প্রথমে প্রেমের ফাঁদ, তারপর বিক্রি

চট্টগ্রাম: ভালোবেসেছিল দুইজন দুইজনকে। এ ভালবাসা থেকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন বুনেন নিজেদের মধ্যে। ঘর বাঁধার এ স্বপ্ন দেখিয়ে একসময় গ্রামের এ কিশোরীকে নিয়ে আসা হয় শহরে। তারপর শুরু হয় কাহিনী। এবার ‘প্রেমিকের’ আচরণ পাল্টে গেলো।

প্রেমিক ওই কিশোরীর অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও বাধ্য করা হতো অসামাজিক কার্যকলাপে। অনেক সময় কিশোরী বাধা দিলে, চালাত অমানুষিক নির্যাতন। একপ্রকার বাধ্য হয়ে এভাবে গ্রাম থেকে প্রেমিকের ডাকে ছুটে আসা কিশোরীরা শহরে দালালদের কাছে বিক্রি হয়ে যায় ‘পতিতালয়ে।’

নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বুধবার দুপুরে তিন কিশোরী মুন্নী আক্তার (১৬), সামিনা বেগম (১৮) ও নাসিমা আক্তারকে (১৮) উদ্ধার করার পর এমনই তথ্য দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই তিন জনের দুই কিশোরী। এমনকি ওই তিন কিশোরীকে তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত আটকে রেখে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

কিশোরী দুই জনের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলনে, ‘প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমাকে নিয়ে আসে শহরে বিয়ে করবে বলে। কিন্তু শহরে এসে তার আচরণ পাল্টে যায়। আমাকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করায়। রাজি না হলে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরে আমাকে ইউসুফের (দালাল) কাছে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।’

এদিকে পুলিশ বলছে, নগরীতে এ ধরনের কমপক্ষে ২০-২৫টি চক্র রয়েছে যারা নারী বেচা-কেনা এবং দেহব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ধরনের ব্যবসায়ীরা কেউ বিভিন্ন ফ্ল্যাটে ভাড়া বাসা নিয়ে আবার কেউ অলিখিত পতিতালয়ে এ দেহ ব্যবসা পরিচালনা করছে।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন  বলেন, ‘বুধবার উদ্ধার হওয়া তিন কিশোরীরা তারা প্রতারকের খপ্পরে পড়ে দালালদের কাছে বিক্রি হয়েছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। আর এর সত্যতাও আমরা গ্রেপ্তার হওয়া তিন দালালের কাছ থেকে পেয়েছি। তাই তাদের নামে অবৈধ দেহ ব্যবসা ও মানবপাচার আইনে দু’টি মামলা হয়েছে।’

অবৈধ এ দেহ ব্যবসার সাথে নগরীতে ২০-২৫টি চক্র আছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার এ পরিদর্শক।

উল্লেখ্য,বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে হিলভিউ আবসিকের ৯ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে অবৈধ দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার দায়ে নাছির উদ্দিন প্রকাশ হাবিব (৪৫), আলী হোসেন (২৮) ও কুলসুম আক্তারকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ওই ফ্ল্যাট থেকে তিন কিশোরীকেও উদ্ধার করে পুলিশ।

ওইসময় পাঁচলাইশ থানার এসআই আবুল কাশেম  বলেছিলেন, ‘তিন কিশোরীকে ফ্ল্যাটে আটকে রেখে অসামাজিক ব্যবসা করতো বলে অভিযোগ পেয়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

বাড়ির মালিক ইঞ্জিনিয়ার তাজুল ইসলামের বরাত দিয়ে এসআই আবুল কাশেম জানান, গ্রেপ্তার তিনজন এই মাসেই তার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে ওই ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকজন পুরুষের আসা যাওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে বাড়ির দারোয়ান তাজুল ইসলামকে জানায়।

পরে দুপুরের দিকে তিন কিশোরীর একজন কৌশলে পালিয়ে এসে তাকে বিষয়টি জানালে, তিনি পুলিশকে খবর দেন। এর আগে এ চক্রটি নগরীর খুলশী এলাকার একটি ভবনে এ ব্যবসা পরিচালনা করতো বলে জানান এস আই আবুল কাশেম।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.