আদালত যেভাবে নির্দেশ দেবেন আমি সেভাবেই চলব-খাদ্যমন্ত্রী

ঢাকা : খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালত যেভাবে নির্দেশ দেবেন আমি সেভাবেই চলব।’

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগ নিয়ে মন্তব্য করায় সুপ্রিম কোর্টের তলবের পর মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ওই কথা বলেন।

এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ তাকে তলব করেন। আগামী ১৪ মার্চ তিনিসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে তাদের বক্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিতে বলা হয়। আর পরদিন ১৫ মার্চ তাদেরকে সশরীরে সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

মন্ত্রী বলেন, ‘একজন মন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও বিচারপ্রার্থী হিসেবে ওটা আমার নিজস্ব বক্তব্য। আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

তবে দু’একদিনের মধ্যেই তিনি মালয়েশিয়া যাবেন বলে জানান। বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারি আদেশ হয়ে গেছে। কাজ শেষে আমার ফিরতে ১৬ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।’

তবে মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করবেন খাদ্যমন্ত্রী। আদালতে কী ব্যাখ্যা দেবেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতেই সবকিছুর উত্তর দেব।’

মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ রায়ে আমি খুব খুশি। মীর কাসেম আলী শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। এমনকী বিচার বাধাগ্রস্ত করতে টমি ক্যাটের মতো লবিস্টও নিয়োগ করেছিল।’

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মীর কাসেমের মামলার বিচারকাজে তদন্ত সংস্থার ‘গাফিলতি’র কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং তদন্ত সংস্থা যে গাফিলতি করেছে এজন্য তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।’

প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের পর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের গাফিলতি থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।’

এ প্রেক্ষিতে শনিবার (৫ মার্চ) প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের আপিলের পুনঃশুনানি দাবি করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই মামলার রায় কী হবে তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্যে আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা  অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি, এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। জামায়াত-শিবিরের আন্তর্জাতিক লবিস্টরা যে সুরে কথা বলছে, একই সুরে কথা বলছেন প্রধান বিচারপতি। তাদের অভিযোগগুলোর সত্যতা দিয়েছেন তিনি।

‘শুধু তা-ই নয় এই বক্তব্যের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের গত ৫ বছরের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও হত্যা করা হয়েছে। আমি মনে করি প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন করে শুনানি হওয়া উচিত। উনাকে (এস কে সিনহা) বাদ দিয়ে মীর কাসেমের শুনানি পুনরায় শুরু করুন।’

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, এই রায় নিয়ে শঙ্কা এখন সংকটে পরিণত হয়েছে। তবে এ সংকট আমাদের সৃষ্ট নয়। সংকট সৃষ্টি করেছেন প্রধান বিচারপতি। এটাই আমাদের দুঃখ। রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি যদি এমন কথা বলেন, তাহলে জাতি কোথায় যাবে?’

সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আদালত অঙ্গন, রাজনীতিক ও সুশীল সমাজে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আইনজীবীসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা বলেন, চূড়ান্ত রায়ের আগে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, তাদের বক্তব্য অসাংবিধানিক।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.