বাঁশখালীতে পুলিশ জনতা গোলাগুলি, ৫ জন নিহতের গুজব

বাঁশখালী প্রতিনিধি : বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস. আলম কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে পশ্চিম গন্ডামারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডাকা সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করতে গিয়ে অবরুদ্ধ হলেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা/নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সামশুজ্জামানসহ পুলিশদল। পরবর্তীতে পুলিশ নিজেদের গন্তব্যে ফিরে আসতে চাইলে রাস্তায় বেরিকেট দেওয়া তুলতে গেলে পুলিশের উপর দুই থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে জনতা। এতে শুরু হয়ে যায় পুলিশ জনতার মধ্যে গোলাগুলি। তখন বিকাল ৩ টা। এরপর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ প্রায় সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত চলার পর পুলিশ গন্ডামারা শীলকূপের মধ্যবর্তী জলকদর খালের উপর নির্মিত গন্ডামারা ব্রীজে এসে অবস্থান গ্রহণ করে। অপরদিকে জনতা বড়ঘোনার দুইপাশে অবস্থান নেয়।

ঘটনার সূত্রপাত, বিগত কয়দিন আগে এস. আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের গাড়ি বহরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাঁশখালী থানায় দায়েরকৃত মামলার ভিত্তিতে পুলিশ রবিবার গভীর রাতে গন্ডামারায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে আটক করে। এই আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই গন্ডামারা এলাকার বেশ কিছু নারী পুরুষ থানার সামনে এসে অবস্থান করে। অপরদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিম গন্ডামারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এস. আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে সমাবেশ আহবান করে একটি পক্ষ। এ খবর মাইক নিয়ে প্রচার করার মাইকসহ ৩ জনকে আটক করে থানা পুলিশ। পরবর্তীতে বাঁশখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামানসহ পশ্চিম গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ না করার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এই ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ পরবর্তীতে ফিরে আসার পথে দেখে রাস্তার উপর বিভিন্ন ধরনের পিলার ও ইট দিয়ে বেরিকেট দেওয়া হয়। এই ইট এবং পিলার তুলে পুলিশ ফিরে আসার পথে দুই পাশ থেকে পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশও নিজেকের রক্ষা করতে গুলি ছুঁড়ে।

মুহুর্তের মধ্যে সর্বত্র রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে শতাধিক রাউন্ড এবং প্রকল্পের বিরোধী লোকজনের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এতে বাঁশখালী থানার ওসিসহ ১০-১২ জন পুলিশ আনসার এবং অপরদিকে প্রায় ২০-৩০ জন জনতা আহত হয়। আহতদের মধ্যে মোঃ জহির (৩৪), আবদুল খালেক (২৭), মোঃ ছগির (৩৪) বাঁশখালী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদেরকে আশংকাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অপরদিকে বাঁশখালী থানার ওসিসহ ১০-১৫ জন পুলিশ আহত হলেও তার মধ্যে মোঃ ওয়াসিম (২২), হেলাল হোছেন (৪০), কনক চন্দ্র সিংহ (২৪), খোরশেদ আলম (৫০), নুরুল কবির (২২), আনোয়ার (৪০), আবদুল মোনাফ (২০), জিয়াদ (২৪) বাঁশখালী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে। এদিকে এ ঘটনায় ৫ জন নিহতের গুজব ছড়ানো হলেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) স্থানীয় সূত্রে তিনজনের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন মর্তুজ (৫৫), আনোয়ার ইসলাম (৫০), মোঃ জাকের (৫৪)। অপরদিকে নুরুল ইসলামসহ এক মহিলা নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেও এখনো পর্যন্ত তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ সামসুজ্জামান ঘটনাস্থলে এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা এলাকার শান্তিশৃংখলা রক্ষা করার জন্য যাতে করে কোন ধরনের আইনশৃংখলা অবনতি না হওয়ার জন্য তাদের সমাবেশ আহবান করা স্থানে এসে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ প্রশাসনসহ ফিরে আসার পথে অতর্কিত ভাবে আমাদের উপর হামলায় চালায় এবং রাস্তায় বেরিকেট সৃষ্টি করে। পুলিশ নিজেদের রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার মজুমদার ঘটনাস্থলে এই প্রতিনিধিকে বলেন, এখানকার জনগণ অতর্কিত ভাবে এই ভাবে আমাদের উপর হামলা এবং গুলি চালাবে তা কখনও কল্পনা করতে পারি নাই। এলাকার আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাধ্য হয়ে এবং জনস্বার্থে এখানে আসতে হয়েছে। এ সময় সাথে থাকা এএসপি (সাতকানিয়া সার্কেল) একেএম এমরান ভুঁইয়াও সাথে ছিলেন।

রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও মামলা রেকর্ড করা হয়নি বলে থানা সূত্রে জানা যায়। এ ব্যাপারে এস. আলম পাওয়ার প্ল্যান্টের সমন্বয়কারী মোঃ নাছির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কতিপয় লোক নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধি করার জন্য পাওয়ার প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এমনকি আমরা যে জায়গা খরিদ করেছি তার টাকা দেওয়া হয়নি বলে নানা ভাবে প্রচারণা চালাচেছ। আমাদের প্রকল্পের জন্য নেওয়া জমি গুলোর কোন টাকা বকেয়া নেই। এমনকি গন্ডামারা সহ আশেপাশের সকল মাদ্রাসা, মসজিদ থেকে শুরু সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এস. আলম পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আজকে মিথ্যা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ জনগণকে প্রশাসনের মুখোমুখি করছে। আমরা সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.