চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারঃ সূফী সাধক হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.)

0

চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারঃ সূফী সাধক হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.)
: ড. মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ : আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুরো জগতবাসীর নবী করে প্রেরণ করেছেন। তাঁর তিরোধানের পর সাহাবীগণ, তাবেঈগণ ও আউলিয়া কেরাম ইসলামের মর্মবাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মুসলিম শাসকগণ অনেক রাজ্য জয় করলেও বিজিত দেশে স্থায়ীভাবে ইসলামী তাহযীব তামাদ্দুন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত দুরূহ ছিল। এ কঠিন কাজটি সম্পাদন করেছেন আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন সূফী সাধকগণ। তাঁরা রাসূলুল্লাহর সত্যিকার প্রতিনিধি হয়ে নিজের ঘর বাড়ী ছেড়ে দুর্গম পথ পাড়ী দিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে প্রতিকূল পরিবেশে রুহানী শক্তির মাধ্যমে ইসলামের মর্ম বাণী প্রচার করেছেন। এ পথ ধরে খ্রিষ্টীয় ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে সূফী সাধকের মাধ্যমে এ দেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে অনেকের ন্যায় চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগমন করেন হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.)।

খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজী বাংলাদেশে মুসলমান রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় হতে আরম্ভ করে বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে মুসলমানদের আগমন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বখতিয়ার খলজীর পূর্বেও বাংলাদেশের সাথে মুসলমানদের যোগাযোগ ছিল।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, তুর্কী আক্রমনের পূর্বে চট্টগ্রামে আরব মুসলমানরা বসতি স্থাপন করেন। এরূপ অভিমতের স্বপক্ষে প্রমাণস্বরূপ কেউ কেউ ‘মকতুল হোসাইন’ প্রণেতা সপ্তদশ শতকের কবি মোহাম্মদ খানের বংশ তালিকা উল্লেখ করেন। কবি মোহাম্মদ খান আরব দেশ হতে আগত কোন এক মাহি আছোয়ারকে তার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ বলে দাবী করন। মোহাম্মদ খানের সম্পূর্ণ বংশ তালিকা এখানে উদ্ধৃত করা নিস্প্রয়োজন, তবে তার বংশ পরিচয়ের সারমর্ম নিম্নরূপঃ

কবির পূর্বপুরুষ মাহি আছোয়ার আরব দেশে জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত আবূ বকর সিদ্দিকের বংশে তাঁর জন্ম । হাজী খলিল পীর নামক একব্যক্তি পৃথিবী ভ্রমণ করতে ইচ্ছা করেন এবং তিনি মাহি আছোয়ারকে সাথে নেন। মাছের আকৃতি বিশিষ্ট এ জাহাজে আরোহন করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছেন। চট্টগ্রাম পৌঁছলে কদল খান গাজী ও বদর আলম তাঁদের সাদর অভ্যর্থনা জানান। সেখানে মাহি আছোয়ার কোন এক ব্রাহ্মন কন্যার পানি গ্রহণ করেন। কিছু দিন পরে মাহি আছোয়ার দেশে ফিরে যান; কিন্তু ব্রাহ্মন কন্যার ঔরসজাত তাঁর সন্তান-সন্ততি এ দেশেই থেকে যায়।

উপরিউক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয় যে, তুর্কী আক্রমণের আগে বাংলাদেশের সাথে আরবের মুসলমান বণিকদের যোগাযোগ ছিল; এ যোগাযোগ ছিল বাণিজ্যের খাতিরেই। হয়ত কোন কোন বণিক বাণিজ্যের কারণে এদেশে এসে দেশীয় নারীর পাণি গ্রহণ করতেন এবং স্থায়ীভাবে এখানে বসবাস করে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করতেন। কেউ কেউ নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের মাধ্যমে নিজ নিজ সময়ে ইসলামের দীক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন।
বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবন বাতুতার বিবরণেও দেখা যায় যে, সে সময়ে বাংলাদেশে মুসলমান সূফীদের বেশ আনাগোনা হয়। ইবন বাতুতা (১৩৪৬-৪৭খৃ.) এর দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে আগমন করেন এবং সেখান থেকে সিলেট গিয়ে শাহ জালালের সাথে সাক্ষাত করেন। তিনি বলেন যে, সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ সূফীদের অত্যন্ত ভক্তি করতেন এবং তিনি এক আদেশ জারী করেন যেন সূফীদের থেকে পথকর বা নৌকা ভাড়া আদায় করা না হয়।
৮ম/৯ম শতাব্দীর দিকে চট্টগ্রামে মুসলমানদের আগমন শুরু হলেও চর্তুদশ শতাব্দীতে চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচার জোরদার হয়। পঞ্চদশ শতকের প্রথম দিকে চট্টগ্রামে যে মুসলমান আধিপত্য পুরোপুরি বজায় ছিল তার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়।

চট্টগ্রামের প্রবীণতম আউলিয়া হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.) যিনি পাঁচশতাধিতক বছর আগে সুদূর ইয়েমেন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি উচ্চমার্গের অলী ছিলেন এ বিষয়ে অনেক প্রমাণ থাকলেও তিনি সংসার বিমুখ হওয়ায় তাঁর প্রকৃত ইতিহাস নির্ণয় করা কঠিন । তাই তাঁর সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রে পার্থিব উপাদানের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক উৎসকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। অর্থাৎ- এই দরবারটি সম্পর্কে পরবর্তী কালের অলি ও সাধক পুরুষগণ বিশেষত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী এবং তাঁর আওলাদগণের মন্তব্যগুলো বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। হযরত শাহজাহান শাহ (রহ.)-কে ইতিহাসের আলোকে জানতে হলে চট্টগ্রাম ও আরকানের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ইতিহাসও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।

ইতিহাসের নিরিখে হযরত শাহজাহান শাহ (রাহ.)-কে মূল্যায়ন করতে হলে সমকালীন চট্টগ্রাম ও তৎসন্নিহিত আরাকান রাজ্যের রাজনৈতিক উত্থান-পতন সম্পর্কেও আমাদের কিছু মৌলিক বিষয় জানা দরকার। বংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ ১৩৪০ খ্রিঃ চট্টগ্রাম বিজয়ের পর আরব, ইয়েমেন, পারস্য, আফগানিস্তান ও তুরষ্ক থেকে অনেক মুসলিম সূফী সাধক চট্টগ্রাম এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।
চতুর্দ্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম দখল করেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। তবে তা স্থায়ী হয়নি। পরবর্তীকালে এই অঞ্চল আবার ত্রিপুরা ও আরাকান রাজার দখলে চলে যায়। ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ’র চট্টগ্রাম অভিযানের উপর ভিত্তি করে চতুর্দ্দশ ও পঞ্চদশ শতকে চট্টগ্রামে বহু সূফী সাধকের আগমন ঘটে। তাঁদের মধ্যে একজন উচ্চমার্গের অলি ও সূফী সাধক হযরত শাহজাহান শাহ ছিলেন। সূফীগণের আগমনে চট্টগ্রামে ইসলামধর্মের গোড়াপত্তন ঘটে এবং সূফীদের ধ্যান-সাধানায়, অলৌকিক ক্রিয়া-কলাপে অনেক লোক ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ইসলাম গ্রহণ করে। সূফীরা আধ্যাত্মিক সাধক। আধ্যাত্মিক সাধনায় উচ্চমার্গে উন্নীত সাধক ইচ্ছে করলে অলৌকিকভাবে মানব জগতের উপকার সাধন করতে পারেন। আমার যা অনুভূতি তাতে মনে হয়, হযরত শাহজাহান শাহ (রাহ.) সেই রকম আধ্যাত্মিক সাধনার মধ্য দিয়ে উন্নত স্তরে পৌঁছেছিলেন। যার জন্য তিনি ‘জিন্দা অলি’ নামে প্ররিচিত।

অবশ্য ফখরুদ্দীনের চট্টগ্রাম বিজয়ের (১৩৪০ খ্রিঃ) পরবর্তী তিন শতাব্দী যাবত চট্টগ্রামের উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে, ত্রিপুরার হিন্দু রাজা, আরাকানের বৌদ্ধরাজা এবং তার পাশাপাশি বিদেশী পর্তুগজি ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে বাংলার মুসলিম সুলতানদের লড়াই অব্যাহত থাকে। ১৪০৬ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানের রাজা ছিলেন সেং সোয়ামন। চট্টগ্রাম তখন তাঁরই অধিকারে। তিনি বর্মী রাজার হাতে পরাজিত হয়ে বাংলায় আশ্রয় নেন। বাংলায় তখন রাজা গণেশের পুত্র যদু ইসলাম গ্রহণ করে জালালউদ্দীন নাম ধারণ করে শাসন করছিলেন। প্রায় ২৪ বছর রাজ্যহারা আরাকান রাজা চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। পরে সুলতান জালালউদ্দীনের সহায়তায় রাজ্যহারা আরাকান রাজা আবার তাঁর সিংহাসন ফিরে পান। এই সাহায্যের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আরাকান রাজার পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন মুসলিম সূফীসাধকেরা চট্টগ্রামে ধর্ম প্রচারের সুযোগ পান।

১৫১৫ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরার হিন্দু রাজা ধনমানিক্য চট্টগ্রাম অধিকার করেন। বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হোসাইন শাহ (রাহ.) ত্রিপুরার রাজার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। তদীয় পুত্র যুবরাজ নসরৎ শাহের এই বিজয়ের পর বহু মুসলিম সূফীসাধক ও ধর্মপ্রচারক চট্টগ্রামে আসেন এবং চট্টগ্রামের অধিবাসীদের বিপুল সংখ্যক ইসলাম গ্রহণ করে।

নসরৎ শাহের চট্টগ্রাম বিজয়ের (১৫১৭ ইং) পর আরাকান রাজা চট্টগ্রাম অধিকারের জন্য দ্বিমুখী অভিযান শুরু করেন। ১৫১৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রধান সেনাপতি পদাতিক বাহিনী নিয়ে চট্টগ্রামের দিকে অগ্রসর হন এবং যুবরাজ ইরেমং নৌ-বাহিনী নিয়ে জলপথে চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ ও হাতিয়া পর্যন্ত অধিকার করে নেন। কালী প্রসন্নসেন বিদ্যাসাগর লিখিত রাজমালা গ্রন্থের বিবরণে জানা যায় যে, ত্রিপুরা রাজা দেবমাণিক্য মগদেরকে পরাজিত করে ১৫২২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম অধিকার করেন এই সময়েই আরাকান রাজা মিনবিন রামু অধিকার করেন। উল্লেখ্য, মিনবিনের সময়ই চট্টগ্রামে মগী সন প্রবর্তিত হয় ।

খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকে আরাকান রাজা কর্তৃক চট্টগ্রাম দখলের এ সময়কালের সাথে হযরত শাহজাহান শাহ’র (রহ.) চট্টগ্রাম আগমনের সময়কালটি অনেকটাই সমসাময়িক বলে মনে হয়। কারণ ধলই দরবার শরীফের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- এই মাযার শরীফ সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে ধলই দরবার শরীফ কমপ্লেক্সের সেক্রেটারী মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল আলম চৌধরী উল্লেখ করেছেন-আমাদের পূর্বপুরুষগণ মাজার শরীফ প্রশস্থ ও মেরামত করার সময় একটি শিলালিপি পেয়েছিলেন। তাঁরা তা থেকে গবেষণা করে তাঁর ওফাত দিবস নির্ধারণ করেছেন। এই সূত্র ধরে ২০শে মাঘ, ১৪২ বাংলা, মোতাবেক ২রা ফেব্রুয়ারী, ২০০৬ ইং তারিখে তার ৫০০ তম ওফাত বার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।

এ অনুসারে দেখা যায়- হযরত শাহজাহান শাহ (রাহ.) এর ওফাত দিবস হচ্ছে- ২রা ফেব্রুয়ারী ১৫০৬ ইং, মোতাবেক ২০শে মাঘ, ৯১২ বাংলা সন। মাযার শরীফটি সংস্কারের সময় সেখানে যে শিলাশিপিটি পাওয়া যায় তাতে মগী ভাষায় সন-তারিখ লিখা ছিল। আরো উল্লেখ্য, উক্ত সংস্কারের কাজের সময় মাযার সন্নিহিত অপর একটি কবরের কিছু মাটি খুঁড়া হয়ে যায়। এতে কবরের অভ্যন্তরে একজন সদ্য সমাহিত লাশের মত ধবধবে সাদা কাফন ও একটা ‘আসা’ বা লাঠি দেখা যায়। এগুলো থেকে সুগন্ধি বের হতে থাকে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। এই কবরটিও এই মাহান অলি হযরত শাহ জাহান শাহর কোন এক বুজুর্গ খাদেমের বলে মনে করা হয়। এই সময় মাযারে যে ইট পাওয়া যায়, তা ১৪২০/২৫ ঈসায়ী সনের তৈরী বলে মাযার কর্তৃপক্ষ সূত্রে প্রকাশ। ইতিহাসের পাতা বেয়ে চট্টগ্রামের সমসামায়িক ধর্মীয় অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়- তখন এখানে মগরাজ্য ছিল। স্থানীয় অধিবাসীগণ ছিল মগ। তাদেরকে তিনি (হযরত শাহজাহান শাহ) ইসলামের সুশীতল পরশ ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে বিনা যুদ্ধে আল্লাহর মনোনিত পবিত্র ধর্ম ইসলামে দীক্ষিত করেন। হযরত শাহজাহান শাহ (রাহ.) এবং তাঁর সময়কাল সম্পর্কে ধলই দরবার শরীফের সেক্রেটারীর এ বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করে প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন-আমার কাছে ইতিহাসের নিরিখে এটি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। কারণ ‘রাজমালা’ গ্রন্থের বিবরণ এবং পাকিস্তান স্টাডিজ কর্তৃক ১৯৭০ সনে প্রকাশিত চট্টগ্রামের ইতিকথা পুস্তকের বক্তব্যের রেফারেন্সগুলোর সাথে ধলই দরবার শরীফের এই দাবীগুলো যথেষ্ট সামাঞ্জস্যপূর্ণ।

মোগলের খিল গড়ে উঠার দেড় শতাব্দী আগে আরাকানের মংরাজা সেং সোয়ামন যখন বার্মা রাজার আক্রমণ থেকে বাচাঁর জন্য বাংলাদেশের মুসলিম সুলতানের আশ্রয়ে ২৪ বছর যাবত চট্টগ্রামে ছিলেন, তখন কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ তিনি আরাকানে বসবাসরত আরবদেশ থেকে আসা ‘তামবুকিয়া’ জনগোষ্ঠীর যে মুসলিম সূফী সাধকদেরকে ইসলাম প্রচারে পৃষ্টপোষকতা দিয়েছিলেন, হযরত শাহজান শাহ (রাহ.) ঐ জনগোষ্ঠীর একজন সূফী সাধক হিসাবে ডিঙ্গি নৌকা যোগে আরাকান থেকে সাতকানিয়ার ‘ইলা মৌজা’ এবং পরে সেখান থেকে কাটিরহাটের ফকিরের তাকিয়াতে গিয়ে আস্তানা গড়েন বলে মনে করার অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। তাঁর মাযারের শিলালিপিতে মগী ভাষায় সন-তারিখ খোদাই থাকার বিষয়টি এখানে বিশেষভাবে বিবেচনার দাবি রাখে।

আরব থেকে আসা প্রাচীনতম এক উচ্চমার্গের মুসলিম আধ্যাত্মিক নেতা ও সূফীসাধকের পুণ্যস্মৃতিকে কেন্দ্র করেই ধলই গ্রাম আজ অসাধারণ শাহী দরবারের মর্যাদায় অভিষিক্ত। যতদূর জানা যায়, ১৯৩৯ সালে সংস্কারের পূর্ব পর্যন্ত এই মাযারটি ছিল বাদশাহী আমলের ইট ও চুন-সুরকীর দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। মাযারের উপরিভাগ ছিল উন্মুক্ত ছাদবিহীন। জমি-জিরাতের রেকর্ড লিপি বা খতিয়ান, সিডা জরিপ, সি.এস. জরিপ, আর.এস. জরিপ, পি.এ. জরিপ এবং সবশেষে বি.এস. জরিপ থেকে জানা যায়- হযরত শাহজাহান শাহ (রাহ.) এর বাস্তুভিটা সংলগ্ন হাদী লষ্কর চৌধুরীর বংশধরেরা এই মাযারের সার্বিক তত্ত্বাবাধানে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে রেখেছেন সুদীর্ঘ কাল ধরে।

এদেশে ইসলাম প্রচার সূফী সাধক অলিউল্লাহদের মাধ্যমে হয়েছে। যেসব অলিউল্লাহ এ নেতৃত্বের পুরোধা ছিলেন তাঁদের মধ্যে হযরত শাহ জাহান শাহ (রহ.) অন্যতম। উল্লেখ্য, কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বাকার ঘটনা সম্পর্কে এবং বিভিন্ন নবী-রাসূল সম্পর্কে ঐশী বর্ণনায় আমরা সন্দেহাতীতভাবে কুরআন মাজীদের মাধ্যমে ওয়াকিবহাল হতে পারি। তবে দু লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূলের মধ্যে মাত্র ২৫জন মতান্তরে ২৭জনের বিবরণ পবিত্র কুরআন মাজীদে রয়েছে। বাকী নবী-রাসূল এর ঘটনা আমরা বিভিন্ন উপখ্যান, ঐতিহাসিক বর্ণনার মাধ্যমে আয়ত্ব করি। জনশ্রুতিই ইতিহাসের আসল উপাদান। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ঐতিহাসিকরা তাঁদের বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক মতের অনুসন্ধান করেন। হযরত শাহ জাহান শাহ (রহ.)এর ক্ষেত্রে একইভাবে ইতিহাসের পাতায় সঠিক তথ্য স্থিতি লাভ করবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ জাফর উল্লাহ, আরবী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.