২ সন্তান খুন : ‘ঘাতক’ মায়ের সঙ্গে দেখা করেনি পরিবারের কেউ

ঢাকা: রাজধানীর বনশ্রীতে দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে দেখতে থানায় আসেননি পরিবারের কেউই। এদিকে নিজের দু’সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করে র‌্যাবকে যে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদেও একই কথা বলছেন জেসমিন। পুলিশ হেফাজতে তিনি স্বাভাবিক আচরণই করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শনিবার রাতে রামপুরা থানায় গিয়ে দেখা যায়, জেসমিনকে নারীদের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। দু’জন নারী পুলিশ পাহারা দিচ্ছেন। সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পরিবারের কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে বা খাবার নিয়ে আসেনি বলে জানান কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সীমা আক্তার। জেসমিন সকালে পুলিশের দেয়া রুটি, ডিম ও ভাজি দিয়ে নাস্তা করেছেন। চল্লিশোর্ধ্ব জেসমিন স্বাভাবিক রয়েছেন।

এদিকে আমানুল্লাহ ও জেসমিনের স্বজনদের অনেকেরই মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের এক স্বজন জানান, আমানুল্লাহ রামপুরাতেই তার এক আত্মীয়ের বাসায় রয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই তিনি পর্যুদস্ত অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিকসহ বিভিন্ন জনের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তিনি অতিষ্ঠ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার পরিদর্শক মুস্তাফিজুর রহমান  জানান, শুক্রবার রাতে থানায় আনার পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় জেসমিন স্বাভাবিক আচরণ করেছেন। নিজ সন্তান হত্যায় অভিযুক্ত মা জেসমিন জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তেমন কিছু বলেননি। র‌্যাবের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তেমনটাই বলছেন, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই নিজের স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার করেছেন। তবে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তিনি আরো জানান, ‘এ ঘটনায় অন্য কোন বিষয় জড়িত কি না তাও দেখা হবে। সব বিষয় মাথায় রেখেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের প্রয়োজনে নিহত শিশুদের বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য স্বজনদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনার সময় নিহত শিশুদের দাদি বাসায় ছিলেন। ওই দিন তিনি জেসমিন ও আমানুল্লাহর সঙ্গে জামালপুরে চলে যান। নিহত তিনি সেখানেই রয়েছেন। ওই দিন বাসায় কি হয়েছিল সে বিষয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

২৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে রামপুরার বনশ্রীর এলাকার ‘বি’ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়িতে এক সঙ্গে নারকীয় হত্যাকান্ডের শিকার হয় ১৪ বছর বয়সী বোন নুসরাত আমান অরণী ও ৬ বছর বয়সী তার ছোট ভাই আলভী আমান। পরিবার খাবারে বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর কথা বললেও ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়ার পর তিন দিন আগের এ ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর র‌্যাব-পুলিশ ঘটনার তদন্তে মাঠে নামে।

শিশুদের দাফনের পর বৃহস্পতিবার মা জেসমনি, বাবা আমানুল্লাহ ও এক খালাকে ঢাকায় নিয়ে আসে র‌্যাব। ঘটনার তিন দিন পর দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেন নিহত শিশুদের গর্ভধারিণী মা মাহফুজা মালেক জেসমিন। সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তার ও অস্থিরতা থেকে এ হত্যাকান্ড ঘটানোর কথা বলছেন মা জেসমিন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে র‌্যাবের কাছে মায়ের স্বীকারোক্তি দেয়ার পর বাবা আমানুল্লাহ একমাত্র জেসমিনকে আসামি করে শুক্রবার রাত পৌনে ১০টায় মামলা করেন। পরে তাকে আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের অনুমতি পায় পুলিশ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাহফুজা মালেক জেসমিন ও তার স্বামী আমানুল্লাহ সম্পর্কে চাচাত ভাই-বোন। পারিবারিক সম্মতিতে ১৪ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। রাজধানীর উত্তরায় আমানুল্লাহর পোশাক শিল্পের ব্যবসা রয়েছে। স্নাতকোত্তর পাশ করা মাহফুজা কিছু দিন একটি কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.