নৌকার মাঝি হতে মরিয়া সকলেই

কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা, বাঁশখালী :  আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নেতাদের মন জয় থেকে শুরু করে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছে সর্বস্তরের জনগণকে। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় সুনির্দিষ্ট একজন মনোনয়ন পেলে অন্যরা সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে না কিনা তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানান কানাগোষা। তবে বেশ কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়নে বর্তমানে ৭টি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান, ৫টিতে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান, ২টিতে জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান বর্তমান দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার আসার এবং বাঁশখালীর সাংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বাঁশখালীর প্রতিটি ইউনিয়ন বিপুল পরিমাণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছে। এতে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের এইসব কাছে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়ায় আগামীতে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারাও সাধারণ জনগণের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। বাঁশখালীর ১৫ ইউনিয়নের জলদী ইউনিয়নকে বিগত ২০০০ সালে পৌরসভা ঘোষনা করা হয়। বাকী ১৪টি ইউনিয়নে এখনো পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ তপশীল অনুসারে বাঁশখালী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

পুঁইছড়ি ইউনিয়ন : বাঁশখালী বেশ কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তির অবস্থান পুঁইছড়িতে। এখানে বারবার চৌধুরীরাই চেয়ারম্যান হতে থাকে। বর্তমানে মঈন উদ্দিন চৌধুরী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামীতেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। এছাড়াও যারা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন, সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান উল গণি চৌধুরী লেদু মিয়া, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা জাকের হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা কফিল উদ্দীন চৌধুরী ও আরিফুর রহমান সুজন।

ছনুয়া ইউনিয়ন : বাঁশখালীর সর্বদক্ষিণে অবস্থিত এই ইউনিয়নটি প্রায় সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লবণ ও চিংড়ি উৎপাদন হওয়ায় এখানকার জনগণ অনেক বেশী সাবলম্বী। বর্তমানে যারা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে তাদের মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জিল্লুল করিম শরীফি, মুজিবুর রহমান, হারুনুর রশীদ চৌধুরী, আমিরুল হক ইমরুল কায়েস প্রমুখ।

শেখেরখীল ইউনিয়ন : বাঁশখালীর এই ইউনিয়নটি বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ জামায়াতের আধিপত্য রয়েছে। বিগত দিনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এখানকার চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানেও যিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি জামায়াত সমর্থিত। তারপরেও এখানে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মোঃ ইয়াছিন, জহির উদ্দীন চৌধুরী বাবর ও আবু হোসেন চৌধুরী ভুট্টু মনোনয়ন পেতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

চাম্বল ইউনিয়ন : বাঁশখালীর চাম্বলে বিগত দিনের পুলিশ মারার ঘটনা নিয়ে সারা দেশে আলোচিত। এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থিত ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর, মুজিবুল হক চৌধুরী, অজিত রায় তালুকদার, আবুল কাশেম, ফজলুল কাদের তালুকদার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

শীলকূপ ইউনিয়ন : শীলকূপ ইউনিয়নে বর্তমান আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান দায়িত্বে রয়েছেন। তাছাড়া তিনি উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মোজাম্মেল হক সিকদার, আগামীতেও তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। তারপরেও এখানে জাফর আহমদ, বিদর্শন বড়–য়া সহ আরো বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে।

গন্ডামারা ইউনিয়ন : গন্ডামারা ইউনিয়নটি বর্তমান সময়ের জন্য একটি আলোচিত ইউনিয়ন। এখানে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ায় এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা তদ্বীর চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও যারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তাদের মধ্যে শামশুল আলম ছিদ্দিকী, হারুনুর রশীদ তালুকদার, নুরুল মোস্তফা সংগ্রাম, এম.এ মালেক মানিক, সিহাব উদ্দিন সিকদার প্রমুখ।

সরল ইউনিয়ন : সরল ইউনিয়নটি হচ্ছে বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নিজস্ব এলাকা। আগামীতে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে অনেক দিন যাবৎ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী। তারপরেও আওয়ামীলীগ থেকে নুর মোহাম্মদ আজাদ ও সার্জেন্ট আনছার উল্লাহ সহ আরো বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে।

বৈলছড়ি ইউনিয়ন : বৈলছড়ি ইউনিয়নে বর্তমানে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব ইব্রাহিম বিন খলিল, আগামীতে এই ইউনিয়নের আওয়ামলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন রয়েছে এবং মাঠে কাজও চালিয়ে যাচ্ছে। তারা হলেন, এস. এম মাহবুবুল ইসলাম টুকু মিয়া, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, রানা কুমার দেব, মোঃ মাকছুদ, রাশেদ আলী, জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

কালীপুর ইউনিয়ন : কালীপুর ইউনিয়নের বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আমিনুর রহমান চৌধুরী। আগামী এই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে বেশ কয়েকজন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ ফারুখ আহমদ, কাজীম মোস্তফা চৌধুরী কাঞ্চন, এডভোকেট শাহাদত আলম, মোঃ সোলাইমান, অরুপ সেন প্রমুখ।

কাথারিয়া ইউনিয়ন : ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন চৌধুরী আওয়ামীলীগ সমর্থিত। আগামীতেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তারপরেও এই ইউনিয়ন থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইবনে আমিন ও রেজাউল করিম দানু আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বাহারছড়া ইউনিয়ন : বাহারছড়া ইউনিয়ন সাগর উপকূলে হলেও এই এলাকার জনগণ সারা বছরই নানা ধরনের বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে থাকে। এই ইউনিয়ন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিতে কাজ করে যাচ্ছে এমপি’র সচিব ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, আওয়ামীলীগ নেতা মোস্তাক আলী চৌধুরী টিপু, এম. বখতেয়ার উদ্দীন চৌধুরী করিম, রেজাউল করিম চৌধুরী ইউনুছ প্রমুখ।

খানখানাবাদ ইউনিয়ন : খানখানাবাদ ইউনিয়নটি বঙ্গোপসাগরের ভাঙনের কবলে পড়ে বিগত দিনে বেশ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু আওয়ামীলীগ সমর্থিত। আগামীতেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান চৌধুরী, জাহেদ আকবর জেবু, জসিম উদ্দিন হায়দার এনামুল হক চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন।

সাধনপুর ইউনিয়ন : সাধনপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ চৌধুরী আওয়ামীলীগ সমর্থিত। আগামীতেও তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাছাড়াও ইউনিয়নের মনোনয়ন পেতে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা, আওয়ামীলীগ নেতা ছাদুর রশীদ, সালাউদ্দিন কামাল, মুনমুন দত্ত প্রমুখ।

পুকুরিয়া ইউনিয়ন : শঙ্খ নদীর ভাঙনের ফলে পুকুরিয়া ইউনিয়নটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন আওয়ামলীগ সমর্থিত। তিনি আগামীতেও মনোনয়ন পেতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও এই ইউনিয়ন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী ও আওয়ামীলীগ নেতা সেলিম উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের কার্যক্রম জোরালো ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। তবে যতদিন পর্যন্ত মনোনয়ন নিশ্চিত না হবে কে মনোনয়ন পাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল হয়ে পড়বে। তারপরেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.