশের করা মামলার সাক্ষী
কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এরা সবাই পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী।
র্যাবের হাতে আটক হবার পর পুলিশ রেকর্ড করলো এদের স্বজনদের দায়ের করা অপহরণ মামলা।
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে টেকনাফের বাহারছড়া থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন, মো. আয়াছ, মো. নুরুল আমিন ও মো. নাজিমুদ্দিন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদেরকে কক্সবাজার আদালতে হাজির করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে সিনহার পরিবারের করা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ, এসআই লিয়াকতসহ ৩ জনকে ৭ দিন করে রিমান্ডে এবং চার পুলিশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয় আদালত। গত ৩১ জুলাই টেকনাফে ভ্রমণচিত্রের কাজ শেষে ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
গত ৩১ জুলাই চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনার পর পৃথক দুইটি মামলাও করে টেকনাফ থানা পুলিশ।
ওই মামলায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার মো. নুরুল আমিন নামে একজনকে স্বাক্ষী করে পুলিশ। কিন্তু মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে তাকে ওই দুই মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। তা ফলাও করে গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।
কিন্তু টেকনাফ থানা পুলিশ নুরুল আমিনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার মায়ের দায়ের করা একটি মামলা নথিভূক্ত করেছে। অথচ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে তারা এখন কারাভ্যন্তরে। তাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন।
একই দিন বিকালে জানা গেল, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা খুনের ঘটনায় র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে মো. নুরুল আমিনকে অপহরণের অভিযোগে টেকনাফ থানায় মামলা করেছেন তার মা খালেদা বেগম। মামলার আসামি সবাই অজ্ঞাতনামা। তবে র্যাবের অভিযানে গ্রেফতারের বিষয়টি বিকেলে আদালতে হাজির করার আগে পর্যন্ত পুলিশ জানতেন না বলে দাবি করেছেন টেকনাফ থানার নবাগত ওসি মো. আবুল ফয়সল।
তিনি জানিয়েছেন, সোমবার (১০ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে মো. নুরুল আমিনসহ ৩ জনকে বাড়ি থেকে অজ্ঞাত একদল লোক জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। যারা সিনহার মৃত্যুর পর পুলিশের করা মামলার সাক্ষী। স্বজনরা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়। পরে মঙ্গলবার সকাল ৭ টা ৩৫ মিনিটে থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক আইনে এবং রামু থানায় মাদক আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে।
এ মামলায় নিহত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গে থাকা শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা রানী দেব নাথকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইন্সপেক্টর লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৬ আগস্ট বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৭ আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।