মেহেরপুরে পানব্যবসায়ীর গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে পুলিশগিরি দেখালেন এসআই!

মেহেরপুর : মোটরসাইকেল দ্রুত চালিয়ে টপকে আগে বেরিয়ে যাওয়ার অপরাধে কদর আলী নামে এক পানব্যবসায়ীর গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে পুলিশগিরি দেখালেন মেহেরপুর গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান।

শুধু পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করার হুমকি নয়, জনসম্মুখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে গোটা পুলিশবাহিনীর গায়ে লাগিয়ে দিলেন চুনকালি! এসআই জিল্লুর রহমানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখে হতবাক অনেকেই। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বামন্দী বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বামন্দী-নিশিপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী কদর আলী জানান, তিনি গতকাল মেহেরপুর শহর থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। চোখতোলা মাঠ এলাকা দ্রুত পার হওয়ার জন্য তিনি চেংগাড়া মোড় থেকেই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। চোখতোলা মাঠের মধ্যে এসআই জিল্লুর মোটরসাইকেল টপকিয়ে তিনি দ্রুত গতিতে বামন্দী পৌঁছান। বামন্দী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছাতেই পেছন থেকে সেখানে উপস্থিত হন এসআই জিল্লুর। তবে তার শরীরে পুলিশের কোনো পোশাক ছিল না। কদর আলী জানতেন না তিনি পুলিশ। এসআই জিল্লুর জনসম্মুখে কোমর থেকে পিস্তল বের করে কদর আলীর গলায় ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

হঠাৎ এ ধরনের আচরণে কদর আলী বুঝতে পারছিলেন না পিস্তল ঠেকানো ব্যক্তি সন্ত্রাসী নাকি পুলিশ! এ সময় জিল্লুর তার পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় কদর আলীর মা-বাবা ও গোষ্ঠী তুলে গালিগালাজ করতে থাকেন। এ ঘটনা দেখে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসেন। পুলিশের মোটরসাইকেল টপকিয়ে আগে কেন বের হয়েছে তার জবাব চাইলেন এসআই জিল্লুর। উৎসুক মানুষের অনেকেই অন্যায় এ কাজটি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়লেও পুলিশ তাই প্রতিবাদ করতে পারছিলেন না। তবে কিছু মানুষ তাকে শান্ত করার অনুরোধ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত পরবর্তীতে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে কদর আলীকে ছেড়ে দেয় এসআই জিল্লুর।

এ ঘটনায় বামন্দী এলাকায় তোলপাড়া শুরু হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা জিল্লুর রহমানকে অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

কদর আলী আরো জানান, জিল্লুর রহমানের শরীরে পুলিশের পোশাক ছিল না। পোশাক থাকলে তো নিরাপত্তার জন্য তার পেছনে পেছনেই মাঠ পাড়ি দিতেন। কিন্তু সামান্য একটু ব্যাপারে পিস্তল বের করে হত্যা ও দেখে নেয়ার হুমকিতে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন কদর আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা।

বেশ কিছুদিন আগে থেকে গাংনী থানায় জোগদান করেন এই এসআই জিল্লুর রহমান। থানায় সেবা নিতে মানুষ ও বিভিন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে ঘুষ বাণিজ্য ও অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হলেও অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না।

এদিকে, গতকালের বিষয়টি সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমার উজ-জামান জানতে পারেন  ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত এসআই জিল্লুরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.